আর ক’টা দিন। তারপরই দীপাবলি। একই সঙ্গে বাঙালির কালীপুজো। ধনতেরস থেকে শুরু করে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পর্যন্ত চলে দীপাবলি। এক কথায় বলতে গেলে দীপাবলি আলোর উত্সব। হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও শিখ ও জৈন ধর্মাবলম্বীরাও পালন করে থাকেন। ৪ নভেম্বর দিওয়ালি। দীপাবলির ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পুরাণ গল্প। রয়েছে রাম, সীতা ও লক্ষ্মণের অযোধ্যায় ফেরার কাহিনি। এছাড়াও রয়েছে মহাভারত ও মহাবীরের গল্প।
রামায়ণে দীপাবলি-
রামায়ণ মতে দশেরায় রাবণ বধ করে দীপাবলিতেই অযোধ্যায় ফেরেন রাম, সীতা ও লক্ষ্মণ। তাঁদের স্বাগত জানাতেই অযোধ্যা নগরী সাজানো হয় প্রদীপ জ্বালিয়ে।
মহাভারতে দীপাবলি-
মহাভারত ইতিহাস অনুযায়ী, ভূদেবী ও বরাহর পুত্র নরকাসুর খুব শক্তিশালী স্বর্গ ও মর্ত্য দখল করে প্রবল অত্যাচার শুরু করেন। শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করে তাঁর প্রাসাদে বন্দিনী ১৬ হাজার নারীকে উদ্ধার করেন। তখন এদের সবাইকেই বিয়ে করেন কৃষ্ণ। মৃত্যুর আগে নরকাসুর কৃষ্ণের কাছ থেকে বর চেয়ে নেন। যে তাঁর মৃত্যুর দিনটি যেন ধূমধাম করে পালিত হয়। এই দীপাবলিতেই নাকি নরকাসুরকে বধ করেছিলেন কৃষ্ণ।
জৈনধর্মে দীপাবলি-
জৈনধর্ম অনুযায়ী দীপাবলিতেই নির্বাণ লাভ করেছিলেন মহাবীর।
আবার এদিন সন্ধে বেলা পূজিত হন লক্ষ্মী। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর পর কেন এদিনও লক্ষ্মী পুজো অনুষ্ঠিত হয়? আবার এই সময় আলোর ছটাই বা কেন? মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষ শেষ হয় এবং সূচনা হয় দেবীপক্ষের। মহালয়ার দিনে পিতৃপুরুষদের তর্পণ করার প্রথা প্রচলিত আছে। পিতৃপক্ষের সময় বিদেহী আত্মারা জল গ্রহণের জন্য মর্ত্যে আসেন। তার পর থেকে দীপাবলি পর্যন্ত তাঁরা মর্ত্যেই বিচরণ করেন। দীপাবলির সময় পিতৃলোকে ফিরে যান তাঁরা। কিন্তু যেদিন তাঁরা ফিরে যান সেই দিনটি আসলে অমাবস্যা। এই অন্ধকারে পিতৃপুরুষদের যাতে ফিরে যেতে সমস্যা না-হয়, তাই তাঁদের উদ্দেশে অন্ধকার পথ আলোকিত করে রাখা হয়। তাই ঘরে ঘরে জ্বালানো হয় প্রদীপ।
দীপান্বিতা অমাবস্যার সময় কেন কালীপুজো করা হয়, তারও ইতিহাস রয়েছে।
ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপের স্মার্ত পণ্ডিত ও নব্যস্মৃতির স্রষ্টা রঘুনন্দন দীপান্বিতা অমাবস্যায় লক্ষ্মীপুজোর বিধান দেন। তবে কালীপুজোর কোনও উল্লেখ করেননি তিনি। এর পর অষ্টাদশ শতকে প্রকাশিত কালী সপর্যাস বিধিতে প্রথম বার দীপান্বিতা অমাবস্যায় কালীপুজোর উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু সপ্তদশ শতকে বাংলায় কালীপুজোর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। নবদ্বীপের প্রসিদ্ধ তান্ত্রিক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকেই বাংলায় কালীমূর্তি ও কালীপূজার প্রবর্তক বলে মনে করা হয়।