Do not concentrate while perform Namaz ? Here are 9 ways to keep concentration

নামাজে মন বসে না? জেনে নিন মনোযোগ ঠিক রাখার এই উপায়গুলি

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

কোনও কাজে মনোযোগ নষ্ট না হলেও নামাজে দাঁড়ালেই নামাজি ব্যক্তির মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এটি শয়তানের কাজ। নামাজের সময় হলে যেমন অন্য কাজের স্পৃহা বেড়ে যায়, তেমনি নামাজে বার বার মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এ থেকে বাঁচতে কিছু অনুশীলন বা আমল করা যেতে পারে।

 একাগ্রতা 

নামাজে একাগ্রতার বিকল্প নেই। তাই অজুর শুরুতেই স্থির মনোভাব ও নিয়ত পোষণ করতে হবে। মহাবিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার দরবারর হাজিরা দেওয়ার জন্যই অজু করছেন। শুধু নামাজের মনে করতে হবে,মহান আল্লাহ সবাইকে দেখছেন।

হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)

এ অনুভূতিতে নামাজ পড়ার ফজিলত বর্ণনা করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন ,

‘যে সুন্দরভাবে অজু করে, এরপর মন ও শরীর একত্র করে একাগ্রতার সঙ্গে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে (যে নামাজে প্ররোচনা স্থান পায় না); তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় (তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়)।’ (নাসাঈ, বুখারি)

যথাযথভাবে অজু করা

মনোযোগ ঠিক রাখার বিষয়টি অজু থেকে শুরু হয়। অজু হলো নামাজের সুন্দর প্রস্তুতির প্রথম উৎস। আর নামাজের জন্য অজু করা ফরজ ইবাদত। অজুতে বিশেষ করণীয় আছে ।

 অজু করে নামাজ পড়া

প্রচণ্ড শীত ও গ্রীষ্মের সময় ঠাণ্ডা ও গরমকে উপক্ষো করেই মুমিন মুসলমান নামাজের জন্য অজু করে থাকে। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু ব্যতিত নামাজ পড়বে, তার নামাজ কবুল হবেনা।’

> অজুর শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা

বিশেষ করে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা জরুরি। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যদি অজুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করা না হয় সে অজু পরিপূর্ণ নয়! তাই অজু শুরু করার আগে অবশ্যই ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে অজু শুরু করা।

> অঙ্গগুলো ভালভাবে ধোয়া

অজুকে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা জরুরি। অজুতে যেন শরীরের কোনো অঙ্গ বাদ না পড়ে বা শুকনো না থাকে সেদিকে দৃষ্টি রাখা। হাদিসে এসেছে-

হজরত ওমর বিন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘একবার এক ব্যক্তি নামাজের জন্য অজু করে এল। কিন্তু নখের সমপরিমাণ অজুর যায়গা তাতে বাদ পড়ে যায়। আল্লাহর রাসুল সেটি দেখলেন এবং লোকটিকে বললেন, ‘আবার ভাল করে অজু করো তখন লোকটি আবারও অজু করে এসে নামাজ আদায় করে।

বিশেষ করে মুখমন্ডল, হাতের কনুই ও পায়ের গোড়ালি ধোয়ার সময় সঠিকভাবে পানি ব্যবহার করা জরুরি। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু অজু করার সময় মুখমণ্ডল খুব ভালোভাবে ধুয়ে নিতেন। তারপর আগে ডান ও পরে বাম বাহু ধুয়েছেন। উভয় হাত বাহুর দিকে একটু বাড়িয়ে ধুয়েছেন। মাথা মাসেহ করেছেন। আগে ডান পা ও পরে বাম পা ধুয়েছেন। পায়ের নলিসহ উভয় পা ধুয়েছেন। আর শেষে তিনি বলেছেন, ‘আমি এভাবেই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অজু করতে দেখেছি।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের পরিপূর্ণ অজুর কারণে কেয়ামতের দিন তোমাদের হাত-পা এবং চেহারাকে দীপ্তিমান দেখাবে। তোমাদের মধ্যে যে সামর্থ্যবান, সে যেন তার হাত-পা এবং চেহারার উজ্জল্য বাড়িয়ে নেয়।’

প্রত্যেক নামাজে অজু করা

এক অজুতে একাধিক ওয়াক্ত নামাজ পড়া যায়। কিন্তু উত্তম হলো প্রতি ওয়াক্তে নতুনভাবে অজু করা। নামাজের প্রতি মনোযোগী হতে অজু এক বিশেষ আমল। হাদিসে এসেছে-

হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অজু সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের জন্য আলাদা অজু করতেন আর আমরা একই অজু দিয়ে অনেক নামাজ আদায় করতাম।।’

অজু শেষে দোয়া পড়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি পরিপূর্ণভাবে অজু করার পর নিচের দোয়াটি পড়ে-

উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহুওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুল্লাহ

অর্থ : ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতিত আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। তাঁর জন্য (এ দোয়াটি যে পাঠ করবে তাঁর জন্য) জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে এবং তাঁর ইচ্ছেমত যে কোনো দরজা দিয়েই সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’

 মেসওয়াক ব্যবহার করা

অজুর ও নামাজের সময় বেশি বেশি মেসওয়াক ব্যবহারে যত্নবান হওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি না আমার উম্মতের জন্য এটি কষ্টকর মনে করতাম, তবে প্রতি নামাজের সময় তাদেরকে মেসওয়াক করার জন্য নির্দেশ দিতাম।’

 নামাজে বিশুদ্ধ তেলাওয়াত করা

নামাজে সুরা ফাতেহা ও কেরাত বিশুদ্ধ উচ্ছারণে পাঠ করা। বিশুদ্ধ তেলাওয়াত অন্তরকে নামাজের প্রতি মনোযোগী করে তোলে। তাই সুরা ফাতেহা ও তাসবিহগুলোর বিশুদ্ধভাবে পড়া করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তিলাওয়াত করো।’ (সুরা : মুযযাম্মিল : আয়াত ৪)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিটি সুরা তারতিলের সঙ্গে তেলাওয়াত করতেন। (মুসলিম, তিরমিজি)

 অর্থ বুঝে তেলাওয়াত করা

তেলাওয়াত ও তাসবিহগুলোর অর্থ না বুঝলে নামাজে মনোযোগী হওয়া খুবই কষ্টকর। নামাজে যা কিছু পাঠ করা হয়, তা বিশুদ্ধ উচ্চারণের পাশাপাশি সুরা ফাতেহাসহ কেরাত ও তাসবিহগুলোর অর্থ বুঝে নামাজ পড়ার চেষ্টাই মানুষকে নামাজে মনোযোগী করে তোলে।

আন্তরিকতার সঙ্গে নামাজ পড়া

আন্তরিকতার সঙ্গে নামাজ পড়া। নামাজে মহান আল্লাহর প্রতি ভুক্তি-শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা না থাকলে তাতে মনোযোগী হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। স্বয়ং আল্লাহ এভাবে নামাজে আন্তরিক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন –

তোমরা আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দাঁড়াও।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৩৮)

> হজরত আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিকৃষ্টতম চোর হলো সেই ব্যক্তি, যে নামাজে চুরি করে।’ জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! নামাজে কীভাবে চুরি করা হয়? তিনি বললেন, ‘যে (আন্তরিকতার সঙ্গে) রুকু-সেজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না।’  (মুসনাদ আহমাদ, মিশকাত)

আল্লাহকে ভয় করা

নামাজে  দাঁড়ানোর পর মহান আল্লাহকে ভয় করা। মৃত্যুর ভয়ে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজকেই জীবনের শেষ নামাজ মনে করা। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তির উপদেশ কামনায় বলেছিলেন, ‘যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

 সেজদার স্থানে তাকানো

নামাজে মনোযোগী হতে সেজদার স্থানের দিকে তাকানো খুবই জরুরি। যা মানুষকে নামাজে মনোযোগী করে তোলে। হাদিসে এসেছে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নিজেই) দাঁড়ানো অবস্থায় সেজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন।’ (তাফসিরে তবারি)

নামাজে মনোযোগী হতে এ হাদিসটি মনে রাখা খুবই জরুরি-

রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সঙ্গে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে, কীভাবে সে (তার প্রভুর সামনে) কথোপকথন করছে।’ (মুসতাদরাক হাকেম)

উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে অনুসরণ ও অনুকরণেই নামাজে মনোযোগী হওয়া সহজ হবে। নামাজে মনোযোগী হতে অজু থেকে শুরু করে নামাজ শেষ পর্যন্ত প্রতিটি কাজ আল্লাহ দেখছেন এ মনোভাব নিয়ে সুন্দরভাবে রুকু-সেজদা আদায়েল মাধ্যমে নামাজ পড়া জরুরি। এ নির্দেশও দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। তিনি ইরশাদ করেছেন-

যে ব্যক্তি নামাজের সময় হলে সুন্দরভাবে অজু করে এবং একাগ্রতার সঙ্গে সুন্দরভাবে রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করেতার এ নামাজ আগের সব গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোনো কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এ সুযোগ তার সারা জীবনের জন্য।’ (মুসলিম)

মুমিন মুসলমানের উচিত, ‘নামাজে মনোযোগী ও গুনাহমুক্ত হতে শুরু থেকেই হক আদায় করে অজু করা। কেননা অজুতে হাত ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাত দ্বারা সংঘটিত গুনাহ পানির সঙ্গে ধুয়ে চলে যায়। এমনিভাবে প্রতিটি অঙ্গ ধোয়ার সঙ্গে সে অঙ্গের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গুনাহও ধুয়ে মুছে চলে যাওয়ায় অজুকারী ব্যক্তি পাক-সাফ হয়ে যায়। আর তাতে সে পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে।

ছবি- সামশুল আলম মল্লিক

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest