17th Ramadan: বদর ‍যুদ্ধ ছিল ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা

বদরের যুদ্ধ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক নিদর্শন ও অনুপ্রেরণা লাভের অন্যতম শিক্ষা।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

আজ ১৭ রমজান। ইসলামের ইতিহাসে এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এদিন সংঘটিত হয়েছিল বদরের যুদ্ধ। ২ হিজরির ১৭ রমজান মদিনার মুসলিম ও মক্কার অমুসলিমদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধের আগে মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে বেশ কিছু খণ্ডযুদ্ধ হয়। কিন্তু বদর ছিল দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম বড় আকারের যুদ্ধ। ইসলামের এ প্রথম সামরিক যুদ্ধে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে। মুসলিমদের এই বিজয় অন্যদের কাছে এই বার্তা পৌঁছায় যে মুসলিমরা আরবে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে এবং এর ফলে নেতা হিসেবে মুহাম্মদ (সা.)–এর অবস্থান দৃঢ় হয়।

মক্কার কুরাইশরা যখন দেখল যে নবী করিম (সা.) মদিনায় হিজরত করে তথায় পৌত্তলিক, ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের সমন্বয়ে পৃথিবীর প্রথম লিখিত শাসনতন্ত্র ‘মদিনা সনদ’-এর ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ ইসলামি রাষ্ট্র গঠন করলেন এবং জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-দলমতনির্বিশেষে তাঁর নেতৃত্বে মদিনাবাসী বিনা প্রতিবন্ধকতায় নিঃশঙ্ক জীবন যাপন করছিলেন এবং ইসলামের মর্মবাণী ধীরে ধীরে আরব উপদ্বীপ ছেড়ে বহির্বিশ্বে প্রচারিত হচ্ছিল, তখন মক্কার কাফের সম্প্রদায় ও মদিনার ষড়যন্ত্রকারী মুনাফিকেরা চক্রান্ত করে নবী করিম (সা.) ও ইসলামকে দুনিয়ার বুক থেকে চিরতরে উৎখাত করে দেওয়ার মানসে যুদ্ধের জন্য রণপ্রস্তুতি গ্রহণ করে। একদল কুরাইশ ব্যবসায়ী আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে যুদ্ধাস্ত্র কিনে মদিনা হয়ে সিরিয়া থেকে মক্কায় ফিরছিল। পথে সরঞ্জামাদি হারানোর আশঙ্কায় মক্কায় বিপৎসংকেত পাঠানো হয়। তখনই কুরাইশ নেতা আবু জেহেল এক হাজার অশ্বারোহী সশস্ত্র যোদ্ধাসহ মদিনা অভিমুখে ছুটে আসেন। এ সংবাদ জানতে পেয়ে মহানবী (সা.) রোজাদার সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ সভায় বসলেন।

সাহাবায়ে কিরামের সুদৃঢ় ইমানি চেতনা ও ইস্পাত কঠিন মনোবল দেখে নবী করিম (সা.) অত্যন্ত খুশি হলেন। আবু জেহেলের রণযাত্রার খবর শুনে দ্বিতীয় হিজরির রমজান মাসের ১২ তারিখে নিখিল বিশ্বের ত্রাণকর্তা স্বয়ং সেনাপতি রাসুলুল্লাহও (সা.) প্রাণোৎসর্গে প্রস্তুত ৬০ জন মুহাজির ও ২৫৩ জন আনসারসহ মোট ৩১৩ জন সাহাবি সঙ্গে নিয়ে শত্রু বাহিনীকে বাধা প্রদান ও দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্য মদিনা থেকে যাত্রা শুরু করে ৮০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে উপস্থিত হলেন। মুসলমানদের অস্ত্র মাত্র তিনটি ঘোড়া, ৭০টি উট, ছয়টি বর্ম ও আটটি তলোয়ার হলেও বিজয়লাভের প্রধান উপকরণ ছিল ইমানের বল; অস্ত্রবল ও সংখ্যা নয়। নবী করিম (সা.) মুসলমানদের জিহাদ সম্বন্ধে উপদেশ ও উৎসাহ প্রদান করলেন। যুদ্ধে জয়লাভ করা সংখ্যা, অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জামাদির আধিক্যের ওপর নির্ভর করে না; বরং মহাপরীক্ষার সময় আল্লাহর প্রতি অটল বিশ্বাস রেখে ধৈর্য অবলম্বন করা এবং অটল থাকাই জয়লাভের উপায়—এ কথাগুলো তিনি উত্তমরূপে সাহাবিদের হৃদয়ঙ্গম করিয়ে দিলেন।

এই যুদ্ধে হক ও বাতিলের, নূর ও জুলুমাতের, ইসলাম ও কুফুরের উভয় বাহিনী পরস্পর সম্মুখীন হয়েছিল। এই যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে নবীজি (সা.)–এর প্রধান শত্রু আবু জাহেলের নিহত হওয়া।

আরও পড়ুন: দেখে নিন গালিবের সেই অসাধারণ পঙতি, যা আপনাকে চেতনাময় করে তুলবে

বদরের যুদ্ধ সে সময় সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করে। মদিনার অন্য আরব গোত্রগুলো মুসলিমদের নতুন শক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করে। যুদ্ধ জয়ের ফলে নেতা হিসেবে মুহাম্মদ (সা.)–এর কর্তৃত্ব বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বদরের বন্দীদের প্রতি হজরত মুহাম্মদ (সা.) অত্যন্ত সদয় ব্যবহার করেন। এসব বন্দীকে পরে তিনি সহজ শর্তে মুক্তি দেন। অনেকেই তখন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার পুরোনো রাস্তায় গেলে বদরের প্রান্তর পড়ে। মক্কা থেকে ১২০ মাইল ও মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে মধ্যবর্তী স্থানে এর অবস্থান। হজ করার সুবাদে বেশ কয়েকবার আমার বদরের প্রান্তরে যাওয়ার সুযোগ ঘটে। সেখানে সড়কের পাশে রয়েছে বড় একটা স্মৃতিস্তম্ভ, যাতে লেখা রয়েছে বদরের যুদ্ধে শহীদদের নাম।

বদরের যুদ্ধ মুসলিম উম্মাহর জন্য এক নিদর্শন ও অনুপ্রেরণা লাভের অন্যতম শিক্ষা। এ যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় এটা প্রমাণ করে যে সত্যনিষ্ঠ কাজে বিজয়ের জন্য আল্লাহর ওপর ভরসা করার পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ়তা, ধৈর্য ও সহনশীলতার বিকল্প নেই।

আরও পড়ুন: জেনে নিন ইমাম গাজ্জালীর অমর বাণী,যা আপনার মনেও আলো জ্বালবে

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest