কাল বুধবার। অমাবস্যা। কালীপুজা । আলোর উৎসব দীপাবলিও। এই অমাবস্যাকে’ দীপান্বিতা অমাবস্যা’ –ও বলা হয় এই অমাবস্যার আগের দিন, চতুর্দশী তিথিতে হিন্দু শাস্ত্র এবং ধর্ম মতে পালন করা হয় ‘ভূত চতুর্দশী’। এই দিন অনেক ঘরেই জ্বালানো হয় চোদ্দ প্রদীপ, খাওয়া হয় চোদ্দ শাক। বহুদিন ধরেই চলে আসছে এই প্রথা। তবে আগের মত এখন আর বাড়িতে বাড়িতে পুরাতন এই প্রথা মানা হয় না। তবু প্রচীন এই প্রথা ধরে রাখার চেষ্টা আজও রয়েছে অনেক ঘরেই।
হিন্দু ধর্ম মতে বিশ্বাস করা হয় যে এই ভূত চতুর্দশীর দিন, রাতে মর্ত্যে নেমে আসেন৷ মৃত পূর্ব পুরুষরা। তাঁদের খুশি করতে এবং অতৃপ্ত আত্মাদের অভিশাপ থেকে বাঁচতে এদিন এই আচার পালন করা হয়। এই দিনকে ভূত চতুর্দশী বলার সঙ্গেই অনেকেই নরক চতুর্দশীও বলে থাকেন।
ভূত চতুর্দশীতে বেশ কিছু আচার পালন করার প্রথা রয়েছে । তার মধ্যে অন্যতম হল ১৪ শাক খাওয়া। ধর্ম মতে এই রাতে মর্ত্যে নেমে আসেন আমাদের ১৪ পুরুষরা। বিশ্বাস করা হয় যে মৃত্যুর পর দেহ বিলীন হয়ে যায় পঞ্চভূতে। আকাশ, মাটি, জল, হাওয়া, অগ্নি প্রকৃতির এই পঞ্চউপাদানের মধ্যেই মিশে থাকেন আমাদের পূর্বপুরুষরা। তাই ১৪ প্রকার শাক খেয়ে পরলোকগত ১৪ পুরুষের উদ্দেশ্যে উত্সর্গ করা হয় এই দিনটিকে। ভূত চতুর্দশীতে তাই গৃহস্থ বাড়িতে সন্ধের পর ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি আছে। আবার অনেকে মনে করেন অশুভ শক্তি দূর করতে এই দিন সারা রাত আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়। পরদিন দীপান্বিতা অমাবস্যায় অনেকে অলক্ষ্মী বিদায় করতে লক্ষ্মী পুজো করেন।
হিন্দু পুরাণে থাকলেও ভূত চতুর্দশী একান্তই বাঙালির উৎসব বলা চলে। কারণ বাঙালি ছাড়া অন্য জায়গায় হিন্দুদের মধ্যে ভূত চতুর্দশী পালন করার রেওয়াজ তেমন নেই। ১৪ শাক ভাজা আর ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর পিছনে আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও । বলা হয়, হেমন্তের শুরুতে পোকার উপদ্রব দূর করতে বাড়িতে ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়। আবার ঋতুর পরিবর্তনের কারণে এই সময়টা অসুখবিসুখ বেশি হয় । তাই ১৪ রকমের শাক খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। যে সব শাক এদিন খাওয়ার প্রথা বা নিয়ম আছে তার মধ্যে আছে পুঁই, সর্ষে, নিম, হিলঞ্চ, পলতা, গুলঞ্চ, শুষণী শাক।
১৪ রকমের শাক ধোয়ার জন্য যে জল ব্যবহার করা হয়, তা ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাড়ির অন্ধকার কোণগুলোতে। দুপুরে ১৪ শাক ভাজা খেয়ে, সন্ধ্যায় ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে, দরজায় ১৪ ফোঁটা দেওয়ার এই রেওয়াজ বহুদিনের।