Site icon The News Nest

গ্রামবাংলার ঘরে-ঘরে শষ্যের ওম, জেনে নিন ইতুপুজোর ইতিকথা

itu

বাঙালির তেরো পার্বনেরই অন্যতম এই ইতু পুজো। অগ্রহায়ণ মাসের রবিবার অর্থাৎ সূর্যবারে অনেক বাড়িতেই ইতু পুজোর প্রচলন রয়েছে। কাজেই গ্রামবাংলায় তো বটেই, শহরেও অনেকেই পরিচিত এই পুজোর সঙ্গে। কিন্তু কে এই ইতু? কেনই বা করা হয় ইতুর পুজো? চলুন জেনে নেওয়া যাক ইতুর ইতিকথা।

ইতুর এক নাম মিত্র। অগ্রহায়ণ মাসে সূর্য মিত্র নামেই পরিচিত। প্রতি রবিবার উপবাস রেখে পুজো করা হয় বলে একে সূর্যের পুজোও বলা হয়ে তাকে। অবশ্য ইতু পুজোকে সূর্য উপাসনা বলা হলেও এই পুজোর রীতিও উপাচার বিশ্লেষণ করে ইতুকে মাতৃদেবী রূপেই গণ্য করেন অনেকে। ইতুর ঘটের গায়ে পুতুলি আঁকা এবং ভেতরে দেওয়া হয় শস্যদানা ও তৃণগুচ্ছ। খড়ের বিঁড়ের উপরেই ইতুর সরাকে বসানো হয়।

এর পর ওই সরাতে দেওয়া হয় মাটি। মাটি পূর্ণ সরার মাঝে ঘট স্থাপন করতে হয়। আর বাকী অংশে থাকে কলমী, সরষে, শুষনীর মূলসহ শাক। এ ছাড়া ধানের বীজ, মানকচুর মূল লাগানো হয়। আর ছোলা মটর মুগ তিল যব সহ আট রকমের শস্যের বীজও ছড়ানো হয়ে থাকে। অঙ্কুরোদ্গম হয়ে তা থেকে বেরোয় ছোট ছোট গাছ। এরপর প্রতি রবিবার সকালে ইতু গাছে জল দিয়ে ব্রত পালন করেন বাড়ির মহিলারা, পুজো শেষে ব্রত কথা। এরপর অগ্রহায়ণ সংক্রান্তির দিন সমাপ্ত হয় পুজো। গঙ্গায় ইতুর ঘট বিসর্জন করেন মহিলারা।

বাংলা মেয়েরা নিজেরাই এই পুজো করে থাকেন। ইতুকে সাধভক্ষণের প্রথাও রয়েছে কোথাও কোথাও। সেদিন নতুন গুড় ও চাল দুধ দিয়ে পরমান্ন তৈরি করে নিবেদন করা হয়।

ইতু শব্দটির সঙ্গে মিথু শব্দটির মিল রয়েছে। মিথু-ও প্রাচীন পারস্যের এক দেবতা। এই মিথু আবার এসেছেন বৈদিক মিত্র শব্দটি থেকে। বৈদিক সাহিত্যে মিত্র মানে মূলত সূর্যদেব। কাজেই মনে করা হয় ইতু পুজো আসলে সূর্য পুজো। প্রাচীনকালে কুমারীরা পতিলাভ এবং সাংসারিক মঙ্গলকামনায় সূর্য পুজো শুরু করেন। আর এরপরেই সূর্য পুজোর প্রচলন ঘটে মহিলামহলে। তবে রাঢ় বাংলায় ইতুকে শষ্যদেবী লক্ষ্মীরূপেও পুজো করা হয়।

কারও মতে আবার ইতু প্রাচীন ইন্দ্রপুজোর দৃষ্টান্ত। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ইতুর ব্রতগল্পে ইন্দো-ইউরোপীয় লোকগল্পের ছোঁয়াও রয়েছে। সবমিলিয়ে নানান মত রয়েছে এই ইতু পুজোকে কেন্দ্র করেই।

Exit mobile version