আনুমানিক ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দে অন্ধ্রদেশের ভিজিয়ানাগ্রামে নরসিংহ রাও নামক এক ভূম্যধিকারীর ঔরসে এবং বিদ্যাবতীর গর্ভে সাধক ত্রৈলঙ্গ স্বামী জন্মগ্রহণ করে। শিবের কৃপায় জন্ম বলে নবজাতকের নাম রাখা হল শিবরাম। শিবরাম ছেলেবেলায় গম্ভীর, শান্ত ও উদাসীন প্রকৃতির ছিলেন। পিতামাতার মৃত্যুর পর পৈত্রিক সম্পত্তি অনুজ শ্রীধরকে দিয়ে শিবরাম গ্রামের শ্মশানের এক পাশে একটি কুটির তৈরি করে সাধনা করা শুরু করেন। তাঁর বয়স যখন ৭৮ তখন সহসা সেখানে ভগীরথানন্দ সরস্বতী নামক এক যোগী সন্ন্যাসী আবির্ভূত হন। শিবরাম ঐ যোগীর সাথে ঐ স্থান ত্যাগ করে পুষ্কর তীর্থে এসে তাঁর নিকট সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। সন্নাস গ্রহণ করার পর তাঁর নাম হয় গণপতি সরস্বতী। তবে তিনি তেলঙ্গ দেশ হতে আগত বলে কাশীর ভক্তগণের নিকট তিনি ত্রৈলঙ্গস্বামী নামে পরিচিত হন।
আরও পড়ুন : সোনা দিয়ে তৈরি আইসক্রিম! চেখে দেখার খরচ জানলে চোখ কপালে উঠবে
ত্রৈলঙ্গ স্বামী গুরম্নর আশ্রয়ে থেকে রাজযোগ, হঠযোগ, লয়যোগ প্রভৃতি বিভিন্ন প্রকার যোগ শিক্ষালাভ করেন। ত্রৈলঙ্গস্বামী সমগ্র জীবন ধরে যে কত অলৌকিক লীলা করেছেন তা বলে শেষ করা যায় না। একবার তিনি সেতুবন্ধ রামেশ্বরধামের নিকটে একটি মেলায় উপস্থিত হয়ে দেখেন এক ব্রাহ্মণকুমার প্রাণত্যাগ করেছেন। তিনি তখন তাঁর কমণ্ডলু হতে জল ছিটিয়ে দিলে ঐ ব্রাহ্মণকুমার প্রাণ ফিরে পান। এছাড়াও তিনি হিমালয়ের পাদদেশে বসবাসকারী এক বালকের শবদেহে প্রাণের সঞ্চার করেছিলেন। একবার এক জন্মবধির কুষ্ঠ রোগীকে এবং আরেকবার এক যক্ষ্মা রোগীকে রোগমুক্ত করেন।
এক মহিলার স্বামী সর্প দংশনে মারা গেলে তিনি ঐ মৃতব্যক্তির দংশিত স্থানে গঙ্গা-মৃত্তিকা লেপন করে তাকে বাঁচিয়ে তোলেন ফলে মহিলাটির বৈধব্যদশা দূর হয়। তিনি যখন নর্মদার তীরে বাস করতেন তখন একদিন নর্মদার জল দুগ্ধে পরিণত করে তা পান করেছিলেন। যোগী-ঋষিগণ কখনও সাধারণ মানুষের মত জীবন-যাপন করেন না। ত্রৈলঙ্গ স্বামী সব সময় উলঙ্গ হয়ে চলতেন। একবার আদালতে এক বৃটিশ ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে তিনি মলত্যাগ করে তা ভক্ষণ করেছিলেন। অথচ উপস্থিত সবাই দেখলেন তিনি সুগন্ধিযুক্ত সুস্বাদু খাদ্য খেয়েছেন। আসলে শৈব-যোগীরা লজ্জা, ঘৃণা ও ভয়ের ঊর্ধে এবং তাঁরা চন্দন ও বিষ্ঠায় সমজ্ঞান করেন। ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ, শীত-গ্রীষ্ম প্রভৃতি কোন কিছুই যোগীদের প্রভাবিত করতে পারে না।
ত্রৈলঙ্গ স্বামী যখন অজগরবৃত্তি অবলম্বন করতেন তখন নিজের ইচ্ছায় আহার সংগ্রহের চেষ্টা করতেন না। তাঁকে ভক্তরা যা খেতে দিতেন তাই তিনি তৃপ্তিভরে খেতেন। একবার এক একদল দুষ্টলোক তাঁকে পরীক্ষা করার জন্য চুণগোলা জল তাঁর সামনে তুলে ধরলেন। কিন্তু তিনি তাতে রুষ্ট না হয়ে সব চুণগোলা জল অবলীলায় পান করলেন। এরপর ঐ দুষ্টলোকগুলো অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চায়। স্বামীজীও তাঁদের ক্ষমা করে দেন। তিনি মা গঙ্গার তীরে থাকতে পছন্দ করতেন। তিনি কখনও গঙ্গায় ডুব দিয়ে জলের নিচে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেন। কখনও জলে চিৎ হয়ে ভেসে থাকতেন এমনকি তাঁকে স্রোতের বিপরীতে কোন প্রকার অঙ্গ-সঞ্চালন করেই ভেসে থাকতে দেখা যেত।
একদিন মণিকর্ণিকার ঘাটে ত্রৈলঙ্গ স্বামীর সাথে শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সাক্ষাৎ ঘটে। তখন স্বামীজী মৌনভাব অবলম্বন করেছিলেন। তাই রামকৃষ্ণদেব তাঁকে ইশারায় জীজ্ঞাসা করেছিলেন ঈশ্বর এক না অনেক। তখন তিনি ইশারাতেই বুঝিয়ে দেন- সমাধিস্থ হয়ে দেখতো-এক, নইলে যতক্ষণ আমি, তুমি, জীব, জগৎ ইত্যাদি নানা জ্ঞান থাকে ততক্ষণ ঈশ্বর অনেক। ত্রৈলঙ্গ স্বামী হিমালয়ের মানস সরোবর, নেপাল, তীববত, পুস্কর, প্রয়াগ, বারাণসী সহ বিভিন্ন তীর্থ পরিব্রাজন শেষে জীবনের শেষভাগে পঞ্চগঙ্গার ঘাটেই অবস্থান করেছেন। তিনি পঞ্চগঙ্গার ঘাটের নিকটস্থ বিভিন্ন স্থানে এবং মহেশভট্টের বাড়িতে প্রায় আশি বৎসর কাল বাস করেছেন। পরিশেষে ৩০০ বৎসর বয়স অতিক্রম করার পর ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে ডিসেম্বর (পৌষ মাসের শুক্লা-একাদশীর দিন) নিজ ইচ্ছায় ধ্যানযোগে ইহলীলা সংবরণ করেন।
আরও পড়ুন : Porn Case: এ বার জিজ্ঞাসাবাদ শিল্পাকে, বয়ান রেকর্ড হল রাজ-পত্নীর