Site icon The News Nest

জেনে নিন মতুয়া সম্প্রদায় ও মানবতার জন্য গুরুচাঁদ ঠাকুরের ত্যাগ

guruchand thakur

হরিচাঁদ ঠাকুরের পর মতুয়া আন্দোলনের হাল ধরলেন তাঁর সুযোগ্য পুত্র গুরুচাঁদ ঠাকুর।তাঁর নেতৃত্বে মতুয়া আন্দোলন আরো ব্যাপকতা লাভ করে।তিনি শুধু ধর্ম নয়-রাজনৈতিক,সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সর্বোপরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক চেতনা ও আন্দোলন গড়ে তুললেন,যা ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলো।

মতুয়াদের তিনি রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করতে চাইলেন এবং তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করার আদর্শে অনুপ্রাণিত করলেন।তিনি বললেন-

“যে জাতির রাজা নেই।

সে জাতি তাজা নেই”।।

তিনি আরো বললেন-

আরও পড়ুন : স্বামী বিবেকানন্দের জীবন বদলে দেওয়া কিছু বাণী, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই

“রাজশক্তি মূল শক্তি কহিনু নিশ্চয়।

রাজশক্তি বিনা কেহ বড় নাহি হয়”।।

তাই তিনি দাসত্বের মানসিকতা ত্যাগ করে রাজকীয় মানসিকতা গড়ে তুলতে বলেছেন-

“রাজা যদি হতে চাও ধর রাজভাব।

ভাব অনুযায়ী আসে ভাবের স্বভাব”।।

তিনি আরো বলেছেন-

“জাতি ধর্ম যাহা কিছু উঠাইতে চাও।

রাজশক্তি থাকে হাতে যাহা চাও পাও”।।

আর এই রাজশক্তি দখল করার জন্য তিনি ঐক্যবদ্ধ হয়ে দল গড়ার কথা বললেন।তিনি বললেন-

“যে জাতির দল নেই।

সে জাতির বল নেই”।।

তাঁর জীবৎকালে রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের ক্ষেত্রে তিনি কিছুটা সাফল্যও পেয়েছিলেন।এই সাফল্যের পথ ধরে পরবর্তীকালে যোগেন মন্ডলের হাত ধরে আম্বেদকর গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।ফলে আম্বেদকর সংবিধান প্রণয়নের সুযোগ পান – যার ফলশ্রুতিতে আজ তামাম ভারতবর্ষের দলিত-নিপীড়িত-শোষিত জনতা ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠেছে।

যাই হোক,এবার সংক্ষেপে তাঁর শিক্ষা আন্দোলনের কথা কিছু বলি।তাঁর এই শিক্ষা আন্দোলন বাংলাদেশের একটি সুবৃহৎ আন্দোলন।গুরুচাঁদ ঠাকুর  তাঁর অনুগামীদের সহযোগীতায় বাংলাদেশে দু’হাজারের উপর বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।তাঁর সাথে কেউ দেখা করতে এলে তিনি প্রথমেই তাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতেন যে,তার গ্রামে বিদ্যালয় আছে কিনা।সে যদি বলতো-নেই,তাহলে তিনি বলতেন- আগে তোমার গ্রামে বিদ্যালয় তৈরির ব্যবস্থা করো,তারপর আমার সাথে দেখা করতে এসো।এটা ছিলো এক বিশাল কর্মযজ্ঞ।তিনি বলতেন-

“খাও বা না খাও।

ছেলেমেয়েকে শিক্ষা দাও”।।

তাঁর শিক্ষামূলক আরো কয়েকটি বাণী নিচে দেওয়া হল

বিদ্যাচাই,ধন চাই,রাজকার্য্য চাই”।।

জ্ঞানবলে তারে পাবে কহে মতিমান”।।

তাতে কিবা আসে যায়।

বিদ্যাহীন ব’লে      ছলে বলে কলে

মোদের চরিয়ে খায়”।।

বিদ্যার ভিত্তিতে সবে সমাজ গড়াও।।

যেইজন বিদ্যাবান পরম পন্ডিত।

সমাজের পতি তারে মানিবে নিশ্চিত।।

বিদ্যা ছাড়া কথা নাই বিদ্যা কর সার।

বিদ্যা ধর্ম,বিদ্যা কর্ম,অন্য সব ছার।।

সবাকারে বলি আমি মানো যদি মোরে।

অবিদ্বান পুত্র যেন নাহি থাকে ঘরে”।।

গুরুচাঁদ ঠাকুর জাতপাত,মানুষে মানুষে ভেদাভেদ মানেননি,বলেছেন-

“নরাকারে ভূমন্ডলে যতজন আছে।

একজাতি ব’লে মান্য পাবে মোর কাছে”।।

তিনি কুসংস্কার মানেননি,তাই বলেছেন-

“মন্ত্রতন্ত্র ভেক ঝোলা সব ধাঁধাবাজী।

পবিত্র চরিত্র রেখে হও কাজের কাজী”।।

কিবা ফল পেলি তাতে বল।

কর্ম ছেড়ে কান্দে যেই     তার ভাগ্যে মুক্তি নেই

হবি নাকি বৈরাগীর দল”।।

তিনি কান্দাকান্দি ক’রে ধূলো কাদায় গড়াগড়ি করার পরিবর্তে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলেছেন-“স্নানদানে শৌচাচারে সুসভ্য হইবে।

অপবিত্রভাবে কেহ কভু না চলিবে”।।

হরিচাঁদ ঠাকুরও বলেছেন-

“দেহমন সর্বক্ষণ রাখিবে পবিত্র।

শিখাইতে হবে জীবে এই মূল সূত্র”।।

গুরুচাঁদ ঠাকুর ধর্ম বলতে মানব ধর্মকেই বুঝিয়েছেন,কোন আচার-বিচার ছুৎমার্গকে নয়। তিনি বলেছেন-“নাহি চিনি দেবদেবী।

ঘট পট কিবা ছবি”।।

বরং তিনি ঘরসংসার-পরিবারকে শান্তিতে, সুন্দর ক’রে গড়ে তোলার কথা বলেছেন,পারিবারিক উন্নতির জন্য গৃহধর্ম পালনের কথা বলেছেন-

“গৃহধর্ম গৃহকর্ম করিবে সকল।

হাতে কাম মুখে নাম ভক্তিই প্রবল”।।

 পৃথিবীতে ধর্মের ইতিহাসে এটি একটি যুগান্তকারী ভাবনা।জগতের সকল মানুষ পরিবারে আবদ্ধ।তাই প্রতিটি পরিবারের কল্যাণের মধ্য দিয়েই কেবল জগতের প্রকৃত কল্যাণ সাধিত হতে পারে,নচেৎ নয়।

আর ঈশ্বর বলতে আকাশে বসে জগৎকে নিয়ন্ত্রণ করছেন,এমন কোন মহাপিতার কথা বোঝেননি। ঈশ্বর বলতে তিনি বুঝেছেন-

“বিশ্বভরে এই নীতি দেখি পরস্পর।

যে যাহারে উদ্ধার করে সে তাহার ঈশ্বর”।।

আরও পড়ুন : বাবা লোকনাথের এক আশ্চর্য ছবি, যা আজও বহু মানুষকে ভাবিয়ে তোলে

 

Exit mobile version