বাংলা সাহিত্য জগতে নক্ষত্রপতন। বাঙালির সাহিত্যকে চির শূন্যতার ভরিয়ে মারণ ভাইরাসের কাছে হেরে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। বুধবার সকালে উল্টোডাঙ্গার বাড়িতেই নিভে গেল জীবনদীপ। যদিও তার আগেই বাংলা সাহিত্যকে তিনি যা দিয়ে গেলেন, তা হিসেবখাতায় ধরা যাবে না কোনওদিন।
এই তো জানু পেতে বসেছি, পশ্চিম
আজ বসন্তের শূন্য হাত—
ধ্বংস করে দাও আমাকে যদি চাও
আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক।-বাবরের প্রার্থনা
মুখের কথা একলা হয়ে
রইল পড়ে গলির কোণে
ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু
ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে।- মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে
আরো একটু মাতাল করে দাও।
নইলে এই বিশ্বসংসার
সহজে ও যে সইতে পারবে না ! –মাতাল
যদি তাই লাগে তবে ফিরে এসো । চতুরতা, যাও ।
কী-বা আসে যায়
লোকে বলবে মূর্খ বড়ো, লোকে বলবে সামাজিক নয় !-মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয়
হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ নয়
সারা জীবন বইতে পারা সহজ নয়
এ কথা খুব সহজ, কিন্তু কে না জানে
সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয় ।- সঙ্গিনী
সেই সনাতন ভরসাহীন অশ্রুহীনা
তুমিই আমার সব সময়ের সঙ্গিনী না ?
তুমি আমায় সুখ দেবে তা সহজ নয়
তুমি আমায় দুঃখ দেবে সহজ নয় ।-সঙ্গিনী
গহ্বরে মিলিয়ে যায় স্বর । স্তব্ধ শ্বাস । তার পর
তিনি ফিরে তাকালেন আমাদের দিকে । বললেন, ‘এবার
আসুন এক শতাব্দী আমরা নীরব হয়ে দাঁড়াই । ’ –সে অনেক শতাব্দীর কাজ
যেদিন পৃথিবী তার সম্বিৎ হারিয়ে ছিল চুপ
ঝর্ঝর ঝরার শব্দে ঝরে পড়েছিল সব ধী
মুখেরা ফসিল আর যেদিন ফসিলই হল মুখ
সেদিনও কি জানতে চাও তাহলে কবির ধর্ম কী ?- যেদিন
আরও পড়ুন: কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ২০ হৃদয় ছোঁয়া উক্তি…
খুব যদি বাড় বেড়ে ওঠে
দাও ছেঁটে দাও সব মাথা
কিছুতে কোরো না সীমাছাড়া
থেকে যাবে ঠিক ঠাণ্ডা, চুপ
ঘরেরও দিব্যি শোভা হবে
লোকেও বলবে রাধাচূড়া।-রাধাচূড়া
অলিন্দের থেকে ভাঙা থামের উপরে বসে দেখি
চত্বরের মাঝখানে স্থগিত শবের চারপাশে
শরিকেরা অন্ধকারে আসাড় মুদিত হয়ে আসে
ধুনিগুলি জ্বেলে নিয়ে তৃতীয় চোখের দিব্যতায়।-শহর
তুমি যদি না-ও চাও, আমি তো চেয়েছি ! সে-চাওয়াই
আরেক জন্মের দিকে বয়ে নিয়ে চলে যেতে পারে
কেননা তুমি যে আছ সেই সত্য ভাঙে না কখনও । –শান্তিজল
বৃষ্টিপ্রতিহত ফুল হাতে নিতে নেই, হাতে নিলে
বালক বয়স ঝরে পড়ে ! -বয়স
ঘুরে ঘুরে এই প্রকৃতি কী কথা কয় ?
সে বলে যার প্রেমের মতন আর কিছু নয় ! –এই প্রকৃতি
ছিছি হায় বেচারা শুনুন যারা মস্ত পরিত্রাতা
এ কলকাতার মধ্যে আছে আর একটা কলকাতা
হেঁটে দেখতে শিখুন
হেঁটে দেখতে শিখুন ঝরছে কী খুন দিনের রাতের মাথায়
আরেকটা কলকাতায় সাহেব, আরেকটা কলকাতায়
সাহেব বাবুমশাই |-বাবুমশাই
তুমি ভেবেছিলে অপমান ছুড়ে যাবে
দু’কথা শুনিয়ে সুখ পাবে ভেবেছিলে
চোখের আড়ালে অশ্বথ্বের ডালে
ভেবেছ দু’ পাখি মরে যাবে এক ঢিলে।- অপমান
এবার সব খুলে চরণমূলে
ঝাঁপাব ডাঁই করা পাঁকে
এবং মিলে যাব যেমন সহজেই
চৈত্র মেশে বৈশাখে।-হাতেমতাই
দাপিয়ে বেড়াবে আমাদের দল
অন্যে কবে না কথা
বজ্র কঠিন রাজ্যশাসনে
সেটাই স্বাভাবিকতা। –সবিনয় নিবেদন
শুন্যতাই জানো শুধু? শুন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে
সেকথা জানো না?-শূন্যের ভিতরে ঢেঊ
বর্ষাফলকে বিষ মেখে নিয়ে কালো মুখোশের আড়ালে যত
বহিরাগতরা এসে ঠিক ঠিকই বুঝে নেয় কারা বহিরাহত।-বহিরাহত
সমস্ত একসঙ্গে ঘুরে আসে স্মৃতির হাতে
অল্প আলোয় বসে থাকা পথ ভিখারি
যা ছিল আর যা আছে দুই পাথর ঠুকে
জ্বালিয়ে নেয় এতদিনের পুনর্বাসন।-পুনর্বাসন
সব তো ঠিক করাই আছে। এখন কেবল বিদায় নেওয়া,
সবার দিকে চোখ,
যাবার বেলায় প্রণাম, প্রণাম! – ছুটি
আরও পড়ুন: দেখে নিন গালিবের সেই অসাধারণ পঙতি, যা আপনাকে চেতনাময় করে তুলবে