‘জুম্মা’ আরবি শব্দটির বাংলা অর্থ শুক্রবার আর ‘বিদা’ অর্থ শেষ। জুম্মাতুল বিদা অর্থ শেষ শুক্রবার। মাহে রমজানের শেষ জুম্মার দিনটি আমাদের সমাজে জুম্মাতুল বিদা নামে পরিচিত। যদিও পরিভাষাটি কোরআন বা হাদিসের প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায় না। তারপরও রমজানের শেষ জুম্মার দিন হিসেবে এর গুরুত্ব কম নয়। রমজান আর জুম্মা একত্রে মিলিত হয়ে দিনটিকে করে তুলেছে সীমাহীন মহিমাময়।
জুম্মাতুল বিদার মহত্ত্ব: দু’টি কারণে জুম্মাতুল বিদা অত্যন্ত মহিমাময়। (১) মাহে রমজানের কারণে: রমজান মাস সীমাহীন ফজিলতের মাস এবং এটি উম্মতে মোহাম্মাদীর জন্য মহান আল্লাহর বিশেষ উপহার স্বরূপ। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই তোমাদের রব বলেছেন, বনি আদমের প্রত্যেকটি নেক-আমলের সওয়াব দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত দেওয়া হয় শুধু রোজা ছাড়া। কেননা রোজা শুধুই আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো।
আর নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশক আম্বারের চেয়েও বেশি প্রিয়। তোমাদের কারো রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ তার সঙ্গে জাহেলের মতো আচরণ করে তাহলে সে বলে দেবে, আমি একজন রোজাদার। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস: ৫৯২৭, সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৫১, মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৮৮৯৪, মুসনাদে আহমাদ: ৯৭১৪) আর জুম্মার দিনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সূর্যদয়ের মাধ্যমে যে দিনগুলো হয় তার মধ্যে সর্বোত্তম দিন হলো জুম্মার দিন।
এই দিনে হজরত আদমকে (আ.)সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল এবং এই দিনেই তাকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিল। আর এদিনের মধ্যে এমন একটি সময় আছে, যখন কোনো মুসলমান নামাজরত অবস্থায় দোয়া করলে অবশ্যই তার দোয়া কবুল করা হয়। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৪৯১) রমজান মাসে রোজা অবস্থায় জুম্মার দিনের নিশ্চিত দোয়া কবুলের শেষ সুযোগ হিসেবে জুম্মাতুল বিদা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন: জেনে নিন ইমাম গাজ্জালীর অমর বাণী,যা আপনার মনেও আলো জ্বালবে
করণীয়: জুম্মার দিনের কিছু সুন্নত আমল রয়েছে। যেমন (১) সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করতে হবে (২) নতুন বা উত্তম পোশাক পরতে হবে (৩) আতর তথা সুগন্ধি ব্যবহার করতে হবে (৪) হেঁটে মসজিদে যেতে হবে (৫) আগে আগে মসজিদে প্রবেশ করতে হবে (৬) ইমামের কাছাকাছি জায়গায় বসতে হবে। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে এখন অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে (৭) ইমামের খুৎবা মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে (৮) বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করতে হবে (৯) কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না, কোনো অনর্থক কাজ করা যাবে না।
হজরত আওস ইবনে আওস আস-সাকাফি (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জুম্মার দিনে ভালো করে গোসল করবে এবং আগে আগে পায়ে হেঁটে মসজিদে যাবে এবং ইমামের কাছাকাছি বসে খুৎবা মনোযোগ সহকারে শুনবে আর কোনো রকম অনর্থক কাজ করবে না তাকে তার প্রতিটি কদমের বিনিময়ে লাগাতার এক বছর নামাজ ও রোজার সওয়াব দান করা হবে। (সুনানে ইবনে মাযা, হাদিস: ১০৮৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩৪৫, আস্-সুনানুল কুবরা, হাদিস: ১৭০৩, সুনানে নাসাঈ, হাদিস: ১৩৮৪, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৬১৭৬, সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ২৭৮১)
আরও পড়ুন: 17th Ramadan: বদর যুদ্ধ ছিল ঈমানের অগ্নিপরীক্ষা