যুগ যুগ ধরে পৌরোহিত্য ও শাস্ত্রীয় আচার আচরণ পুরুষরাই করে আসছেন। সমাজ সেটা মেনেও নিয়েছে। আর তাই মহিলা ঢাকি, মহিলা টোটো চালক, মহিলা বাস কন্ডাক্টর, দেখা গেলেও মহিলা পুরোহিত প্রায় নেই বললেই চলে। তবে এখন অবশ্য মেয়েরা সংস্কৃত ভাষা ও বিষয় নিয়ে চর্চা করছেন। কাজেই মেয়েরা যে পৌরোহিত্যের কাজ যবেন না তেমনটা আর বলা যায় না। আর সেটাই এবার বাস্তব হতে দেখা গেল সালানপুরে। স্থানীয় চতুষ্পাঠী টোলে পৌরহিত্যের পাঠ নিচ্ছেন বৈশাখী চট্টরাজ।
সালানপুরের (Salanpur) এথোড়া গ্রামে চক্রবর্তীদের দুর্গামন্দির শুরু হয়েছে এই চতুষ্পাঠী টোল। ছোরা বোপদেব চতুষ্পাঠির টোল পণ্ডিত কার্তিক মুখোপাধ্যায়ের কাছেই প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বৈশাখী। টোল পণ্ডিত কার্তিক মুখোপাধ্যায়েরই মেয়ে বৈশাখী। মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন বছর সাতেক আগে।
আরও পড়ুন: পুরোহিত ছাড়া ঘরে কী ভাবে করবেন সিদ্ধিদাতার আরাধনা, জেনে নিন ষোড়শপচার পুজো পদ্ধতি
তাঁর টোলে যেমন শিল্পাঞ্চলের পুরোহিতরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তেমনই তাঁদের পাশে বসিয়ে নিজের মেয়েকেও চণ্ডিপাঠ, দুর্গাশ্লোক, বেদ, বেদান্ত, স্মৃতি, ন্যায়শাস্ত্র, ব্যকরণ শিক্ষা দিচ্ছেন তিনি। বিয়ের পরেও সূদূর বীরভূম থেকেও সালানপুর ও ছোরা গ্রামে প্রশিক্ষণ নিতে আসছেন বৈশাখী। তথাকথিত বীজমন্ত্র দিয়ে শিক্ষা নয়, এ যেন আবার সেই স্কুল কলেজের দিনগুলোয় ফিরে যাওয়া। ধরে ধরে সংস্কৃত মন্ত্রোচ্চারণ শেখানো, সঠিক উচ্চারণে ও উচ্চগ্রামে সেটা পড়া, এইসবই রয়েছে শিক্ষার অংশ। টোল পণ্ডিতের দাবি, মন্ত্র তো সবার, সেটা ঠিক করে উচ্চারণ করতে পারলে সেটার প্রয়োগে এত বাধানিষেধ কেন!
পশ্চিম বর্ধমানের একমাত্র চতুষ্পাঠীর টোল শিক্ষক কার্তিক মুখোপাধ্যায়। বেদ, বেদান্ত, সংস্কৃতির পাঠ ছিল তাঁর। চাকরী জীবনে ছিলেন খনিকর্মী। অবসর নেওয়ার পর সেই শিক্ষা ছড়িয়ে দিতেই চতুষ্পাঠী টোল খোলেন তিনি। শুধু পুরোহিতরা নন, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, এমনকী বিজ্ঞানের ছাত্ররাও ছুটে যাচ্ছেন তাঁর টোলে। পুজোর প্রাক্কালে পৌরহিত্য বার্তা ও চণ্ডীপাঠে গমগম করে উঠছে মন্দির চত্বর।
টোল-সংস্কৃতির পাঠশালায় বাড়তি অলঙ্কার এখন বৈশাখী চট্টরাজ। যাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন শ্বশুর বাড়ির লোকজনও। তাঁদের ইচ্ছে বাড়ির দুর্গাপুজোয় পৌরহিত্য করুন গৃহবধূ বৈশাখী।
আরও পড়ুন: Vishwakarma Puja 2021: বিশ্বকর্মাকে কেন ‘দেবশিল্পী’ বলা হয় জানেন? জানুন পুরাণের কাহিনি