মতুয়া হিন্দুধর্মীয় একটি লোকসম্প্রদায়। গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দি নিবাসী হরিচাঁদ ঠাকুর প্রেমভক্তিরূপ সাধনধারাকে বেগবান করার জন্য যে সহজ সাধনপদ্ধতি প্রবর্তন করেন, তাকে বলা হয় ‘মতুয়াবাদ’। এই মতবাদের অনুসারীরাই ‘মতুয়া’ নামে পরিচিত।
মতুয়া শব্দের অর্থ মেতে থাকা বা মাতোয়ারা হওয়া। হরিনামে যিনি মেতে থাকেন বা মাতোয়ারা হন তিনিই মতুয়া। মতান্তরে ধর্মে যার মত আছে সেই মতুয়া; অর্থাৎ ঈশ্বরে বিশ্বাস, গুরু-দেবতা-ব্রাহ্মণে ভক্তি-শ্রদ্ধা, নামে রুচি ও প্রেমে নিষ্ঠা আছে যার, সে-ই মতুয়া।
আরও পড়ুন: এবার বেসুরো জিতেন্দ্র! কেন্দ্রের ২ হাজার কোটি টাকা পায়নি আসানসোল পুরসভা, ফিরহাদকে ‘বিস্ফোরক’ চিঠি
মতুয়া সম্প্রদায় একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী; তারা বৈদিক ক্রিয়া-কর্মে আস্থাশীল নয়। তাদের ভজন-সাধনের মাধ্যম হচ্ছে নাম সংকীর্তন; তাদের বিশ্বাস ভক্তিতেই মুক্তি। এই সাধনপদ্ধতির মাধ্যমে সত্যদর্শন অর্থাৎ ঈশ্বরলাভই তাদের মূল লক্ষ্য।
প্রেম ঈশ্বর লাভের অন্যতম উপায়। পবিত্রতা শরীর-মনে প্রেম জাগ্রত করে; ফলে প্রেমময় হরি ভক্তের হূদয়ে আবির্ভূত হন। এখানে কোনো জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভেদ নেই, ধনী-দরিদ্র নেই; সকলেই ঈশ্বরের সন্তান এই মনোভাব নিয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্যের মধ্যে সকলে মিলিত হয়।আদর্শ গার্হস্থ্য জীবনযাপনের মধ্য দিয়েই মতুয়া ধর্মের চর্চা করা যায়। মতুয়াদের বারোটি নিয়ম পালন করতে হয়, যা ‘দ্বাদশ আজ্ঞা’ নামে পরিচিত।
দ্বাদশ আজ্ঞা
1- সদা সত্য বলো, সৎ পথে চলো, সত্যের করো সাধন।
2- পর নারী প্রতি, রাখিও ভকতি, জননী তুল্য ধারণা।
3- মাতা পিতা গুরু, তথা হ’তে শুরু, করিবে ভক্তি শিক্ষা ।
4- জগতের জীবে, প্রেম আচরিবে, লইবে প্রেমেতে দীক্ষা ।
5- জাতি ভেদ জ্ঞান, জানিও অজ্ঞান, সাধুজনে হবে নত।
6- সাধনার বলে, ষড় রিপু দলে, সবে কর বশীভূত ।
7- পর ধর্ম প্রতি, সম অনুভূতি, প্রকাশিতে নিও শিক্ষা ।
8- বহিরঙ্গ শোভা, নহে মনোলোভা, হৃদয়ে ধর্মের দীক্ষা ।
9- কাজ ক’রো হাতে, হরিনাম সাথে, মুখে জপ ত্যজি লাজ।
10- করো ঘরে ঘরে, হৃদয় বাহিরে, হরি মন্দিরের কাজ।
11- প্রতি দিবসেতে, হরি প্রেমে মেতে, প্রার্থনা করিও সবে।
12- জগৎ ঈশ্বরে, আত্মদান করে, চির ধন্য হয়ে র’বে।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথের জাতীয় সঙ্গীত এবার বদলানোর দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী