Site icon The News Nest

দুর্গাপুজোয় প্রয়োজন পরে পতিতালয়ের মাটির, জানুন এই রীতির আসল কারণ

DURGA

এক পুজো চলে যেতেই শুরু হয়ে যায় পরের বছরের পুজোর প্রস্তুতি ৷ পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কুমোরপাড়ায় ব্যস্ততা ওঠে তুঙ্গে ৷ কাদা মাখা শিল্পী হাত থামতেই চায় না ৷ মৃন্ময়ীরূপে জেগে ওঠেন মা দুর্গা ৷ একমেটে, দোমেটে থেকে ধাপে ধাপে পূর্ণ অবয়বে ফুটে ওঠেন তিনি ৷ কিন্তু শাস্ত্র বলে সেই আদলকে ফুটিয়ে তুলতে কয়েকটি জিনিস আবশ্যক ৷ যেমন, গাভীর মূত্র, গোবর, ধানের শিস, পবিত্র গঙ্গার জল আর নিষিদ্ধপল্লীর মাটির মিশ্রণে তৈরি হবে দেবীমূর্তি ৷ আর সেই কারণেই সেই পুরাকাল থেকে আজও দেবীর মূর্তি তৈরিতে দরকার হয় বেশ্যালয়ের মাটি ৷

কিন্তু কেন এই রীতি ?সমাজে যাঁদের দূরে ঠেলে দিয়েছে, অবজ্ঞা আর বঞ্চনার পাহাড় জমে উঠেছে যাঁদের দেওয়াল বেয়ে, ঘৃণা আর নোংরা দৃষ্টি ছাড়া যাঁদের ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি তাঁদের ঘরের মাটিই আবার দেবীমূর্তির অপরিহার্য অঙ্গ ৷ কিন্তু কেন ?

পুরুষ পতিতার বাড়ি গিয়ে যৌনখেলায় মাতে। আর ঠিক সেই কারণেই সে তার জীবনের সমস্ত সঞ্চিত পুণ্য সেখানে ফেলে আসে। বদলে পুরুষ সেখান থেকে মুঠো ভরতি করে নিয়ে আসে পাপ। বহু পুরুষের পুণ্যে সেখানকার মাটি পরিপূর্ণ। এক কথায় সমাজকে বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য রকরে এই ‘অশুদ্ধ’ বণিতারাই। তাই পুজোর মূর্তি তৈরিতে অনস্বীকার্য পতিতালয়ের মাটি।

তবে এর পিছনে একটি পৌরাণিক কাহিনিও আছে। পুরাণে বলা আছে, ঋষি বিশ্বামিত্র যখন ইন্দ্রত্ব লাভের জন্য কঠোর তপস্যা করছিলেন, তখন তাঁর ধ্যান ভাঙাতে উঠেপড়ে লাগেন দেবরাজ ইন্দ্র। স্বর্গের অপ্সরা মেনকাকে তিনি ঋষির ধ্যানভঙ্গের জন্য পাঠান। অপ্সরার নাচে বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভেঙে যায়। রাজর্ষির মতো একজনের ধ্যান ভাঙানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। দেবরাজ নিজে তা পারেননি। অথচ এক অপ্সরা অবলীলায় সেই কঠিন কাজ সম্পন্ন করেন। হোক না স্বর্গের, তবু মেনকা তো আর সতী রমণীর পর্যায়ে পড়েন না।

অকালে মহামায়া মোট ন’টি রূপে পূজিত হন। এই নবম কন্যাই হলেন পতিতালয়ের প্রতিনিধি। অষ্টকন্যার পর শেষ পুজোটি তাই পায় তারাই। সমাজ যাদের কোণঠাসা করে রাখে সারাবছর, দেবীবন্দনায় তারাই পূজিত হন মানুষের মনে।

Exit mobile version