Durga Puja 2020: কলাবউ বলে ডাকলেও তিনি গণেশের স্ত্রী নন, তা হলে এই পুজোর তাৎপর্য কী ?

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

নবপত্রিকা বাংলার দুর্গাপূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ। নবপত্রিকা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নটি গাছের পাতা। তবে বাস্তবে নবপত্রিকা নটি পাতা নয়, নটি উদ্ভিদ। এগুলি হল – কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান। একটি সপত্র কলাগাছের সঙ্গে অপর আটটি সমূল সপত্র উদ্ভিদ একত্র করে একজোড়া বেল-সহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পুজো করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম কলাবউ।

কলাবউ! কারণটা বুঝে নিতে অসুবিধে নেই। দুর্গা-পরিবারে গণেশের পাশে থাকা লাল রঙের পাড় দেওয়া সাদা রঙের শাড়ি পরা অবয়বের দিকে তাকালে মূলত কলাগাছের দিকেই চোখ পড়ে। তাই অনেকেই মনে করে থাকেন- সস্ত্রীক গণেশ পুজো পাচ্ছেন মায়ের সঙ্গে! কিন্তু এমন মনে করা অর্থহীন! তা-ই যদি হবে, সে ক্ষেত্রে কার্তিকেরও স্ত্রী মণ্ডপে থাকা উচিত। দুর্গা চালচিত্রে শিবের সঙ্গে অবস্থান করেন বিষ্ণু আর ব্রহ্মাও, অতএব লক্ষ্মী আর সরস্বতী স্বামীদের সঙ্গে এসেছেন, সেটা না হয় ধরে নেওয়া যায়!

এই জায়গায় এসে সমস্যা হয় কলাবউয়ের পোশাকি নাম নিয়ে। তাকে বলা হয় নবপত্রিকা। অর্থাৎ নয়টি পত্রিকা বা উদ্ভিদের একত্র অবস্থান। মূলত কলাগাছ চোখে পড়লেও একই সঙ্গে বাঁধা থাকে কচু, হরিদ্রা বা হলুদ, জয়ন্তী, বিল্ব বা বেল, দাড়িম্ব বা ডালিম, অশোক, মানকচু এবং ধান- ‘রম্ভা কচ্চী হরিদ্রাচ জয়ন্তী বিল্ব দাড়িমৌ/অশোক মানকশ্চৈব ধান্যঞ্চ নবপত্রিকা’!

আরও পড়ুন: Durga Puja 2020: জেনে নিন মা দুর্গা এবছর কিসে আসছেন আর কিসে ফিরবেন?

একটি কলাগাছের সঙ্গে বাকি ৮টি উদ্ভিদ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বাঁধা হয়। এর সঙ্গে নারীর অবয়ব রক্ষার্থে স্তনযুগলের সাদৃশ্যে ব্যবহার করা দুটি বেলফল। সব শেষে লাল পাড় সাদা শাড়ি আর সিঁদুরের অনুষঙ্গে তাকে দেওয়া হয় স্ত্রীরূপ।

বলা হয়, এই ৯টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গারই ৯টি রূপের প্রতীক। কলাগাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী ব্রহ্মাণী, কচুর অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালী, হরিদ্রার অধিষ্ঠাত্রী দেবী উমা, জয়ন্তীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী কার্তিকী, বিল্বের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শিবা, দাড়িম্বের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রক্তদন্তিকা, অশোকের অধিষ্ঠাত্রী দেবী শোকরহিতা, মানকচুর অধিষ্ঠাত্রী দেবী চণ্ডিকা এবং ধানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মী।

দুর্গাসপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা জলাশয়ে স্নান এবং মণ্ডপে একটি কাঠের আসনে স্থিতা হওয়ার পর মূল পূজা শুরু হয়। নবপত্রিকা মণ্ডপে প্রবেশের আগে চামুণ্ডার আবাহন এবং পূজা করা হলেও আলাদা ভাবে এই নয় দেবীর পূজা করা হয় না।

উল্লেখ্য, মার্কণ্ডেয় পুরাণ এবং কালিকাপুরাণে নবপত্রিকা পূজার কোনও বিধি উল্লেখ করা হয়নি। শুধু কালিকাপুরাণ সপ্তমী তিথিতে পত্রিকা পূজার নির্দেশ দিয়েছে মাত্র। এর থেকে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করে থাকেন, সম্ভবত এই আচার এসেছে কৃষিভিত্তিক সভ্যতার শস্যদেবীর পূজার অনুষঙ্গে।এই শস্য-মাতা পৃথিবীরই রূপভেদ, সুতরাং আমাদের জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে আমাদের দুর্গাপুজোর ভিতরে এখনও সেই আদিমাতা পৃথিবীর পুজো অনেকখানি মিশে রয়েছে।

আরও পড়ুন: Durga Puja 2020: নবপত্রিকার স্নান দিয়ে শুরু সপ্তমী, কেন পালন হয় এই রীতি?‌

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest