চারদিনের দুর্গাপুজোর শেষ দুই দিন হল নবমী ও দশমী। দুর্গাপুজোয় এই দুই তিথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্ধিপুজোর মধ্যে দিয়ে অষ্টমী তিথির অবসান হয়ে শুরু হয় নবমী। অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে হয় বলে দুর্গাপুজোর এই বিশেষ প্রথার নাম সন্ধিপুজো।
সন্ধিপুজো দুর্গাপুজোর অতি গুরুত্বপূর্ণ সময়। অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট অর্থাৎ মোট ৪৮ মিনিট সময়কে ‘সন্ধি মুহূর্ত’ বলা হয়। এই সময়ের পুজোতে মহাফল লাভ করা যায়। কারণ সন্ধিপুজোর মহাক্ষণে দশভুজারূপিনী চিন্ময়ী দুর্গা পূজিতা হন মুণ্ডমালিনী চতুর্ভুজা চামুণ্ডারূপে। তার কারণ, শুম্ভ-নিশুম্ভের সঙ্গে যুদ্ধে দেবী দুর্গার ললাট থেকে ঐ সন্ধিক্ষণেই চামুণ্ডার আবির্ভাব হয়েছিল। তিনিই বধ করেছিলেন শুম্ভ ও নিশুম্ভকে।
সন্ধিপুজোয় অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভ শক্তির জয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ত্রেতাযুগে শ্রীবিষ্ণু রামচন্দ্র রূপে জন্ম নিয়েছিলেন বাসন্তী শুক্লা অষ্টমী নবমীর সন্ধিক্ষণে। আবার রামচন্দ্রের দুর্গাপুজোয় সন্ধিপুজোর ক্ষণেই দেবী স্বয়ং আবির্ভূতা হয়ে রাবণ বধের বর দিয়েছিলেন। দেবীর বরে এই সন্ধিক্ষণেই রাবণ বধ হয়েছিলেন। সেই কারণেই দুর্গাপুজোয় সন্ধিপুজোর এত গুরুত্ব।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2020: কলাবউ বলে ডাকলেও তিনি গণেশের স্ত্রী নন, তা হলে এই পুজোর তাৎপর্য কী ?
সন্ধিপুজোয় ১০৮ লাল পদ্ম উত্সর্গ করা হয় দুর্গার পায়ে। জ্বলে ওঠে ১০৮ প্রদীপ। মন্ত্রের অণুরণনে মুখরিত হয়ে ওঠে রাতের বাতাস। পটকা, দামামা, শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বাদ্যি, উলুধ্বনি, ঘন্টা সব মিলিয়ে শব্দের স্রোত যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায় চারপাশ। মন্ত্রোচ্চারণ আর ১০৮ প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে দুর্গার ঘামতেলযুক্ত মুখমন্ডল।
নবমীর শেষ দশমীতে দেবীর বিদায় নেওয়ার পালা। আবার এক বছরের জন্য দিন গোনা শুরু। দশমীর নানা রীতি রেওয়াজের মধ্যে অনেক জায়গায় আছে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথাও। যদি নীলকণ্ঠ পাখি ধরা বা কেনা-বেচা অনেকদিন ধরেই বেআইনি। তবু অনেক জায়গায় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এখনও নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর রেওয়াজ বর্তমান।
নীলকণ্ঠ শিবের আরেক নাম। সমুদ্র মন্থনের পর ওঠা ভয়ানক বিষের প্রভাব থেকে সৃষ্টিকে রক্ষা করতে সেই বিষ নিজের কণ্ঠে ধারণ করেন মহাদেব। বিষের জ্বালায় তাঁর গলায় নীলবর্ণ ধারণ করে। তাই শিবের আরেক নাম নীলকণ্ঠ। নীল বর্ণের জন্য নীলকণ্ঠ পাখিকে শিবের দোসর বলে মনে করা হয় হিন্দু ধর্মে। দশমীতে দুর্গা প্রতিমার ভাসানের আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর প্রথা চালু হয় এই বিশ্বাস থেকে যে নীলকণ্ঠ পাখি আগে কৈলাসে গিয়ে মহাদেবকে পার্বতীর আগমন বার্তা দেবে।