আরএসএস কাজ করে বেশিরভাগ হিন্দু পরিবারের অন্দরে, সে কারণেই বিদ্বেষের এমন বাড়বাড়ন্ত

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

প্রদীপ আচার্য

বিজেপি বলে বাস্তবে কিসসু হয় না। সবটা বিদ্বেষ। অথবা আরএসএস। এই বিদ্বেষ ছেড়ে দিলে দলটা পদ্ম পতাকা ছাড়া আর কিছু নয়। যদি কেউ ভাবে মোদী জমনাতেই এটা হয়েছে, তারা ভুল ভাবছে। ভাঙা গলায় টেনে টেনে কবিতা পড়া বাজপেয়ী জমানাতেও দলটা আরএসএসের ইনকিউবেটরেই ছিল। রথযাত্রার নাম করে দেশজুড়ে যে অসভ্যতা হয়েছিল, তাতে পূর্ণ সমর্থন বাজপেয়ীর ছিল। যিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি আজ ‘মার্গদর্শক’ থেকে ‘দৰ্শকে’ পরিণত হয়েছেন।

যার নেতৃত্বে বর্বরোচিতভাবে ভাবে একটি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছিল, তার নিজের অবস্থা এখন সেই ভেঙে পড়া বাবরি মসজিদের থেকেও করুণ। বাবরি মসজিদের জন্য বহু মানুষ চোখের জল ফেলেছে। হিন্দুরা তাকে রামমন্দির দাবি করে আস্ফালন করেছে। কিন্তু যিনি এই বর্বরতার হোতা, তার জন্য কেউ নেই। তিনি না বিজেপির, না আরএসএসের। তিনি আডবানী।

আরও পড়ুন: রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেনকে লক্ষ্য করে বোমা, পায়ে একাধিক স্প্লিন্টার, অস্ত্রোপচারের জন্য ভোররাতে আনা হল SSKM-এ

বাজারে ঘুরলে বহু লোক পাবেন, যারা বোঝানোর চেষ্টা করবে, যত নষ্টের গোড়া মোদী। উনিই বিদ্বেষ সম্প্রচার ও বিদ্বেষ প্রচারের জন্য দায়ী। এটা ‘ছেলে ভোলানো’ ও ‘বুড়ো ভুলানো’ কথা। এর মধ্যে কোথাও কোনও যুক্তি নেই। আরএসএসের সেদিনের ছক যা ছিল, আজও তাই আছে। সেদিন তারা সামনে খাড়া করেছিল বাজপেয়ী আডবানীকে। আজকে তারা সামনে রেখেছে শাহ ও মোদীকে। বিজেপির কোনও আদর্শ নেই। বিজেপি চলে সংঘের আদর্শে।তাদের নীতিতে। বিপ্লব দেব কিংবা দিলীপ ঘোষরা সেসব কথা বলেন,তা আসলে সংঘের ‘সংস্কারবাদী বিচার।’ বহু সংঘপন্থী আসলে এইভাবেই ভাবতে শিখেছে। আজও তাদের তেমন শিক্ষায় দেওয়া হয়।

অনেকের মনে কৌতূহল জাগতেই পারে, তাহলে সংঘ বস্তুটি কি। কেনই বা তারা আরএসএসের গুরু? এর উত্তর খুব শালীন ভাবে দিলেও নরম হিন্দুত্ববাদীরা কষ্ট পাবেন। বিশেষ করে যারা অটলজিকে মহান ভাবেন,তারা তো কষ্ট পাবেনই। সংঘ হল ব্রাহ্মণ্যবাদী একটি প্রতিষ্ঠান। হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। তারা বর্ণবাদী। গরুকে নিয়ে তারা আদিখ্যেতা করলেও দলিতের সামাজিক উন্নয়নে উন্নয়নে তাদের আজও কষ্ট। অথচ দলিতকে দরকার। সে কারণে দলিতদের তারা বিদ্বেষের প্রচারক বানানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মোদী জমানায় তারা একাজে অনেকটা সফল। একথা অস্বীকারের উপায় নেই।

মোদী জমানায় ‘অরাজনৈতিক’ আরএসএসের রাজনৈতিক সাফল্য হল, তারা দলিতদের মধ্যে মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষকে তীব্র করে তুলতে পেরেছে। অটল জমানাতেই যিনি ‘মওত কি সওদাগর’ নামে যিনি বহু মানুষের কাছে চিহ্নিত হয়েছিলেন, তিনি যে পরে অটলজির জায়গায় বসবেন, এমন আশংকা কিছু দূরদর্শী সাংবাদিক সেদিন করেছিলেন। তরুণ তেজপাল তাদের একজন। তার পরিণতি পরে কি হয়েছে, তা জানতে বাকি নেই কারও। রানা আয়ুবের গুজরাট ফাইলস পড়লে তা অনেকটা স্পষ্ট হয়ে যাবে।

সংঘ সেসব নেতাদের তৈরী করে তাদের হাতেই থাকে বিজিপির ব্যাটন। বাকি নেতারা যতই ছাগলের তৃতীয় বাচ্চার মত লাফাক, তাদের দিয়ে খেউর করানো ছাড়া বিজেপি কোনও দায়িত্ব দেয় না, দেবে না। বিজেপি করা লোকেরা ধান্দাবাজ হতে পারে। হাড়ে বজ্জাত হতে পারে। ভন্ড হতে পারে। কিন্তু আকাট মূর্খ নাও হতে পারে। কিন্তু আরএসএস করা নেতারা বিদ্বেষী এবং খানিকটা আকাট হবেন, এতে তেমন একটা সন্দেহ করা ঠিক হবে না। কিছু  ‘স্ক্র্যাপ’ নেতা, কিছু ‘বলিয়ে কোয়িয়ে’ নেতা, এবং দুর্নীতির ফুটেজ খাওয়া কিছু নেতা ধান্দাবাজির জন্য বিজেপিতে ঢুকেছে। কিন্তু আরএসএস কোনওদিন তাদের হাতে নেতৃত্ব ছেড়ে দেবে না। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে চোখ বুলিয়ে দেখলেই সব খোলসা হয়ে যাবে।

কেউ কেউ ভাবছেন, এই আরএসএস নেতাদের তো তেমন একটা দেখা যায়। হাতে গোনা কয়েকজনের খবর কেবল শোনা যায় মাত্র। তাহলে এরা কাজ করে কীভাবে? আসলে এরা হিন্দু পরিবারের ভিতরেই থাকে। এরা কারও মামা, কাকা, দাদু, মেসো ইত্যাদি। অর্থাৎ নিজেদের লোক। তারা অনেকেই নীতি ও ধর্মের কথা বলে, আসলে যে কথা তারা বলে তা হল, সব শেষ হয়ে গেল কংগ্রেসের তোষণের কারণে। কংগ্রেসের কারণে মুসলমানদের বাড়বাড়ন্ত হল, আর তাতেই হিন্দুদের যাবতীয় ক্ষতি হল।

এরা সুযোগ পেলেই বেমালুম ভুল ইসলামী ইতিহাস কপচায়। মুঘল এবং সুলতানি সাম্রাজ্যবাদের ইতিহাসকে তারা ইসলামী ইতিহাস বলে চালায়। এরা নিপাট ভালোমানুষের বেশে নতুন হিন্দু প্রজন্মকে দূষিত করে। এরা জীবনে কোনও হিন্দুকে বেদ কিংবা উপনিষদ পড়ার পরামর্শ দেয় না। গীতার আধ্যত্মিক দর্শনও এরা হিন্দুদের কাছে তুলে ধরে না। এদের ধর্ম আসলে ‘পাইরেটেড’ হিন্দু ধর্ম।  প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা তা হিন্দুদের গেলাচ্ছে। সে কারণেই ধর্ম নিরপেক্ষ দলের নেতারা বিজেপিতে ভিড় করতে পারছে। যারা শৈশব থেকেই বিদ্বেষে বড় হয়েছে, তাদের অসুবিধাই বা কোথায় ?

ধর্মের কথা বলার নাম করে এরা আপনার বাড়ির ছেলে-মেয়েদের মনে সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে নিয়মিত ভুল ও মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে। সনাতন ধর্মের নাম করে বিদ্বেষ ঢুকিয়ে দেয় সুকুমার মনে। এইভাবে বহু ঘরে আরএসএস কাজ করে। বাইরে থেকে এরা ‘দেশপ্রেমের নাটক’ করে। তাদের দেশপ্রেম মানে হিন্দুত্বের খোলসে বিদ্বেষ প্রচার। এই কাজে তারা বহু বছর ধরে মূল স্রোতের মিডিয়ার সাহায্য পেয়েছে। এই মিডিয়া চাইলে বিদ্বেষ শেষ করে দিতে পারত। কিন্তু ঘৃণ্য রাজনৈতিক জীবদের মতই এরাও তার ফায়দা নেবার চেষ্টা করেছে। ব্যবসা করেছে।

আরএসএসের সাফল্য হল, তারা বিদ্বেষকে কেবল বিজিপির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেনি। এই বিদ্বেষকে হিন্দুত্ব বলে তারা ছড়িয়ে দিতে পেরেছে এদেশের বহু মানুষের মধ্যে। এমনকি তথাকথিত ধর্ম নিরপেক্ষ দলের মধ্যে। আর সেটাই আরএসএসের সবথেকে বড় সাফল্য।

এদেশের হিন্দুরা যতদিন বিদ্বেষকে ও কুসস্কারকে ধর্ম জ্ঞান করবে, ততদিন আরএসএসের দাপট কেউ কমাতে পারবে না। ধর্ম নিরপেক্ষ বুলি কপচানো নেতা গিয়ে ভিড়বে বিজিপির পালে। আজ সেটাই হচ্ছে। তাই আরএসএসের অফিস খুঁজতে যাওয়া বোকামি। সংঘের অফিসে বহু হিন্দুর বাড়িতে। তারা যতদিন না সচেতন হচ্ছে, ততদিন বিদ্বেষের বাড়বাড়ন্ত রোখা যাবে না। রাজনৈতিকভাবে আরএসএসের মোকাবিলা সম্ভব নয়। এই সংগঠনটির মোকাবিলা একমাত্র সম্ভব সুচেতনা দিয়ে। সচেতন হিন্দু তার ভবিষ্যত প্রজন্মকে এই সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে চেষ্টা না করলে কেবল জয় শ্রীরাম স্লোগান বাতাসে ভাসবে রং হুঙ্কার রূপে। স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে ‘নাগপুরের হিন্দুত্ব।’

আরও পড়ুন: IPL 2021 Auction: শাহরুখ, মরিস, শাকিব-সহ নাইটদের নজরে কারা?

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest