সাফল্য, ব্যর্থতা ও বিতর্কের অন্য নাম মারাদোন,তাঁর বর্ণময় জীবনের এই ঘটনাগুলি জানেন?

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা মানে একটা চরিত্র। কত তর্ক কত বিতর্ক। মাঠে এবং মাঠের বাইরে। এক বর্ণময় চরিত্র। হ্যান্ড অফ গড হোক কিংবা ডোপ টেস্ট। তার সাফল্যের পিছু পিছু যেন তাড়া করে বেড়িয়েছে অনেক বিতর্কও। তবুও মারাদোনা তো মারাদোনাই। সব বিতর্কই যেন ঢাকা পড়ে গিয়েছে ওই অনাবিল হাসিতে।

নিম্নবিত্ত পরিবারে দারিদ্র ছিল শৈশবের নিত্যসঙ্গী। ঘরে অর্থাভাব থাকলেও নামের পাশে বসে গিয়েছিল সোনার ছোঁয়া। ফুটবলে অসামান্য দক্ষতার সুবাদে দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা ফ্রাঙ্কোর নাম হয়ে গিয়েছিল ‘এল পিবে দে ওরো’। স্প্যানিশ ভাষায় যার অর্থ ‘সোনার বালক’। সোনার চেয়েও উজ্জ্বল প্রতিভা পাশে ছিল আজীবন। সময়ের সঙ্গে যোগ হয়েছিল বিতর্ক এবং বর্ণ।

আরও পড়ুন: Bharat Bandh: কৃষকদের আটকাতে জলকামান -কাঁদানে গ্যাস নিয়ে তৎপর দিল্লি পুলিশ, সীমানায় সিআরপিএফ

মাত্র ১০ বছর বয়সেই তাঁর বিস্ময়কর প্রতিভা নজরে আসে স্থানীয় বিখ্যাত ক্লাব আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্সের। ১৬ বছর বয়স হওয়ার আগেই সুযোগ পান সিনিয়র দলে। সেটাও রেকর্ড। সিনিয়র ফুটবলে প্রথম মরশুমেই আর্জেন্টিনার (Argentina) বহু সমর্থকের চোখের মণি হয়ে যায় সেই কিশোর। ডাক নাম হয়ে যায় ‘ফিওরিতো’ যার অর্থ, ফুলের মতো সুন্দর।

diego maradona argentina

জীবনের সেই ওঠাপড়ায় পাশে থাকা স্ত্রী ক্লদিয়ার সঙ্গে ২০ বছরের দাম্পত্য ভেঙে গিয়েছিল ২০০৪ সালে। বিবাহ বিচ্ছেদের সময় মারাদোনা স্বীকার করেন ইটালির নাগরিক দিয়েগো সিনাগ্রার জন্মদাতাও তিনি!

ফুটবলের রাজপুত্র বরাবরই থেকেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। উত্থানের সময়ই এসেছে আবার বিতর্ক। ফুটবল রাজপুত্র হয়তো তাই কখনও ‘গুড বয়’ হতে পারেননি। রয়ে গিয়েছেন এক বিতর্কিত চরিত্রও।

মারাদোনার জীবন বদলে দেয় ১৯৮৬’র বিশ্বকাপ। বা পায়ের জাদুতে গোটা বিশ্বের মনজয় করেন দিয়েগো। খেলার মাঠে তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ মুগ্ধ করত বিপক্ষের ফুটবলারদেরও। নিমেষে ড্রিবল, ডস, জোরাল শট। দিয়েগোর পা থেকে কি না দেখেছে ফুটবলবিশ্ব। তবে সেবারের বিশ্বকাপেও বিতর্ক পিছু ছাড়েনি তাঁর। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর করা প্রথম গোলটি আজও বিখ্যাত হয়ে আছে ‘হ্যান্ড অফ গডে’র (Hand of God) জন্য।

NINTCHDBPICT000358567616

আগুয়মান গোলরক্ষক পিটার শিল্টনের মাথার উপর দিয়ে তিনি যেভাবে বিপক্ষের জালে বল জড়ান, এক নজরে পিছন থেকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে সেটি হাত দিয়ে করা। রেফারি বোঝেননি। ইতিহাসে কালজয়ী বিতর্কের সৃষ্টি করেছে মারাদোনার সেই ‘হ্যান্ড অফ গড’।

ইংল্যান্ডের ৬ জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে তাঁর করা গোল এখনও গত শতাব্দীর সেরা গোল হিসেবে বিবেচিত হয়। সেবারেই ফাইনালে ৩-২ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয় আর্জেন্টিনার। সোনার বুট পান মারাদোনা। নাম লিখিয়ে ফেলেন চিরন্তন কিংবদন্তিদের খাতায়। ২০০০ সালে পেলের সঙ্গে যৌথভাবে তাঁকে শতাব্দীর সেরা ফুটবলার হিসেবে ঘোষণা করে ফিফা (FIFA)।

দিয়েগোর জন্ম ১৯৮৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। তখন মারাদোনা-ক্লদিয়ার দাম্পত্যের বয়স ২ বছর। বড় মেয়ে ডালমার জন্ম হতে দেরি আছে আরও ১ বছর। কিন্তু ইটালীয় দিয়েগোর পিতৃত্ব বরাবর অস্বীকার করে গিয়েছেন তিনি। রাজি হননি ডিএনএ পরীক্ষাতেও।

lionel messi diego maradona 1604507732

দীর্ঘ দিনের প্রেমিকা এবং পরবর্তীতে স্ত্রী ক্লদিয়ার সঙ্গে বিয়ে ভাঙার সময় মারাদোনা স্বীকার করেন ইটালির ক্লাবে খেলার সময় স্থানীয় তরুণী ক্রিস্টিনা সিনাগ্রার সঙ্গে সম্পর্কের ফসল দিয়েগো সিনাগ্রা। বাবার নাম এবং মায়ের পদবি নিয়ে বড় হওয়া এই তরুণ নিজেও এক জন ফুটবলার। জন্মের ১৯ বছর পরে দিয়েগো সিনাগ্রা তাঁর বাবাকে প্রথম চাক্ষুষ দেখেছিলেন গল্ফের মাঠে।

বিচ্ছেদের পরেও প্রাক্তন স্ত্রী ক্লদিয়া, দুই মেয়ে ডালমা এবং জিয়ানিন্নাকে প্রায়ই দেখা গিয়েছে মারাদোনার সঙ্গে। ২০০৯ সালে জিয়ান্নিনার সন্তানই তাঁকে দাদু হওয়ার আনন্দ উপহার দেয়।

আটের দশকে ইটালিতে থাকাকালীন আরও এক বিতর্ক তাঁর সঙ্গী হয়। শোনা যায়, সে সময়েই তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তবে মাদক সেবন নাকি তিনি শুরু করেছিলেন স্পেনে, বার্সেলোনা ক্লাবের হয়ে খেলার সময়। মাদকাসক্তির প্রভাব এড়িয়ে যেতে পারেনি তাঁর কেরিয়ার। ১৯৯১ সালে মাদক সেবনের দায়ে তাঁকে ১৫ মাসের জন্য নির্বাসিত করে নাপোলি। ১৯৯৪ সালে আমেরিকায় ফুটবল বিশ্বকাপের অন্যতম অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায় নিষিদ্ধ মাদক সেবনের জন্য ফুটবলের রাজপুত্রের দেশে ফিরে যাওয়া।

maradona

১৯৯৪ সালে বুয়েনাস আইরেসে নিজের বাড়ির সামনে সাংবাদিকদের উপর গুলি চালিয়েছিলেন তিনি। তাঁর এয়ার রাইফেলের গুলিতে আহত হন ৪ জন। ঘটনার জন্য ২ বছর ১০ মাসের কারাদণ্ড নির্ধারিত হয়েছিল তাঁর জন্য। মারাদোনার অভিযোগ ছিল, সাংবাদিকরা তাঁর ব্যক্তিগত পরিসর বিঘ্নিত করছেন।

বর্ণময় কেরিয়ারে মুখোমুখি হয়েছেন আর্থিক সমস্যারও। ইটালি সরকারের অভিযোগ, সে দেশে বহু অঙ্কের কর মারাদোনা ফাঁকি দিয়েছেন।

 

Maradona Obit.0

শারীরিক বা আর্থিক কোনও সমস্যাই মারাদোনাকে বিতর্ক থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি। কলম্বিয়ার কুখ্যাত মাদক মাফিয়া পাবলো এসকোবারের সঙ্গে তিনি পার্টি করেছিলেন জেলের ভিতরেই। হাজির ছিলেন বহু সঙ্গিনীও। মারাদোনার অবশ্য দাবি ছিল, ফুটবলপ্রেমী এসকোবারের অন্য পরিচয় তিনি জানতেন না।

সব বিতর্কের কালিও যেন ফিকে হয়ে গেছে ফুটবলার মারাদোনার কাছে। এত কিছুর পরও ফুটবলবিশ্বে মারাদোনা থেকেছেন মারাদোনা হিসাবেই। তার ঈর্ষণীয় স্কিল, গোল, ফুটবল দক্ষতা এগুলোই যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। ফুটবলবিশ্বের এক নক্ষত্রের পতন। তারার দেশে ভালো থেকো আর্মান্দো। এ প্রার্থনা সারা বিশ্বের।

আরও পড়ুন: তামিলনাড়ু, পুদুচেরিতে চলছে ঝড় বৃষ্টির দাপট, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হল ‘নিভার’

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest