বিতর্কে জড়াল ভারতীয় ক্রিকেটের কিংবদন্তি শচীন তেণ্ডুলকরের (Sachin Tendulkar) নাম। রবিবারই ফাঁস হয়েছে বিতর্কিত ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’। নথিতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় ৩৫ জন বর্তমান ও প্রাক্তন রাজনৈতিক নেতা এবং ৩০০ বেশি প্রভাবশালী সরকারি উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নাম রয়েছে। আর সেই তালিকাতেই জুড়েছে শচীন তেণ্ডুলকর, তাঁর স্ত্রী অঞ্জলি তেণ্ডুলকর এবং অঞ্জলির বাবা আনন্দ মেহতার নাম। যদিও সচিনের আইনজীবির দাবি, প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের সমস্ত বিদেশি লেনদেন সম্পূর্ণ বৈধ। বিদেশে সচিন যা যা বিনিয়োগ করেছেন তার পুরো হিসেব কর কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিতর্কিত ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’-এ জানানো হয়েছে, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে Saas International Limited নামে একটি সংস্থার BOs এবং ডিরেক্টর পদে রয়েছেন শচীন, অঞ্জলিরা। ২০১৬ সাল থেকে নাকি এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত মাস্টার ব্লাস্টার। সংস্থায় ৯টি শেয়ার রয়েছে শচীনের। যার মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭ কোটি টাকা। অঞ্জলি তেণ্ডুলকরের রয়েছে ১৪টি শেয়ার। যার মূল্য ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ১১ কোটি টাকা। আর আনন্দ মেহতার শেয়ার ৫টি। তাঁর শেয়ারের মূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা। তিনি ছাড়া ভারতের ছয় রাজনীতিবিদের নামও রয়েছে সেই তালিকায়।
বিতর্কিত ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’-এ আরও অনেকের নাম রয়েছে। যেমন- জর্ডনের রাজা গোপনে ব্রিটেন ও আমেরিকায় সাত কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি কিনেছেন। লন্ডনে অফিস কেনার সময় ঘুরপথে ৩.১২ লক্ষ পাউন্ড স্ট্যাম্প ডিউটি ফাঁকি দিয়েছেন প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তাঁর স্ত্রী। দম্পত্তি সাগরপারে একটি সংস্থা কিনে ফেলেছিলেন, যাদের ওই অফিসের মালিক হিসাবে দেখানো হয়। ফাঁস হয়ে গিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মোনাকোয় গোপন সম্পত্তি, ফ্রান্সের দক্ষিনাঞ্চলে দুটি ভিলা কিনতে বেনামে একটি সংস্থায় ১২ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ গোপন করে গিয়েছেন চেক প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেজ বাবিজ। এই সপ্তাহের শেষে নির্বাচনে এই বিষয়টি অস্বস্তিতে ফেলবে বাবিজকে।
ফিনসেন ফাইলস, প্যারাডাইস পেপারস, পানামা পেপারস এবং লাক্সলিক্সের পর গত সাত বছরের মধ্যে এটি সর্বশেষ ফাঁস। দেশের কর-ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে কীভাবে বিশ্বের প্রভাবশালীরা পুরো অর্থনীতিকেই ক্ষতিগ্রস্থ করছেন, বিশ্বজনতার কাছে তুলে ধরাই ওই অভিযানের লক্ষ্য। এই ‘স্টিং অপারেশনের’ উদ্যোক্তা ইন্টারন্যাশনাল কনসর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম-এর পক্ষে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রভাবশালীদের এই করফাঁকির প্রবণতা বিশ্বে অর্থনৈতিক বৈষম্যের অন্যতম কারণ।
এর ফলে বহু শিশু পড়াশোনা, পুষ্টিযুক্ত খাবার এমনকি স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। এই ছায়া-অর্থনীতি ধনী ও প্রভাবশালীদের সুবিধা দিতে কাজ করে। বিশ্বের বিভিন্ন অংশের সাড়ে ছশোর বেশি সাংবাদিক এই বিরাট অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। গার্ডিয়ান ও আরও অনেকগুলি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে অংশ নিয়ে বিবিসি প্যানোরামার অভিযানে ১৪টি আর্থিক সংস্থার ১.২ কোটি গোপন নথি উদ্ধার হয়েছে। এই সংস্থাগুলি রয়েছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, পানামা, বেলিজ, সাইপ্রাস, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, সিঙ্গাপুর ও সুইজারল্যান্ডে। এই দেশগুলি করফাঁকির স্বর্গরাজ্য হিসাবে পরিচিত।
প্যান্ডোরা পেপার্সে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অভ্যন্তরীণ বৃত্তের সদস্যরা, যার মধ্যে ক্যাবিনেট মন্ত্রী এবং তাদের পরিবার, গোপন সংস্থা এবং ট্রাস্টের মালিক। এ ছাড়া বর্তমান এবং প্রাক্তন রাষ্ট্রনেতা এবং রাজনীতিবিদ মিলিয়ে বহু ব্যক্তির নাম রয়েছে তালিকায়। তবে সচিনের নাম প্রকাশ্যে এলেও ভারতের বাকি ছয় রাজনীতিবিদের নাম প্রকাশ্যে আসেনি।