প্রশ্নটা ছিল, ইতিহাস পালটাতে পারবে কলকাতা নাইট রাইডার্স? নাকি মরু শহরের চোরাবালিতে তলিয়ে যাবে? সেই ইতিহাস শুধু পালটানোই নয়, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে দুরমুশ হওয়ার পর রাজকীয়ভাবে প্রত্যাবর্তন করল কেকেআর। দাপটের সঙ্গে দিল্লি ক্যাপিটালসকে উড়িয়ে দিয়ে লিগ টেবিলে স্বস্তিতে থাকলেন নাইটরা।
দল দাঁড়িয়েছিল খাদের কিনারে। একটা হারে কার্যত বেজেই যেত বিদায়ঘণ্টা। শেষ চারে যাওয়ার লড়াইয়ে অন্যান্যদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়তে হত। এই পরিস্থিতিতে মহাষ্টমীর সন্ধ্যায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের পরিত্রাতা হয়ে এলেন সুনীল নারিন এবং বরুণ চক্রবর্তী। দু’জনের কাছেই রহস্য স্পিনারের তকমা। তবে এদিন গোটা টুর্নামেন্টে দুরন্ত ফর্মে থাকা দিল্লিকে হারাতে একজন ব্যাট হাতে, অপরজন বল হাতে দুরন্ত পারফর্ম করলেন।
আরও পড়ুন : ‘কেবল বিহার বিনামূল্যে করোনার টিকা পাবে, বাকি রাজ্যগুলো কি পাকিস্তান?’ প্রশ্ন শিব সেনার
নারিন করলেন ঝোড়ো ৬৪ রান। উলটোদিকে, একাই পাঁচ উইকেট নেন বরুণ চক্রবর্তী। হ্যাঁ, একসময় ক্রিকেট ছেড়ে আর্কিটেক্ট বনে যাওয়া বরুণই বলতে গেলে কেকেআর ভক্তদের মুখে হাসি ফোটানোর কারিগর। কারণ ৫৯ রানে ম্যাচ জিতে প্লে–অফের দিকে আরও এক পা বাড়াল নাইটরা।
ব্যাট-বল সবদিকে প্রাধান্য দেখিয়ে দিল্লির মতো দলকে হারাল নাইটরা।এবার বরুণ থাকায় সুনীল নারিনের উপর চাপটা কম পড়ছে। এমনকি কুলদীপের মতো স্পিনারকেও বাইরে বসে থাকতে হচ্ছে। কেন বরুণের উপর ভরসা দেখাচ্ছে ম্যানেজমেন্ট তার প্রমাণ আজ সে দিয়ে দিল। তার ৫ উইকেটে দিল্লিকে ৫৯ রানে হারাল নাইট রাইডার্স।
ম্যাচে শুরুটা কিন্তু মোটেই ভাল হয়নি নাইটদের। উইকেটে সামান্য ঘাস থাকায় দুরন্ত বল করছিল দিল্লির পেসাররা। বিশেষ করে খানিকটা বিশ্রাম নিয়ে ফেরা নর্তজে যেন আগুন ঝরাচ্ছিল। গিল ৯, ত্রিপাঠি ১৩ ও দীনেশ কার্তিক ৩ করে আউট হয়ে যায়। প্রথম দুটি উইকেট নেয় নর্তজে। কার্তিককে বিষাক্ত আউট সুইঙ্গারে আউট করে রাবাদা। ৪২ রানে ৩ উইকেট পড়ে যায় কলকাতার।
দেখে মনে হচ্ছিল মরগ্যানকেই ইনিংস ধরতে হবে। আর তখনই সবাইকে চমকে দিয়ে কয়েক ম্যাচ পরে ফেরা সুনীল নারিনকে নামিয়ে দেয় ম্যানেজমেন্ট। আর নেমে খেলার রং বদলে দেয় নারিন। অশ্বিনকে ছক্কা মেরে শুরু হয়। একের পর এক বড় শট খেলতে শুরু করে নারিন। তাকে দেখে খেলার ধরন বদলে দেয় নীতীশ রাণাও। হাত খুলে খেলা শুরু করে।
দু’জনের মধ্যে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ হয়। কোনও বোলারই তা ভাঙতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত রাবাদার বলে ৩২ বলে ৬৪ করে আউট হয় নারিন। নিজের খেলা অবশ্য চালিয়ে যায় রাণা। ৫৩ বলে ৮১ করে শেষ ওভারে আউট হয় সে। মরগ্যানও ৯ বলে ১৭ রানের ক্যামিও খেলে। আর তার ফলে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৯৪ রান তোলে নাইট রাইডার্স।
১৯৫ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই দিল্লিকে জোড়া ধাক্কা দেন প্যাট কামিন্স। প্রথম বলেই আউট করেন রাহানেকে। এরপর ব্যক্তিগত ৬ রানের মাথায় কামিন্সের বলে বোল্ড হন গত দু’ম্যাচে পরপর শতরান করা শিখর ধাওয়ান। কিন্তু পালটা লড়াই শুরু করেন ঋষভ এবং শ্রেয়স। দু’জনে মিলে দ্রুত গতিতে রানও তুলতে থাকেন। কিন্তু ব্যাট হাতে যেমন নারিন নায়ক বনেছিলেন, বল হাতে দলকে একার হাতেই জয়ের দোরগোরায় পৌঁছে দিলেন আরেক স্পিনার বরুণ চক্রবর্তী। চার ওভার বোলিংয়ের প্রথম তিন ওভারেই তুলে নিলেন পাঁচটি উইকেট। এরমধ্যে একবার হ্যাটট্রিকের সুযোগও পেয়েছিলেন। নারিনের পর কেকেআরের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে এক ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন বরুণ। শেষপর্যন্ত তাঁর বোলিং পরিসংখ্যান ৪–০–২০–৫। অন্যদিকে, দিল্লির হয়ে সর্বোচ্চ রান শ্রেয়সের। ৩৮ বলে ৪৭ রান করেন তিনি।
আরও পড়ুন : মৃত্যুর পর তাঁর সব সৃষ্টি যেন ধ্বংস করা হয়, উইল করলেন কবির সুমন