দ্রুত গতিতেই এগিয়ে চলেছে সভ্যতা। হাতের মুঠোয় চলে এসেছে প্রযুক্তি। তাই সত্তর-আশির দশকে অশ্বারোহণের প্রচলন থাকলেও, আজ তা পুরোপুরিই মুছে গেছে সমাজ থেকে। ফলত, কেবলমাত্র পুলিশ কিংবা সেনাবিভাগের আধিকারিকরা ছাড়া অশ্বারোহণের প্রশিক্ষণ নেন হাতে গোনা কিছু মানুষ। তাই অলিম্পিকের ইকোয়েস্ট্রিয়ান খেলায় এতদিন মূলত সেনা বা পুলিশরাই প্রতিনিধিত্ব করেছেন ভারতের। তবে এবার ভাঙতে চলেছে সেই প্রচলিত প্রথা। প্রথমবারের জন্য কোনো সাধারণ নাগরিক হিসাবে অলিম্পিকে ইকোয়েস্ট্রিয়ানে লড়তে চলেছেন বেঙ্গালুরুর অশ্বারোহী ফওয়াদ মির্জা।
চলতি বছরের শুরুর দিকেই তৃতীয় ভারতীয় হিসাবে অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন ফওয়াদ। যা এককথায় ঐতিহাসিকই বটে। কারণ, শেষ ২০০০ সালে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল ভারত। তার প্রায় দু’দশক পেরিয়ে যাওয়ার পর এবার ভারতকে অলিম্পিকে জায়গা করে দিলেন ফওয়াদ।
২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে অভিষেক ফওয়াদের। সে বছরই এশিয়ান গেমসে দুটি রৌপ্য পদক এনে দিয়েছিলেন তিনি ভারতকে। ৩৬ বছর পর সেটাই ছিল ইকোয়েস্ট্রিয়ানে ভারতের প্রথম পদক জয়। তাছাড়াও বিগত দু’বছরে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক এনেছেন ফওয়াদ।
Delighted that after the completion of Dressage, @FouaadMirza & Micky (as Medicott is known) is placed in the top 10 with 28.00 points. Michael Jung's impeccable showing with Chipmunk takes him to the top with 21.10. #Equestrian #Tokyo2020 @TheEmbassyGroup pic.twitter.com/jTfmJAN4RG
— Rajesh Pattu (@rpattu) July 31, 2021
আরও পড়ুন: Tokyo Olympics 2020: কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে Deepika Kumari-র অভিযান শেষ
কিন্তু এমন এক ব্যতিক্রমী ক্রীড়াক্ষেত্রকে হঠাৎ বেছে নেওয়া কেন তাঁর? বলতে গেলে, এক প্রকার পারিবারিক সূত্রেই অশ্বারোহণের এই দক্ষতা ফওয়াদের। আট প্রজন্ম ধরেই অশ্বপালন এবং অশ্বারোহণের ধারা চলে আসছে তাঁর পরিবারে। ফওয়াদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন ইরানের বাসিন্দা। উনিশ শতকের প্রথমদিকে তাঁর প্রপিতামহের পিতামহ ইরান থেকে ঘোড়ায় চড়েই সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন ভারতে। তারপর হয়ে উঠেছিলেন ভারতেরই স্থায়ী বাসিন্দা। শুধু বদলায়নি পেশাটুকু।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এখনও বেঙ্গালুরুতে তাঁদের রয়েছে দেড় একর জমির খামার বাড়ি, ১২টি ঘোড়া। ফওয়াদের ঠাকুরদা ছিলেন অশ্বারোহণ প্রশিক্ষক। তাঁর বাবা দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। অশ্বারোহণের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। খেলেছেন পোলোও। পারিবারিক সেই ধারাই অব্যাহত রাখছেন ফওয়াদ। পেশাগতভাবে ভেটেরেনারি চিকিৎসক হলেও অশ্বারোহণ এবং পোলো খেলায় আগ্রহ তাঁর ছোটো থেকেই।
ইকুয়েস্ট্রিয়ানের ড্রেসেজ ইভেন্টে নিজের ঘোড়া মিকিকে নিয়ে এ দিন প্রথম দশ জনের মধ্যে নিজের জায়গা করে নিলেন ফওয়াদ মির্জা। এই ইভেন্টে যৌথ ভাবে নবম স্থান অর্জন করলেন তিনি। ফওয়াদ মির্জা এ দিন ২৮ পয়েন্ট অর্জন করেছেন। শুক্রবার ষষ্ঠ স্থান দখল করেছিলেন। শনিবার ৬২ জনের মধ্যে নবম স্থান অর্জন করেন তিনি। তবে টোকিও অলিম্পিক্সে আসার আগে এশিয়ান গেমসেও দারুণ ফল করেছিলেন মির্জা। ১৯৮২ সালের পর এশিয়ান গেমসে এই প্রথম বার ব্যক্তিগত ইভেন্টে পদক জিতেছিলেন ফাওয়াদ মির্জা। জাম্পিং ইভেন্টে রুপো জিতে নজির গড়েছিলেন ফওয়াদ মির্জা। জাকার্তাতে অনুষ্ঠিত ২০১৮ এশিয়ান গেমসে দু’টো পদক জিতেছিলেন মির্জা।
#IND #Equestrian @FouaadMirza has changed his horse from Dajara 4 to Seigneur Medicott who helped him win two #silver medals at the 2018 Asian Games as his equine partner.
Watch him compete in Session 1 of Individual Dressage ? at 2:00 PM (IST) tomorrow.#Tokyo2020 pic.twitter.com/GwKCWNMEHW
— #Tokyo2020 for India (@Tokyo2020hi) July 29, 2021
ফওয়াদ জানাচ্ছেন, ইকোয়েস্ট্রিয়ানে সাফল্যের মূলমন্ত্র হল অশ্বের সঙ্গে অশ্বারোহীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই। নিজের পোষ্যের সঙ্গে সেই সম্পর্ক দৃঢ় করতেই দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টা ঘাম ঝরাচ্ছেন ফওয়াদ। আর তাঁর দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। সাফল্য আসতে পারে বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। আর অলিম্পিকে যদি তাঁর হাত ধরে পদক আসে, তবে তা হবে ঐতিহাসিক জয়। কেন না, এই প্রতিযোগিতা এতদিন অধরাই রয়ে গেছে ভারতের কাছে…
আরও পড়ুন: Tokyo Olympics: সেমিফাইনালেই শেষ হয়ে গেল সিন্ধুর সোনার স্বপ্ন