French Open 2021: ০-২ পিছিয়ে থেকে ৩-২ জয়, ফরাসি ওপেনে ‘জোকার’ বিপ্লব

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

৫২ বছরের পুরনো ইতিহাসকে রবিবার রাতে রোলাঁ গারোর মঞ্চে ফিরিয়ে আনলেন নোভক জোকোভিচ। এ বারের ফ্রেঞ্চ ওপেন জেতার ফলে, সব গ্র্যান্ড স্লামই অন্তত দু’বার করে জিতে ফেললেন জোকার। এতদিন এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন শুধুমাত্র রয় এমার্সন এবং রড লেভার। সেই রেকর্ডই রবিবার রাতে স্পর্শ করলেন জোকার। ১৯৬৯ সালে রড লেভার শেষ বার এই রেকর্ড করেছিলেন। তার পরে ফের ২০২১ সালে এই রেকর্ড করলেন জোকোভিচ।

এ দিন গ্রিসের তরুণ তুর্কি  স্টিফানোস চিচিপাসের সঙ্গে জোকোভিচের ফ্রেঞ্চ ওপেন ফাইনালের লড়াইটা আদৌ জমবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় ছিল টেনিসপ্রেমীদের মধ্যে। কিন্তু জোকোভিচ বনাম স্টিফানোস চিচিপাসের দুরন্ত লড়াই দেখে মন ভরে গিয়েছে প্রত্যেকের। অসাধারণ লড়লেন চিচিপাস। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। অভিজ্ঞতার কাছেই মূলত হার মানলেন গ্রিসের তারকা প্লেয়ার। প্রথম গ্রিক টেনিস খেলোয়াড় হিসেবে ফরাসি ওপেন জেতার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল চিচিপাসের।

জয়ের পর অনেকেই দাবি করতে শুরু করেছেন, জোকোভিচই সর্বকালের সেরা টেনিস খেলোয়াড়। সত্যিই তাই কি না, সেটা সময়ই বলবে। তবে রবিবার ফিলিপ শাঁতিয়ের কোর্টে যে অনবদ্য টেনিস সার্বিয়ার খেলোয়াড় উপহার দিলেন, তা নিঃসন্দেহে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে। একই প্রতিযোগিতায় দু’বার অবিস্মরণীয় প্রত্যাবর্তন দেখা গেল জোকোভিচের থেকে। এই নিয়ে ১৯টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম হল জোকোভিচের। রজার ফেডেরার এবং রাফায়েল নাদালের থেকে মাত্র একটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম পিছিয়ে তিনি।

চিচিপাস যে সহজে ছেড়ে দেবেন না, সেটা বোঝা যাচ্ছিল প্রথম সেট থেকেই। অভিজ্ঞতায় তাঁর থেকে অনেক এগিয়ে থাকা জোকোভিচের বিরুদ্ধে প্রাণপাত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। অথচ শুরুটা হয়েছিল খারাপ ভাবেই। জোকোভিচ প্রথম পয়েন্ট পেলেন চিচিপাসের ডাবল ফল্টের সৌজন্যে। প্রথম সেটে যে যাঁর মতো নিজের সার্ভ ধরে রাখছিলেন। দ্বিতীয় সেটে দু’বার জোকোভিচের সার্ভিস ভাঙলেন চিচিপাস। কার্যত দাঁড়াতেই দিলেন না সার্বিয়ার খেলোয়াড়কে।

আরও পড়ুন: French Open 2021: স্বপ্নভঙ্গ নাদালের, রোলাঁ গারোর সেমিতে প্রথম বার জোকোভিচের কাছে হারলেন

ম্যাচ হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই নিজের তুরপূণ থেকে সেরা অস্ত্রগুলি বের করতে থাকলেন জোকোভিচ। প্রথম দুই সেট জিতে আত্মবিশ্বাসে ফুটতে থাকা চিচিপাসকে লম্বা র‌্যালি খেলিয়ে ধীরে ধীরে ক্লান্ত করে দিতে থাকলেন। ফোরহ্যান্ড, একহাতে ব্যাকহ্যান্ড, ড্রপ শট— সব ধরনের শটই বেরিয়েছে চিচিপাসের র‌্যাকেট থেকে। কিন্তু জোকোভিচের কাছে সবেরই উত্তর ছিল। এমন কিছু রিটার্ন দিলেন তিনি, যা দেখে ধারাভাষ্যকাররা পর্যন্ত বলে উঠলেন, “মনে হচ্ছে অন্য গ্রহের টেনিস দেখছি।”

তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে কার্যত আত্মসমর্পণ করার পর পঞ্চম তথা নির্ণায়ক সেটে কিছুটা প্রতিরোধ দেখা গেল চিচিপাসের থেকে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। রক্তের স্বাদ পেয়ে গিয়েছিলেন জোকোভিচ। ট্রফি হারাতে চাননি, হারানওনি। খেলতে নেমেছিলেন সাদা জার্সি পরে। কিন্তু তৃতীয় সেট থেকে জার্সির রং বদলে গেল লালে, যে রংয়ের জার্সিতে নাদালকে হারিয়েছিলেন তিনি। পয়া জার্সিই কি তবে ট্রফি এনে দিল জোকোভিচকে?

শেষ ম্যাচ পয়েন্টটা পকেটে পুরে ডানহাতকে মুষ্টিবদ্ধ করে একবার খুব জোরে হুঙ্কার দিয়েছিলেন। ব্যস ওটাই ছিল ওঁর উল্লাস। বাকি সময়টা শান্ত মনে হাসিমুখে বসে থেকে এমন ঐতিহাসিক মুহূর্তকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলেন নোভাক জোকোভিচ। আর হবে নাই বা কেন! দুবার ফরাসি ওপেন জয়। ৫২ বছরের ইতিহাস স্পর্শ করে ১৯তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়। তবে এমন জয় পেয়েও প্রতিপক্ষ ২২ বছরের স্টেফানোস চিচিপাস ও তাঁর দেশ গ্রীসকে সম্মানে ভরিয়ে দিলেন সার্বিয়ার এই তারকা। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জোকারের মুখে শুধুই ‘স্তেফানোস’।

জোকোভিচ বলেন, “বিয়ন বর্গ ও জিম কুরিয়ারের মতো মানুষের কাছ থেকে এই পুরস্কার নিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। কারণ এঁরাই তো আমাদের প্রিয় টেনিসকে সবার কাছে নিয়ে এসেছিলেন। তবে এখন শুধু চিসিপাসকে নিয়ে কথা বলতে চাই। আমি ওর মানসিক অবস্থা বেশ বুঝতে পারছি। কারণ আমিও এমন কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে জয়ের খুব কাছে গিয়ে হেরে যাওয়া ও সেই হারকে মেনে নেওয়া খুব কঠিন। তবে এই হার কিন্তু ওকে ভবিষ্যতে শিক্ষা দেবে। আশা করি চিসিপাস ও ওর টিম এই হার থেকে শিক্ষা নেবে। আমি নিশ্চিত ও ভবিষ্যতে আরও অনেক গ্র্যান্ডস্ল্যাম জিতবে।”

হাসিমুখে বললেন, “গ্রীস থেকে আসা ভাই-বোনদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। সার্বিয়ার সঙ্গে তোমাদের দেশের সম্পর্ক খুব ভাল। শুধু তাই নয়, তোমাদের দেশ থেকে চিসিপাস ও মারিয়া সাক্কারির মতো প্রতিভা উঠে আসছে। সেটা টেনিস বিশ্বের কাছে দারুণ খুশির খবর।” শেষে তিনি বললেন, “সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমাকে ও চিসিপাসকে সমানতালে আপনারা ভরসা জুগিয়ে গিয়েছেন। আমি এই ৪৮ ঘণ্টা জীবনে ভুলতে পারব না। প্রথমে নাদাল আর এ বার চিসিপাস, এমন ম্যাচের স্মৃতি সম্বল করেই এগিয়ে যাব।”

আরও পড়ুন: করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন মিলখা সিং-এর স্ত্রী নির্মল কাউর

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest