দুই উইকেটকিপার-অধিনায়কের লড়াই ছিল। দু’জনেই দুরন্ত ব্যাট করলেন। একজন শতরানের কাছাকাছি গিয়ে আউট হয়ে গেলেন তো অন্য জন শতরান করেই ফেললেন। শেষে কেএল রাহুলের পঞ্জাব কিংসের কাছে হেরে গেল সঞ্জু স্যামসনের রাজস্থান রয়্যালস।
রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে এ দিন অভিষেক করলেন দুই বোলার, সৌরাষ্ট্রের চেতন সাকারিয়া এবং বাংলাদেশের মুস্তাফিজুর রহমান। দুই বাঁ হাতি বোলারই প্রথম দিকে কিছুটা চাপে রেখেছিলেন রাহুল এবং পঞ্জাবের অপর ওপেনার ময়াঙ্ক অগ্রবালকে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যে অফফর্মের কবলে ময়াঙ্ক পড়েছিলেন, এ দিনও সেখান থেকে বেরোতে পারেননি। তাই তৃতীয় ওভারেই আউট হয়ে যান তিনি।
পঞ্জাবে এসে নতুন জীবন পেয়েছেন ক্রিস গেল। ওপেনারের বদলে তিনি এখন তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন। এ দিনও সেটাই হল। আর শুরু থেকেই বেশ আগ্রাসী ছিলেন তিনি। ৪০ রানের দুরন্ত একটি ইনিংস খেলে ড্রেসিং রুমে যখন গেল ফিরে যান ততক্ষণে তাঁর স্ট্রাইক রেট পৌঁছে গিয়েছে ১৪২-এ। তাঁর এই সংক্ষিপ্ত ইনিংসটি চারটে চার এবং দু’টি ছয়ে সাজানো ছিল।
তবে এ দিন সব নজর কেড়ে নিয়েছেন দীপক হুডা। হরিয়ানার এই মারকুটে ব্যাটসম্যান আইপিএলের ময়দানে মাঝেমধ্যেই জ্বলে ওঠেন। তবে এ দিন তিনি যা খেললেন, সেই রকম খেলতে আগে খুব একটা দেখা যায়নি। শুরু থেকেই রাজস্থানের বোলারদের মাথায় চেপে বসেছিলেন তিনি। একের পর এক ছক্কা হাঁকিয়ে বিপক্ষের ছন্দটাই নষ্ট করে দেন তিনি। কার্যত কোনো সময় না নিয়েই অর্ধশতরান পূর্ণ করে ফেলেন তিনি।
তাঁর ৬৪ রানের ইনিংসটি এসেছে মাত্র ২৮ বলে। স্ট্রাইক রেট ছিল ২২৮। চলতি আইপিএলের দ্রুততম পঞ্চাশ রানের মালিকও হয়ে গেলেন হুডা। তাঁর আউট হয়ে যাওয়ার পর নজর ছিল রাহুলের ওপরে, আরও একটা শতরান তিনি করতে পারেন কি না, সেটাই ছিল দেখার। কিন্তু অল্পের জন্য তা হয়নি। শতরান থেকে নয় রান দূরে থেকেই শেষ ওভারে আউট হয়ে যান রাহুল।
একেই পাহাড়প্রমাণ রান, তার পর বিপক্ষের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপ, রাজস্থানের পক্ষে রানটা তারা করা খুবই চাপের ছিল। সবার নজর ছিল মহম্মদ শামির ওপরে। সুস্থ হয়ে ফিরে সেই শামিই কিন্তু রাজস্থানকে প্রথম ধাক্কাটা দেন। প্রথম ওভারেই ওপেনার বেন স্টোক্সকে ফিরিয়ে দেন তিনি।
রাজস্থান কিন্তু রান তাড়া করার চেষ্টা করেই যাচ্ছিল। শুরু থেকেই দলের রানের গতি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মনন ভোহরা। অন্যদিকে, অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসনও ধীরে ধীরে নিজের ছন্দে আসছিলেন। তিনি তারা উইকেটও হারিয়ে ফেলছিল বার বার।
আরও পড়ুন: আট মাসের গর্ভবতী হয়ে তাইকোন্ডোয় সোনা, আমিনাত ইদ্রিসকে কুর্নিশ নেটদুনিয়ার
অষ্টম ওভারের মধ্যে তিনটে উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা। যদিও তখনও রানরেট ছিল দশে। এখান থেকে ম্যাচে ফিরে আসার চেষ্টা করতে শুরু করে রাজস্থান। স্যামসন তো ছিলনই, সেই সঙ্গে রানের গতি বাড়াতে শুরু করেন শিবম দুবেই। দুবে এবং স্যামসনের মধ্যে দুরন্ত একটি জুটি শেষ হয় ১৩তম ওভারে। ততক্ষণে অর্ধশতরান পেরিয়ে গিয়েছেন স্যামসন।
১৪ ওভারের পর থেকে ম্যাচের রাশ পুরোপুরি নিজেদের দিকে নিয়ে চলে আসেন রাজস্থান। ক্রিজে ততক্ষণে জমে গিয়েছেন স্যামসন। কিন্তু ছয় নম্বর নামা অসমের রিয়ান পরাগ পর পর ছক্কা মেরে ম্যাচের পরিস্থিতি রাজস্থানের জন্য অনেকটাই শহর করে দেন। ১৭তম ওভার যখন শুরু হচ্ছে তখন রাজস্থানের দরকার ৪৮, আহামরি কিন্তু বেশি নয়। তবে ওই ওভারের দ্বিতীয় বলেই পরাগকে ফিরিয়ে দিয়ে পঞ্জাবকে ফের ম্যাচে নিয়ে আসেন শামি।
যদিও স্যামসনের দাপটের কাছে পঞ্জাবের বোলাররা ম্লান হয়ে যাচ্ছিলেন। ১৮তম ওভারে স্যামসন যখন শতরান করেন, রাজস্থানের তখন দরকার ১৫ বলে ২৬। পরিস্থিতি অনেকটাই সহজ হয়ে এসেছে তাদের জন্য। কিন্তু এখানে কিছুটা চাপা বোলিং করে পঞ্জাব। এর ফলে শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজনীয়তা এসে দাঁড়ায় ১৩ রানে।
অর্শদীপ সিংহ বল করতে আসেন প্রথম তিনটে বলে মাত্র ২ রান দিলেও চতুর্থ বলেই তাঁকে ছক্কা হাঁকিয়ে দেন স্যামসন। কিন্তু দলকে বৈতরণী পার করিয়ে দিতে পারেননি তিনি। লক্ষ্যামাত্রার থেকে চার রান দূরেই থেমেই গেল রাজস্থান।
আরও পড়ুন: RR vs PBKS: প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে IPL-এ ছক্কার এভারেস্টে ক্রিস গেইল