বৃহস্পতিবার ১৪৮টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি (BJP)। নয়া প্রার্থীদের নাম সামনে আসতেই দলের প্রতি ক্ষোভ, অসন্তোষের আগুন। কোথাও রাস্তা অবরোধ, কোথাও দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর, আবার কোথাও দলীয় দফতরের সামনে ধরনা। উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ, বিভিন্ন জায়গায় এদিন সন্ধ্যা থেকে দেখা যাচ্ছে সেই ছবি। জলপাইগুড়ি সদরের প্রার্থী বদলের দাবিতে জেলার কার্যালয়ে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা। রাস্তায় আগুন ধরিয়ে স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে স্লোগান তোলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে র্যাফ নামাতে হয়।
দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হিসাবে বৃহস্পতিবারই নাম ঘোষণা করা হয় অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরীর। যিনি ২০১১ সালে আসানসোল দক্ষিণ কেন্দ্রের প্রার্থী ছিলেন। এরপর বিজেপির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে যোগ দেন তৃণমূলে। যদিও শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছাড়ার পর পরই বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে যেদিন যান, সেখানে উপস্থিত ছিলেন দীপ্তাংশুও। এর পর একে একে দলীয় সমস্ত পদ থেকেই সরে দাঁড়ান। ঘাসফুলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে যোগ দেন বিজেপিতে।
দুর্গাপুরের আদি বিজেপিদের অভিযোগ, দু’ মাস ঘুরতে না ঘুরতেই তার ‘পুরস্কার’ দেওয়া হল দীপ্তাংশুকে। তবে তাঁরা যে তা মেনে নেবেন না তার হুঁশিয়ারিও দেন। ‘নব্য বিজেপি’ দীপ্তাংশু চৌধুরীর নাম দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরই বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন পুরনো বিজেপির কর্মীরা।
আরও পড়ুন: ‘বিশ্বভারতী বন্ধ করার ব্যবস্থা করে দিয়ে যাব’, হুমকি দিয়ে ফের বিতর্কে উপাচার্য
দুর্গাপুরের বিদ্যাসাগর অ্যাভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। দল যদি দীপ্তাংশুকে প্রার্থী পদ থেকে না সরায়, পুরনো বিজেপির কাউকে প্রার্থী হিসাবে নাম না ঘোষণা করে, তবে নির্দল প্রার্থীও দেওয়া হবে বলে জানান বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, “দীপ্তাংশুর কোনও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি নেই। একবার বিজেপিতে আসেন। একবার তৃণমূলে যান। দলবদলু দীপ্তাংশু চৌধুরীকে মানছি না, মানবো না।”
জলপাইগুড়ির সদর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হয় আইনজীবী সৌজিৎ সিনহার নাম। এরপরই প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশ। উত্তাল হয়ে ওঠে শহর। ডিভিসি রোড এলাকায় বিজেপির যে দলীয় কার্যালয়, সেখানে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগেরও অভিযোগ ওঠে।
ঘটনায় বিজেপি কিসান মোর্চার প্রাক্তন জেলা সভাপতি নবেন্দু সরকার বলেন, “জলপাইগুড়ি শহরে নতুন একটি সিমেন্ট কারখানা থেকে কোটি টাকা নিয়ে এই আসনকে তৃণমূলের হাতে বিক্রি করে দিয়েছেন বিজেপির জেলা সভাপতি বাপি গোস্বামী।” বিজেপি নেতা কানন রায়ের অভিযোগ, “পুরনো বিজেপি নেতা কর্মীদের প্রার্থী না করে নতুন একজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। এমনটা কিছুতেই মেনে নেব না আমরা। আমরা চাইছি আমাদের পুরনো নেতা দীপেন প্রামাণিককে জলপাইগুড়ি সদর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হোক। তা না হলে লাগাতার আন্দোলন করব আমরা।”
দুর্নীতিপরায়ণ নেতাকে প্রার্থী করা হয়েছে মোটা টাকার বিনিময়ে। আবার কাস্ট সার্টিফিকেট জাল করেও প্রার্থী হওয়ার অভিযোগ ঘিরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সরগরম মালদহ। হরিশচন্দ্রপুরে বিজেপি কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়। অভিযোগ, বিজেপির পুরনো কর্মীরাই এই ভাঙচুর চালান।
পুরাতন মালদহের সাহাপুরে বিজেপির কার্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ দেখান দলেরই একাংশ। প্রার্থী পরিবর্তন করার দাবিতে দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর শুরু করেন বিজেপি কর্মীরা। পাশাপাশি মালদহের নালাগোলা রাজ্য সড়কের উপর আগুন জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ চলতে থাকে। কর্মী সমর্থকদের দাবি, মালদহ কেন্দ্রে গোপাল সাহা প্রার্থী হয়েছেন। তিনি একজন দুর্নীতিপরায়ণ।
আরও পড়ুন: বেহালা পশ্চিমে শ্রাবন্তী, ভবানীপুরে রুদ্রনীল,বরাহনগরে পার্নো, দেখুন- বিজেপির তারকা প্রার্থী তালিকা…