হলদিয়ার মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে মনোনয়ন জমা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে রয়েছেন দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং স্মৃতি ইরানি। শুক্রবার সকাল থেকেই নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে নন্দীগ্রাম জুড়ে ছিল টানটান উত্তেজনা। সকাল ৯টায় তিনি সোনাচূড়ার সিংহবাহিনীর মন্দিরে পুজো দেন। তার পর সেখান থেকে যান জানকী নাথ মন্দিরে। সেখানে যজ্ঞও করেন তিনি। এর পর সোজা হলদিয়ায় যান শুভেন্দু।
তাঁর মনোনয়নকে কেন্দ্র করে হলদিয়া জুড়ে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। বিজেপি-র বহু কর্মী সমর্থক আগে থেকেই হলদিয়ায় হাজির হন শুভেন্দুকে স্বাগত জানানোর জন্য। সেখানে অল্প সময়ের জন্য একটি সভাও করেন তিনি। মঞ্চে হাজির ছিলেন ধর্মেন্দ্র এবং স্মৃতি। শুভেন্দুকে ‘বাংলার বাঘ’ বলে উল্লেখ করেন ধর্মেন্দ্র। জোর গলায় তিনি বলেন, “২ মে-র পর রাজ্যে বিজেপি-র সরকার ক্ষমতায় আসছে।”
এর পরই মঞ্চে বক্তৃতা করেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, “নন্দীগ্রাম শুধুমাত্র একটি বিধানসভা কেন্দ্র নয়, এর সঙ্গে বাংলা ১১ বছরের পরিবর্তনও যুক্ত রয়েছে। বিজেপি-তে কেন এসেছেন শুক্রবার সেই প্রসঙ্গও ফের তুলে ধরেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, তৃণমূল একটা প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীতে পরিণত হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা পশ্চিমবঙ্গে শেষ হয়ে গিয়েছে। এই দলের নেত্রী ও তাঁর ভাইপোই সব। বাকি সবাই ল্যাম্পপোস্ট। এর থেকে রাজ্যকে উদ্ধারের কাজে নেমেছি।” শুভেন্দুর অভিযোগ, কৃষকদের অবস্থাও ভয়াবহ। পিএম কিষাণ নিধি দিয়েছে কেন্দ্র। যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর নাম লেখা রয়েছে সে জন্য এই সরকার তা চালু করতে দেওয়া হয়নি। তাঁর কথায় আয়ুষ্মান ভারতের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে।
আরও পড়ুন: মমতা-বক্তব্য নিয়ে আপত্তি কংগ্রেসের, লোকসভার নেতার পদ থেকে অধীরকে অব্যাহতি
শুভেন্দুর মনোনয়নের জন্য হলদিয়ায় প্রচুর কর্মী সমর্থক হাজির হয়েছিলেন। সভা শেষে হলদিয়ার ক্ষুদিরাম মোড় থেকে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিতে যান শুভেন্দু। আগামী ২০ মার্চ কাঁথিতে সভা করতে আসবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ ছাড়াও অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথও পূর্ব মেদিনীপুরে প্রচারে আসবেন বলে বিজেপি সূত্রে খবর। তবে দলের তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েক জানিয়েছেন, অমিত শাহ ও যোগী আদিত্যনাথ নন্দীগ্রামে সভার দিন ক্ষণ এখনও নির্দিষ্ট হয়নি।
অন্যদিকে, নন্দীগ্রামেরই ভোটার হলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari In Nandigram)। তিনি এতদিন হলদিয়ার ভোটার ছিলেন। কিন্তু এবার নন্দীগ্রামে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামের ভোটার হিসাবেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। নন্দীগ্রামে তাঁর বুথ নন্দনায়কবাড় প্রাইমারি স্কুল।
উল্লেখ্য, গত বুধবারই নন্দীগ্রামে মেগা রোড শো করেন শুভেন্দু। সেদিনই কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি নন্দীগ্রামের ভোটার হয়েছি, জানেন তো।” এরপরই রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে শুভেন্দু বলেন, “ভোটের আগের দিন রাতে এসে থাকব। কোথায় মোটর সাইকেল বেরোয় দেখব। ট্যা ফুঁ করতে দেব না। মাথায় টিকা কেটে ভোর পাঁচটায় বেরবো। বুথে বুথে যাব, আমার মুখ দেখে কোথায় ভোট দেয়, আমি দেখব।”
এ বার রাজ্যের নির্বাচনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে গিয়েছে নন্দীগ্রাম। এক দিকে মমতা, অন্য দিকে শুভেন্দু। এই দুই প্রতিপক্ষের লড়াইটাই যেন গোটা নির্বাচনের আকর্ষণকেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক জনের গড় রক্ষার লড়াই, তো আর এক জনের সম্মান। মনোনয়ন জমা দেওয়া আগে নন্দীগ্রামে সভা করেছিলেন মমতা। সেই জনসভা থেকে ফের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি। বুধবার মনোনয়ন জমা দিতে গিয়েছিলেন মমতা। তার আগে তিনিও বেশ কয়েকটি মন্দিরে পুজো দেন। তার মধ্যে ছিল সোনাচূড়ার সিংহবাহিনী মন্দির এবং জানকিনাথ মন্দিরও। এ বার সেই মন্দিরেই পুজো দিয়েই মনোনয়ন জমা দিলেন শুভেন্দু।
আরও পড়ুন: শনিবার থেকেই ফের প্রচারে, পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধেই ভোটের ময়দানে ‘স্ট্রিট ফাইটার’ মমতা