অমিত শাহের (Amit Shah) বিশ্বভারতী পরিদর্শন সম্পূর্ণভাবে ‘অরাজনৈতিক’ রাখতে চেয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তাই শাহ ছাড়া কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের প্রবেশাধিকার থাকবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ভিন্ন ছবি। শাহের সঙ্গেই বিশ্বভারতীতে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়লেন রাহুল সিনহা, মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়। উপাসনাগৃহ পর্যন্ত চলে যান তাঁরা।
এদিন শাহ সঙ্গীতভবনে শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলেন। তখনও সঙ্গে ছিলেন মুকুল-কৈলাশরা। শাহকে বরণ করে নেওয়া হয়। বিশ্বভারতীর তরফে দেওয়া হয় মা দুর্গার ফটো ফ্রেম, একতারা, বোলপুরের ঐতিহ্যবাহী স্মারক, রবি ঠাকুরের ফোটোফ্রেম , বিশ্বভারতীর ইতিহাসের বই।
Visited the iconic Sangeet Bhawan of Visva Bharati University, Shantiniketan.
The aura of Gurudev Tagore is still very much here. We are committed to fulfill Gurudev Tagore’s dream and restore the lost glory of Bengal. pic.twitter.com/bljZmklfuO
— Amit Shah (@AmitShah) December 20, 2020
এবার বিশ্বভারতীতে রাজনৈতিক নেতাদের প্রবেশাধিকারে ‘নিষেধাজ্ঞা’র পিছনে কাজ করেছিল ২০১৮ সালে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ‘আচার্য বনাম প্রধানমন্ত্রী’র ভূমিকা। সেবার যা যা বিতর্ক উঠেছিল, তা এবার মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেবার বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠান ছিল বহুচর্চিত। সেদিন নরেন্দ্র মোদীর ‘লক্ষ্য আর উপলক্ষ’ নিয়ে তৈরি হয়েছিল একাধিক মত। আচার্য নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রাক্তন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদী সেদিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে রবিঠাকুরের শান্তিনিকেতন নিয়ে কথা বলেছিলেন, তবে তাঁর বক্তৃতার সিংহভাগেই ছিল অনান্য প্রসঙ্গ। যার সঙ্গে শান্তিনিকেতনের যোগ নেই। সেদিন সমাবর্তন স্থলে উঠেছিল ‘মোদী মোদী’ ধ্বনি, ‘জয় শ্রী রাম’ নিনাদ, বাদ যায়নি সিটি বাজানোও।
আরও পড়ুন: ‘ নতুন চেতনা পেলাম’, বিবেকানন্দের জন্মভিটে থেকে বার্তা শাহ-র, আনলেন ‘ভারতমাতা’র প্রসঙ্গ
প্রশ্ন উঠেছিল, আচার্য নন, একজন বিজেপি নেতা হিসাবেই কি মঞ্চে দাঁড়িয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী? কারণ যখন জয় শ্রী রাম কিংবা মোদী মোদী ধ্বনি ওঠে, তাঁকে তখন হাত নাড়িয়ে স্লোগানকারীদের প্রত্যুত্তরও দিতে দেখা যায়। এমনকি সেদিন সভামঞ্চের বাঁদিকে আলো করে বসে থাকতে দেখা যায় একঝাঁক বিজেপি নেতাকেও। বিতর্কে উত্তাল হয়ে ওঠে শান্তিনিকেতন প্রাঙ্গন। বিশ্বভারতীর গণ্ডি পেরিয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাংলায়। এবার এহেন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবারও অমিত শাহর সঙ্গেই বিশ্বভারতীতে ঢুকে পড়লেন রাজনৈতিক নেতারা। যদিও কোনও বিতর্কিত বিষয় ঘটেনি।
অন্যদিকে, এদিন বিশ্বভারতীতে এসে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রবিবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে উপাসনা গৃহ ঘুরে দেখেন তিনি। সেখান থেকে যান উত্তরায়নে। সঙ্গীত ভবনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের মাধ্যমে বরণ করা হয় তাঁকে। এর পরই তিনি যান শান্তিনিকেতনের বাংলাদেশ ভবনে।
শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র ভবনে ভারতের অন্যতম খ্যাতনামা দার্শনিক কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করলাম। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কবিগুরু 'র অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং তাঁর চিন্তাভাবনা আমাদের আগামী প্রজন্মকে সর্বদাই অনুপ্রাণিত করবে। pic.twitter.com/fgs8sRiCgO
— Amit Shah (@AmitShah) December 20, 2020
বাংলাদেশ ভবন থেকে বেরিয়ে এদিন সংবাদমাধ্যমকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘এই দিন আমার কাছে অনেক সৌভাগ্যের। আজ আমি বিশ্বভারতীতে এসে এমন এক মহামানবকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছি যিনি সারা পৃথিবীতে ভারতীয় জ্ঞান, দর্শন, কলা, সাহিত্যর পরিসর আরও মজবুত করেছেন।’ অমিত শাহের মতে, ‘স্বাধীনতার প্রাক্কালে রাষ্ট্রবাদের দুই ধারা মহাত্মা গান্ধী ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু— দু’জনেরই অনুপ্রেরণা ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতীয় ভাষা, সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।’
আরও পড়ুন: ভাত-ডাল-আলুপোস্ত…আজ বাউল-বাড়িতে শাহের পাতে আর কী কী থাকবে?