শুক্রবার সাতসকালে ডিভিসির সেচখালের জল থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার হল সন্দীপ দলুইয়ের (৯) নিথর দেহ। বুধবার গলসির সাঁকো গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য বুদ্ধদেব দলুইয়ের ৯ বছরের শিশুপুত্র সন্দীপকে অপহরণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। সাত লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল তারা। কিন্তু দিনমজুর পরিবার সেই দাবি মেটাতে পারেনি। তারপরেই শুক্রবার দেহ উদ্ধার হল এই শিশুর।
অপহরণ ও খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে গলসি থানার পুলিশ স্থানীয় সাঁকো মেটেপাড়া এলাকার তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম সুব্রত মাঝি ওরফে বাদশা, জয়ন্ত বাগ ওরফে নিরঞ্জন, এবং মঙ্গলদীপ দলুই ওরফে বাবু। বাদশার বাড়ি সাঁকো ডোমপাড়ায়। অন্য দু’জনের বাড়ি সাঁকোর মেটেপাড়ায়। সন্দীপের দেহ উদ্ধারের পরেই ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা অভিযুক্তদের বাড়িতে হামলা চালায়। ভাঙচুর করা হয় বাড়িঘর। তীব্র উত্তেজনা থাকায় এলাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ‘বাজল তোমার আলোর বেণু…’, গান গেয়ে মহালয়ায় দেবী দুর্গাকে শারদ অর্ঘ্য মুখ্যমন্ত্রীর
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার রাতে। ওইদিন গ্রামের মনসাপুজোর প্রস্তুতি দেখতে গিয়েছিল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য বুদ্ধদেব দলুই ৯ বছরের ছেলে। রাত সাড়ে ৮ টায় পরিবারের লোক জানতে পারেন ওই কিশোরকে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরই বুদ্ধদেববাবুর কাছে ফোন যায়। জিজ্ঞেস করা হয়, ছেলের খোঁজ পেয়েছে কি না। এরপরই ফোন কেটে দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর ফের ফোন করে জানানো হয়, ছেলেকে ফিরে পেতে চাইলে ৭ লক্ষ টাকা দিতে হবে। এরপর বেশ কয়েকবার ফোন যায় বু্দ্ধদেববাবুর কাছে। তিনি জানান, “আমার কাছে ৫ লক্ষ টাকা দাবি করে দ্বিতীয়বার ফোনে। এত টাকা আমি কোথায় পাব, একথা বলি। জানাই, আমার কাছে কানাকড়িও নেই। তা শুনতে নারাজ ওরা। বলে পুলিশ বা সংবাদমাধ্যমকে জানালে ছেলেকে খুন করে দেবে। গালিগালাজও করতে থাকে আমায়।” কোথায় টাকা দিতে হবে পরে ফোন করে জানাবে বলে অপহরণকারীরা।
টাকা দেওয়া পেশায় খেতমজুর বুদ্ধদেববাবুর পক্ষে অসম্ভব ছিল। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী মারফত ঘটনার খবর যায় পুলিশের কাছে। শুরু হয় তদন্ত। এরপরই শুক্রবার ভোরে গ্রামের বাইরের এক ঝোপে মেলে ওই নাবালকের দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, কিশোরকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে এখনও তাঁরা নিশ্চিত নন। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট মিলতেই গোটা বিষয় স্পষ্ট হবে। কিন্তু কী কারণে এই নৃশংসতা? রাজনৈতিক মতবিরোধ? টাকা আদায়ের চেষ্টা নাকি নেপথ্যে লুকিয়ে পুরনো শত্রুতা, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
আরও পড়ুন: ফ্যাশন দুনিয়ায় নক্ষত্রপতন, শৌচাগারে মিলল বিশ্বখ্যাত ডিজাইনারের শর্বরী দত্তের দেহ