তিনি নিজে বেসুরো হলেও তাঁর ফেসবুক কভার ছবিতে এখনও সজ্জিত তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। সঙ্গে লেখা, ‘বাংলার গর্ব মমতা’। বিগত কয়েক মাস ধরেই নানা কারণে শিরোনামে উঠে আসা বেসুরো মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee) কথা মতো ঠিক ৩টের সময় এলেন ফেসবুক লাইভে।
যে ‘ঘোষণা’ হতে চলেছে বলে অনেকে ভেবেছিলেন, তা নিয়ে মুখ খুললেন না। তবে সেই সম্ভাবনা উড়িয়েও দিলেন না বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং জানালেন, আপাতত তাঁর ‘ধৈর্যচ্যুতি’ ঘটেনি। এখনও ‘ধৈর্য’ ধরে আছেন। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, ‘ধৈর্য’ ভাঙলে কি তাহলে তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়বেন রাজীব? তার আগে কি মিটমাটের পথও খোলা রাখলেন?
শনিবার ফেসবুক লাইভে রাজীব কী বলেন, তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। ‘বড়সড়’ কিছু ঘোষণা করতে পারেন বলে ছড়িয়েছিল গুঞ্জন। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের তরফেও যে ‘খারাপ’ কিছুর আশঙ্কা করা হয়নি, তা নয়। যদিও ৩৪ মিনিটের ২৩ সেকেন্ডে কোনও রহস্য ভাঙলেন না রাজীব। দলের একটি অংশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করলেও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার যে জল্পনা ছড়িয়েছে, তা নিয়েও কোনও মন্তব্য করলেন না। বরং এখনই য়ে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন না, তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
বনমন্ত্রীর ক্ষোভের কারণ ঠিক কোথায়, তা বস্তুত এদিন নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি। রাজীব বলেন, “যখনই আমি ভাল কাজ করতে গিয়েও পারিনি। তখনই দুঃখ পেয়েছি। সেই থেকেই কিছু ক্ষোভ জমেছে। সেটা কার সঙ্গে ভাগ করব? মানুষের সঙ্গেই তো ভাগ করে নেব। আমি যদি কাজ করতে গিয়ে বাধা পাই সেটা বলা কি অন্যায়? নিশ্চয়ই অন্যায় না। দুর্নীতি বিরুদ্ধে সুর তোলাও অন্যায় না। কিছু মানুষ ক্রমাগত ভুল বোঝাচ্ছেন। সেটা খারাপ লাগে। আমায় দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ডাকলে অনেকে বেঁকা ভাবে কথা বলছেন। তখন তাঁদের কেউ কিছু বলে না। গণতন্ত্রে মানুষ শেষ কথা। আমার কি কথা বলার থাকতে পারে না? বলতে পারি না!”
আরও পড়ুন: নিয়মিত তোপ দাগছেন দিলীপ, আর ‘স্বাস্থ্যসাথী’-র কার্ড নিল তাঁর পরিবারই!
তিনি আরও বলেছেন, “কর্মীদের সঙ্গে এক একসময় ভুল আচরণ করা হয়েছে। কর্মীরা কেবল সম্মানটুকু চায়। আর কিছুই না। তারাই দলের আসল সম্পদ। আমার দলনেত্রীও একই কথা বলেন। যখন কর্মীরা দলে অসম্মানিত হন, সেটা বলা কি অন্যায়? মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে যেটা আমার জন্য সুবিধাজনক মনে হবে সেটাই করব। আমি ব্যক্তি স্বার্থে কোনও কথা বলিনি। যা বলেছি দলের স্বার্থে বলেছি। কেন মানুষ সরে যাবে দলের কাছে থেকে? আমি পিছনে ফিরে তাকানোর কথা ভাবি না। সবসময় ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে চলব।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এখানেই প্রচ্ছন্নভাবে রাজীব ইঙ্গিত দিয়ে রাখতে চেয়েছেন যে কাজে বাধা পেলে তিনি অন্যদিকেও হাঁটতে পারেন। তবে যে বিষয়টা নিয়ে দীর্ঘদিনের জল্পনা, তার উত্তর এদিনের লাইভে শেষের দিকে এসে অনেকটাই সাফ করে দিয়েছেন রাজীববাবু। লাইভে একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে জানান, “আমি ধৈর্য ধরে আছি। ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি আপনাদের জন্য।” ফলে বিগত কয়েকমাস যাবত তাঁর যে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার প্রবল গুঞ্জন তৈরি হয়েছে, তাতে সাময়িক বিরতি পড়ল বলা চলে। কিন্তু, এই নিয়ে এখনই কোনও সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না বলেই মত পর্যবেক্ষকদের।
আরও পড়ুন: রাজনীতি নাকি IPL নিলাম ! শতাব্দী আসবেন বিজেপিতেই , দাবি সৌমিত্র খাঁর