পৌষ মেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়াকে কেন্দ্র করে চূড়ান্ত টানাপোড়েন চলছিল বিশ্বভারতীতে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই সোমবার রীতিমতো তুলকালাম কাণ্ড। উপাচার্যের নির্দেশে তৈরি হওয়া পাঁচিল জেসিবি মেশিন দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। বোলপুরের স্থানীয় মানুষজনেরাই ওই পাঁচিল ভেঙে ফেলেন। দরজাও ভেঙে দেওয়া হয়। তবে এই উত্তেজনার পরিস্থিতিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কারও দেখা পাওয়া যায়নি।
শনিবার পাঁচিল দেওয়ার কাজ বন্ধ করে দেয় বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি। এর পরেই সক্রিয় হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, শনিবার সন্ধেয় অধ্যাপক এবং কর্মীদের মেসেজ পাঠান রেজিস্টার। রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে আসার নির্দেশ দেন। সকাল ৯টা নাগাদ উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নেতৃত্ব বিশাল মিছিল করে প্রায় তিনশো জন অধ্যাপক, কর্মী শান্তিনিকেতন থানা সংলগ্ন মেলার মাঠে উপস্থিত হয়। শান্তিনিকেতন থানার সামনের রাস্তায় যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশ্বভারতীর বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীরা চারদিক ঘিরে ফেলে, ব্যাপক নিরাপত্তার ঘোরটোপে ছিলেন উপাচার্য। এর পরে বিদ্যাভবন অঙ্গন থেকে মেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়ার জন্য জেসিবি দিয়ে গর্ত করার কাজ শুরু হয়।
এই খবর পেতেই বোলপুর এবং শান্তিনিকেতনের মানুষ ভিড় জমান মেলার মাঠে। শান্তিনিকেতন বাঁচাও কমিটি এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির পক্ষ থেকে শৈলেন মিশ্র, আশ্রমিক শুভলক্ষ্মী গোস্বামী উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে এলে উপাচার্য কথা বলতে অস্বীকার করেন। কান্নায় ভেঙে শুভলক্ষ্মীদেবী বলেন, “উপাচার্যের এমন উদ্ধত আচরণ বিশ্বভারতীর বুকে অকল্পনীয়। এক এক জন উপাচার্য আসছেন, আর পাঁচিল তুলে রবীন্দ্র-আদর্শকে ধূলিসাৎ করে দিচ্ছেন।” মেলার মাঠ ঘিরে দেওয়ার ঘটনায় বিশ্বভারতীর কর্মী, অধ্যাপকদের নীরবতা নিয়েও কটাক্ষ করেন।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচিল দেওয়ার কাজ সম্পূর্ন করতে শান্তিনিকেতন থানার সামনে মেলার মাঠে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস তৈরি করা হবে। আগামী ২৭ দিনের মধ্যে পাঁচিলের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। কাজের উপর নজরদারি চালাতে থানা সংলগ্ন রাস্তার ধারে প্রচুর আলো এবং নজরদারি ক্যামেরা লাগানো হবে। ক্যাম্প অফিস থেকে তা নিয়ন্ত্রন করা হবে। রবিবার থেকে রাতেও কাজ চলবে বলে জানা যাচ্ছে। সেই কারণে মাঠ সংলগ্ন ইলেক্ট্রিক পোস্টে আলো লাগানো হয়েছে। একইসঙ্গে কাজের দেখভালের জন্য থানার ঠিক বিপরীতে মাঠের একটি অংশে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস। তবে সোমবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা জেসিবি মেশিন নিয়ে এসে ভেঙে দেয় পাঁচিল। দরজাও ভেঙে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: রাজভবনে নজরদারি চলছে, পাচার হচ্ছে গোপন নথি, দাবি ধনখড়ের
মেলার মাঠ পাঁচিলে ঘেরাকে ‘শান্তিনিকেতনের কৃষ্টির উপরে আঘাত’ বলেই মনে করছেন বর্তমান পড়ুয়া থেকে প্রাক্তনী, আশ্রমিকদের অনেকে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও অনেকে প্রতিবাদ জানিয়ে নানা ‘পোস্ট’, নানা লেখা ‘শেয়ার’ করেছেন। ‘মেলার মাঠ বাঁচাও, শান্তিনিকেতন বাঁচাও’ নামে পেজ তৈরি হয়েছে। এ সবের বাইরে সামনে দাঁড়িয়ে বিরোধিতা তো আছেই। প্রবীন আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “বর্তমান উপাচার্য তো কারও কথা শোনেন না। যা ভাল মনে হচ্ছে, তাই করছেন। মেলার মাঠের মতো ঐতিহ্যশালী মাঠকে ঘিরে ফেলার কোনও যুক্তিই নেই।” প্রাতঃভ্রমণ বা খেলাধুলোর জন্য মেলার মাঠ বোলপুরবাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন ‘মুক্তাঞ্চল’কে ঘিরে ফেলা অযৌক্তিক বলেই মত আরও অনেকের।
করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বভারতীর পঠন-পাঠন এখন বন্ধ। অধিকাংশ পড়ুয়া ক্যাম্পাসে নেই। তার পরেও স্থানীয় পড়ুয়াদের একাংশ পাঁচিল দেওয়ার বিরোধিতায় নেমেছে। এঁদের মধ্যে সোমনাথ সৌ বলেন, “পড়ুয়াদের না-থাকার সুযোগ নিয়ে মাঠ ঘিরে অচলায়তন তৈরির চেষ্টা করছে বিশ্বভারতী।’’ জনমত গড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন অনেকে। শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সাম্মানিক সম্পাদক অনিল কোনার অবশ্য নিরাপত্তার যুক্তিকেই সামনে এনেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মেলার মাঠে সন্ধ্যায় বা রাতে নানা অসামাজিক কাজকর্ম হয়। সার্বিক নিরাপত্তার দিকটি মাথায় রেখেই ঘিরে ফেলার সিদ্ধান্ত। যাঁরা এর বিরোধিতা করছেন, তাঁরা সবটা না জেনেই করছেন।” বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, পরিবেশ আদালত মেলার মাঠ ঘেরার নির্দেশ দিয়েছে তাই ঘেরা হচ্ছে।
এদিকে, করোনাবিধি অমান্য করে থানার সামনে জমায়েত করায় শান্তিনিকেতন থানায় উপাচার্যের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়।বিষয়টি নিয়ে এদিন টুইট করেছেন পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও।
Situation of law and order in Visva Bharati is alarming. Am trying to be in touch with CM to secure peace in temple of learning.
As per VC violators of law have entered campus and destroyed property.
CS, HS, DM and SP @MamataOfficial have not responded to call of Visva Bharati.
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) August 17, 2020
আরও পড়ুন: অব্যাহত তিক্ততা! রাজভবনের চা-চক্রে গরহাজির মমতা, ঝাঁঝালো টুইট রাজ্যপালের