কলকাতা: মঙ্গলবার দেশের জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর বুধবার সেই প্যাকেজ বিস্তারিত জানালেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। কিন্তু নির্মলার সেই ঘোষণার পরই গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা বলেন, ‘বিগ জিরো, কাল যে কথা বলা হয়েছিল, তাতে রাজ্যগুলো হয়ত কিছু পাবে। রাজ্যের সার্বিক উন্নতিতে যা কাজে আসবে। বাস্তবে অশ্বডিম্ব দেখতে পেলাম।’
মোদীর ঘোষিত প্যাকেজ যে আদৌ ২০ লাখ কোটির নয়, বাস্তবে তা গিয়ে দাঁড়াচ্ছে মাত্র ৪ লাখ কোটির মতো। তা এদিন মুখ্যমন্ত্রীর আগে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রই স্পষ্ট করে দিয়েছেন। জানিয়েছেন, যা দাঁড়াচ্ছে তাতে ঘোষণা মতো জিডিপির ১০ শতাংশ তো নয়, বড়জোড় ২ শতাংশ। সেই প্রসঙ্গ টেনেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দশ লক্ষ কোটি টাকা অলরেডি ঘোষণা ছিলই, কিচ্ছু দেয়নি রাজ্যগুলোকে, চলবে কী করে? আমরাই তো বাংলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ৯০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছি।
কেন্দ্রের প্যাকেজকে পুরোপুরি ভুয়ো বলে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘সাধারণ মানুষকে তো নগদ টাকা দিতে পারতেন। অসংগঠিত ক্ষেত্রে কিছু নেই, চাকরি তৈরি করা, স্বাস্থ্য-বাজার, করোনা মোকাবিলায় কিছু নেই। কিচ্ছু নেই এই প্যাকেজে। ধোঁকা দেওয়া হল মানুষের দুর্দিনে। রিজার্ভ ব্যাংক থেকে রাজ্যের জন্যে ঋণের ব্যবস্থাও তো করে যেত। কৃষকদের ঋণ মকুব করতে পারতেন। শূন্য থালি নিয়ে পেটের ভাত ভরবে? ভুয়ো তথ্য দেওয়া হল, ইনকাম ট্যাক্সের সময় বাড়ালাম-এটা তে কী হয়?’
আরও পড়ুন: গুজব রুখতে ব্যবস্থা, ১৭ তারিখ পর্যন্ত হুগলির একাংশে বন্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা
রীতিমতো ক্ষোভ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘একটাও পয়সাও দেওয়া হল না, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে নষ্ট করা হল, লকডাউনের নামে রাজ্যগুলোকে লকআউট করে দিল। গণতন্ত্র থমকে গেছে। মানুষের বাঁচার অধিকার থমকে গেছে। আমরা এখনও ১০০% বেতন দিয়ে যাচ্ছি।’
এরপরই তিনি জানান, ২০২০-২০২১ অর্থবর্ষে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৪২০০ টাকা বোনাস দেওয়া হবে।
একইসঙ্গে আরও জানান, এবছর বোনাস পাওয়ার ক্ষেত্রে বেতনের ঊর্ধসীমা ৩০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৪,২৫০ টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ ৩৪,২৫০ টাকা পর্যন্ত যাঁদের বেতন, তাঁরা সবাই এই বোনাস পাবেন। এরফলে ১০ লাখ মানুষ উপকৃত হবেন বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে আরও জানান, বোনাস দেওয়ার জন্য সরকারের ৪০০ কোটি টাকা খরচ হবে।
এর পাশাপাশি, যাঁদের বেতন বেশি, যাঁরা বোনাস পান না, তাঁদের জন্যও অগ্রিম ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ৩৪,২৫০-এর পর থেকে ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত যাঁদের বেতন, সেইসব রাজ্য সরকারি কর্মীদের ১০ হাজার টাকা করে অগ্রিম দেওয়া হবে। এটা পরে বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে। এখন ইদের সময় মুসলিম কর্মীদের ও পরে দুর্গাপুজোর সময় হিন্দু কর্মীদের এই বোনাস ও অগ্রিম দেওয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: করোনার জেরে বাড়তে পারে বাসের ভাড়া, তেমনই ইঙ্গিত মিলল মুখ্যমন্ত্রীর কথায়