নিউজ কর্নার ওয়েব ডেস্ক: ২৩ মাস আগে স্ত্রী-র বিবাহ-বর্হিভূত সম্পর্কের কারণে নৃশংসভাবে খুন হতে হয়েছিল ব্যবসায়ী অনুপম সিংকে। বৃহস্পতিবার বারাসত ফাস্ট ট্র্যাক ফোর্থ কোর্ট সেই মামলার রায় ঘোষণা করল। এ দিন আদালত মৃতের স্ত্রী মনুয়া মজুমদার ও তাঁর প্রেমিক অজিত রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে। তবে দোষীদের সাজা ঘোষণা হবে আগামী শুক্রবার। স্বভাবতই আদালতের রায়ে খুশি অনুপম সিংয়ের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা মনুয়া ও অজিতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। নিহত অনুপমের মায়ের বক্তব্য, ‘সর্বোচ্চ সাজা চাই’।
এ দিন রায় ঘোষণার আগে মনুয়া ও অজিতকে আদালতে তোলা হয়। তবে রায় পড়ে শোনানোর সময় তাঁরা দু’জনেই ভাবলেশহীন মুখে ছিলে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
গত ১৫ জুলাই রায়দানের কথা থাকলেও পুরো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ না হওয়ায় তা পিছিয়ে যায়। বারাসত আদালতের ৪ নম্বর ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের বিচারক বৈষ্ণব সরকার ওই দিন জানিয়েছিলেন, ২৫ জুলাই রায়দান হতে পারে। সেই মতো এ দিন মনুয়া ও অজিতকে এই খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। আইনজীবীদের একাংশের মতে, ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করার অর্থ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। ফাঁসির সাজার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে আইনজীবীদের একটি অংশের মত।
২০১৭ সালে মে মাসের তিন তারিখ সকালে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন সংস্থায় কর্মরত অনুপম সিংহকে (৩৪) তাঁর বাড়িতেই নৃশংস ভাবে খুন হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তদন্তে জানা যায়, তাঁর মাথায় ভারী অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছিল আগের রাতেই।
পুলিশ প্রথমে এই খুনের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত গোলমাল সন্দেহ করেছিল। পরে অবস্থাপন্ন অনুপমের খুনের পিছনে টাকাপয়সার প্রত্যক্ষ সংযোগ পুলিশ খুঁজে পায়নি । নোটবাতিলের সময়ে হুন্ডির সঙ্গে অনুপমের সংস্থার প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল বলে জানা গেলেও খুনের সঙ্গে এই বিষয়ে কোনও যোগ পাওয়া যায়নি। খুনের ১৩ দিনের মাথায় প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে বারাসত থেকে মনুয়া মজুমদার (সিংহ) এবং তার প্রেমিক অজিতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, অজিতের সঙ্গে মনুয়ার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরেই অনুপমকে নৃশংস ভাবে খুন করে অজিত।
যে দিন গভীর রাতে খুন হয়েছিলেন অনুপম, সে দিন তাঁর স্ত্রী বাপের বাড়িতে ছিলেন বলে দাবি করলেও ঘটনার দিন দুপুরে হৃদয়পুরে অনুপমের বাড়িতে অনুপমের অগোচরে অজিত, মনুয়ার উপস্থিতি টের পায় পুলিশ। তদন্তে জানা যায়, মনুয়া ওই বাড়ি থেকে বারাসতে বাপের বাড়ি ফিরলেও থেকে গিয়েছিল অজিত। পুলিশ এই সূত্র ধরেই তদন্তের জাল গুটিয়ে আনতে থাকে। তদন্তে উঠে আসে, অনুপমের মাথায় ভারী অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়েছিল। খুনের দিন তাঁর স্ত্রী মনুয়া বাপেরবাড়িতে থাকলেও ঘটনার সময় প্রেমিক অজিতের মোবাইলে ফোন করে অনুপমের আর্তনাদ শুনেছিল। তদন্তকারীরা এ-ও জানতে পারেন, খুনের ঘটনার দিন অর্থাৎ ২ মে দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়েছিল মনুয়া ও তার প্রেমিক অজিত। পরে মনুয়া বাপেরবাড়ি ফিরে গেলেও অজিত ওই বাড়িতেই লুকিয়ে ছিল। অনুপম আসতেই তাকে আক্রমণ করে অজিত। লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয় অনুপমকে।
এই হত্যাকাণ্ডের ৮৬ দিন পরে চার্জশিট জমা দেয় বারাসত থানার পুলিশ। এর মধ্যে ফিংগারপ্রিন্ট ও ফরেনসিক রিপোর্টও ছিল । ৩০২ ও ১২০বি ধারায় খুন ও ষড়যন্ত্রের মামলা চলে। ২৭ জন সাক্ষী ছিলেন। অনুপমের পরিবার ও বন্ধুরা বারবারই দু’জনের ফাঁসির শাস্তি দাবি করেছেন। এ দিনও বারাসত আদালতে ছিলেন তাঁরা। বিচারক দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ফের মৃত্যুদণ্ডের সাজাই চেয়েছেন তাঁরা।