সংসদে বলেছিলেন, তাঁর দমবন্ধ লাগছে। তৃণমূল এবং সাংসদ পদ ছাড়ার নাটকীয় ঘোষণার পর রাজ্যসভা থেকে বেরিয়ে এসে দীনেশ ত্রিবেদী বললেন, ‘‘আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। এখন দল মমতার হাতে নেই।’’ পাশাপাশি নিজের টুইটার হ্যান্ডলের প্রোফাইল-ব্যানার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবিও সরিয়ে ফেললেন দীনেশ
দীনেশের কথা নিয়ে বুধবার থেকেই জল্পনা চলছিল। বেসরকারি পুঁজির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রীর করা টুইট দীনেশ সে দিন পূর্ণ সমর্থন করে রিটুইট করেন। তা যদি দলবদলের জল্পনার প্রথম ধাপ হয়, তা হলে শুক্রবার পর পর যা ঘটল, তা ‘থ্রিলার’ জমিয়ে দিল আরও। কারণ, ইস্তফার পরেই হঠাৎ কিছু ক্ষণের জন্য দীনেশের টুইটার অ্যাকাউন্ট উধাও হয়ে যায়। ঘণ্টা খানেক পরেই ফের অ্যাকাউন্টের খোঁজ মেলে। তবে তত ক্ষণে অ্যাকাউন্টের ব্যানার ছবি থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরে গিয়েছেন। এসেছে জাতীয় পতাকা ও স্বামী বিবেকানন্দের ছবি।
আর এরপরেই আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বিজেপি যোগ। কারণ, এতদিন দীনেশের টুইটারে ফলোয়ার হিসাবে ছিলেন না পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ইস্তফা পরবর্তী দীনেশকে ‘অনুসরণ’ করতে শুরু করলেন তিনি। সূত্রের খবর, এ দিনই বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করতে পারেন। রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে দীনেশ ইস্তফা দেওয়ার পর দিল্লিতে তাঁর লোধী এস্টেটের বাড়ির সামনে ভিড় জমায় সংবাদ মাধ্যম। কিন্তু, সেই বাড়ির নেম প্লেটেও দীনেশের নাম দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: কেবল ‘তারিখ পে তারিখ’ নয়, সিএএ নিয়ে শাহের মুখ থেকে স্পষ্ট বার্তা শুনতে চায় ঠাকুরনগর
তৃণমূলের কাছে বিষয়টি অজানা ছিল, স্বীকার করেছেন সৌগত রায়। বলেছেন, ‘‘ওঁর দলের নানা বিষয় নিয়ে ক্ষোভ হয়ত ছিল। সেটা উনি দলে বলতে পারতেন। দীনেশ দল ছেড়ে দেবেন, এই ইঙ্গিত আমরা পাইনি।’’ শুভেন্দু থেকে রাজীব, বৈশালী বা প্রবীর ঘোষালরা দল ছেড়ে অন্য দলে যাচ্ছেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই সে বিষয়টি হাওয়ায় ভেসেছিল। দলের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাতেও বসেছিলেন বিক্ষুব্ধরা। কিন্তু দীনেশ ধরা দেননি। তাই হঠাৎ ‘ধনধান্য পুষ্প ভরা’-র লাইন আবৃত্তি করে তিনি দল ছেড়ে দেবেন, তা ধরা পড়েনি তৃণমূলের র্যাডারে। সেরা সাংসদের পুরস্কার পাওয়া এই নেতার ভোটের মুখে ইস্তফা অনেকটা যেন ‘বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো’ পড়েছে রাজ্যের শাসক শিবিরে।
সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনিও তৃণমূলের ‘কর্পোরেট কালচার’-এর দিকেই আঙুল তুলেছেন। প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর সংস্থার নাম না নিয়ে তিনি বলেন, “যারা রাজনীতির অ আ ক খ বোঝে না তাঁরা দল চালাচ্ছে। কোথাও গিয়ে মুখ খুলতে হয়। আমিও আত্মার ডাকে সাড়া দিয়েছি।”
অন্যদিকে, দলত্যাগের জল্পনা বাড়িয়ে শুক্রবারই দিল্লি যাচ্ছেন তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীও। তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা অবশ্য অনেকদিন ধরেই। হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারি সভাতেও তিনি হাজির ছিলেন। শুভেন্দুর পরিবারের এই সদস্য আজ সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছে যাবেন বলে খবর। অতিসম্প্রতি তিনি লোকসভা অধ্যক্ষের কাছে দেখা করার সময় চেয়েছিলেন। তিনিও লোকসভা সাংসদের পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন বলে জল্পনা অনেকদিন ধরেই চলছে। গত মঙ্গলবারই তাঁর দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল।
আরও পড়ুন: কীভাবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা পাবেন ভেলোরে? জেনে নিন সবটা