Site icon The News Nest

হাইকোর্টের বিচারপতির রাজনৈতিক মন্তব্য! এজলাস বয়কট সরকারি আইনজীবীদের

kolkata high court web e1591441755142

নিউজ কর্নার ওয়েব ডেস্ক: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট করলেন আইনজীবীরা। বনগাঁ মামলার শুনানিতে তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মন্তব্যের অভিযোগ এনে সোমবার এজলাস বয়কট করলেন আইনজীবীরা। তাঁদের অভিযোগ, সমাপ্তিদেবীর কাছ থেকে তাঁরা আর সুবিচারের প্রত্যাশা করেন না।

প্রধান বিচারপতি টিবি নারায়ণ রাধাকৃষ্ণণকে চিঠি লিখে সরকারি প্যানেলের আইনজীবীরা জানিয়ে দিলেন, তাঁরা বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কট করছেন। ফলে অন্যান্য মামলার সঙ্গে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা— বনগাঁ, হালিশহর এবং গঙ্গারামপুর পুরসভার মামলা নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম জটিলতা। আর সরকারি আইনজীবীদের এই আদালত বয়কটের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বললেন, “সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে চাইছেন সরকারি আইনজীবীরা।”

সোমবার দুপুরে গঙ্গারামপুর পুরসভা এবং বনগাঁ পুরসভার মামলার শুনানি রয়েছে বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে। মঙ্গলবার গঙ্গারামপুরের চেয়ারম্যান আস্থাভোট ডেকেছেন। পাল্টা আদালতে হাজির হয়েছেন কয়েকজন কাউন্সিলর। মামলা গৃহীত হয়েছে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে তীব্র জটিলতা এই মামলাগুলি নিয়ে।

শুধু গঙ্গারামপুর পুরসভার অনাস্থাই নয়, বনগাঁ পুরসভার মামলাও চলছে বিচারপিতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে। গত ১৯ জুলাই বনগাঁ পুরসভার অনাস্থা মামলাটিও তাঁর এজলাসে ওঠে। বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যকে তীব্র ভৎর্সনা করে বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় বলেন,  ‘‘মানুষের সুবিধার জন্য আপনাকে নির্বাচিত করা হয়েছে৷ জনসাধারণকে পরিষেবা দেওয়ার জন্য আপনাকে নির্বাচিত করা হয়েছে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যখন আপনার সঙ্গে নেই, তখন আপনাকে আস্থা ভোটের মুখোমুখি হতেই হবে৷ ফল ভোগ করতেই হবে৷ এত নির্লজ্জ কেন আপনি? কেন চেয়ার আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন?’’ এমনকী, ওইদিন অ্যাডভোকেট জেনারেলের (এজি) প্রতিও ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়৷ আস্থা ভোটের ইও বা এগজিকিউটিভ অফিসারের পেশ করা রিপোর্ট, এজি পড়ে শোনাতে গেলে, তাঁকে থামিয়ে দেন বিচারপতি৷ বলেন, ‘‘ওটা গীতা নাকি যে শুনতেই হবে৷ একদল কাউন্সিলর যে ইও-কে দিয়ে জোর করে ওই রিপোর্ট লিখিয়ে নেননি, তার কী প্রমাণ রয়েছে?’’ এরপরই তিনি প্রস্তাব দেন, আবার আস্থা ভোট হোক বনগাঁ পুরসভায়৷ এসপির উপস্থিতিতে ডিএম বা এসডিও অফিসে হোক সভা৷ সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে দেখাক পুর চেয়ারম্যান শংকর আঢ্য৷ বিধাননগর মামলার শুনানিতে বিচারপতির সঙ্গে তীব্র বাদানুবাদে জড়িয়েছিলেন আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে ক্ষমাও ভিক্ষা করতে হয় তাঁকে।

এ রকম অনেক মামলাতেই তাঁর পর্যবেক্ষণ নিয়ে পুরসভা এবং সরকারি পদে থাকা সাংবিধানিক পদাধিকারীরা অস্বস্তিতে পড়েন। এর প্রেক্ষিতেই সরকারি  আইনজীবীদের এই সিদ্ধান্ত কি না, তা নিয়ে আইনজীবীদের একাংশ প্রশ্ন তুলছেন। যদিও সরকারি প্যানেলে থাকা আইনজীবীরা কেন এ দিন সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের ১১ নম্বর এজলাস বয়কট করলেন, প্রধান বিচরপতিকে দেওয়া চিঠিতে তার কারণ উল্লেখ করা হয়নি বলে হাইকোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও আইনজীবী মহলের একটা অংশের মতে, বিচাপতি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে সওয়াল-জবাবে আইজীবীরা অংশগ্রহণ না করলেও তিনি মামলা শুনতে পারেন। এবং রায় দানও করতে পারেন। তবে, বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাস বয়কটকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে হাইকোর্ট চত্বরে।

 

 

Exit mobile version