ইংরেজিতে এমএ৷ পড়াশোনায় মেধাবি।ছোট থেকেই ছিল হাত সাফাইয়ের ঝোঁক৷বড় হয়ে সেই চুরিকেই পেশা হিসেবে নিয়ে নিয়েছিল আসানসোলের বাসিন্দা সৌমাল্য চৌধুরী৷ নিজের স্কুটি নিয়ে আসানসোল, হাওড়া, হুগলি এমন কি পূর্ব মেদিনীপুরেও একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটিয়েছে সে৷ তিন বছরে সংখ্যাটা প্রায় ১৬০-এর কাছাকাছি৷ আসানসোলের বাসিন্দার এমন এক মেধাবী চোরকে অবশেষে জালে তুলল হাওড়া সিটি পুলিশ৷ এই চোরের জীবন কাহিনি শুনে রীতিমতো তাজ্জব হাওড়ার পুলিশ কর্তারা।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে দাঁড়িয়ে বেবি বাম্প ফ্লন্ট করলেন নুসরত, দিলেন ‘উদারতা’র বার্তা
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ৯ জুন আন্দুলের একটি বাড়িতে চুরি করেছিল সৌমাল্য৷ সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ধরা পড়েছে সৌমাল্য এবং তার দুই সঙ্গী৷ কিন্তু পুলিশি জেরায় মধ্য তিরিশের এই যুবক যা দাবি করেছে, তা অনেকটা সিনেমার গল্পের মতোই৷আসানসোলের বাসিন্দা সৌমাল্যর বাবা পূর্ত দফতরের অফিসার ছিলেন৷ সৌমাল্য ছোট থেকেই পড়াশোনায় যথেষ্ট ভাল ছিল৷ কিন্তু বরাবরই জিনিস চুরির নেশা ছিল তার৷ এমন কি, এই নেশার শুরু নিজের বাড়ি থেকেই৷ পুলিশের দাবি, ছোটবেলায় কখনও নিজের বাড়ি, কখনও প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে কখনও বাসন, কখনও অন্যান্য ছোটখাটো জিনিস সরিয়ে ফেলত সৌমাল্য৷ সেই থেকে শুরু৷ সৌমাল্য দাবি করেছে, সে ইংরেজিতে এমএ পাশ করেও মনোমতো চাকরি পায়নি৷ তার পরেই পাকাপাকি ভাবে চুরির পেশাতেই মন দিয়েছিল সে৷
পুলিশ জানতে পেরেছে, নিজের স্কুটি নিয়ে কখনও আসানসোল, কখনও হাওড়া, কখনও আবার হুগলির বিভিন্ন এলাকায় চষে বেড়াত সৌমাল্য৷ উদ্দেশ্য ছিল চুরির আগে এলাকায় ঘুরে ঘুরে রেইকি করা৷ কোন বাড়ি কখন ফাঁকা থাকে, বাড়ির বাসিন্দারা কখন ঢোকেন- বেরোন এসবই আগে থেকে দেখে নিয়ে অপারেশনে নামত সৌমাল্য৷
এ ভাবেই গত ৯ জুন আন্দুলের বাসিন্দা অভিজ্ঞান ঘোষ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে চুরি করে সৌমাল্য৷ পরে অভিজ্ঞানবাবু লক্ষ্য করেন, চাবি যথাস্থানে থাকলেও আলমারি থেকে খোয়া গিয়েছে সোনার গয়না সহ টাকা পয়সা৷ অভিজ্ঞান বাবুর মা তাঁকে জানান, দিন কয়েক আগে এক অপরিচিত যুবক স্কুটি নিয়ে জল খাওয়ার অছিলায় বাড়িতে এসেছিল৷ ওই যুবকই আসলে ছিল সৌমাল্য৷ সৌমাল্যর চেহারার বর্ণনাও অভিজ্ঞান বাবুকে জানান তাঁর মা৷
চুরির ঘটনা নিয়ে হাওড়ার নাজিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ জানাতে যান অভিজ্ঞান নস্কর৷ থানার বাইরে এক যুবককে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়৷ কারণ মায়ের থেকে পাওয়া যুবকের সঙ্গে থানার বাইরে স্কুটি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ওই যুবকের চেহারার মিল ছিল৷ তাৎক্ষণিক বুদ্ধি খাটিয়ে স্কুটির নম্বরটি নিয়ে নেন অভিজ্ঞান ঘোষ৷ এর পর নিজের কিছু সূত্র কাজে লাগিয়েই তিনি জানতে পারেন, ওই স্কুটি আসানসোলে নথিভুক্ত৷ আসানসোল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সৌমাল্য চৌধুরীর নাম পান অভিজ্ঞান বাবু৷
পুলিশই তাঁকে জানায়, এই সৌমাল্যর বিরুদ্ধে অতীতে অসংখ্য চুরির অভিযোগ রয়েছে আসানসোল এবং সংলগ্ন এলাকায়৷ এর পরেই গোটা বিষয়টি ফের নাজিরগঞ্জ থানাকে জানান তিনি৷ ঘটনার তদন্তে নেমে এবং বিভিন্ন রাস্তা এবং টোল প্লাজার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে সৌমাল্যকে চিহ্নিত করে হাওড়া সিটি পুলিশ৷ এর শনিবার পূর্ব মেদিনীপুর থেকে সৌমাল্য এবং তার আরও দুই সঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়৷ চুরি যাওয়া গয়না সহ বেশ কিছু সামগ্রীও উদ্ধার হয়েছে৷ প্রকাশ শাসমল এবং মাধব সামন্ত নামে এই দুই সঙ্গীর কাছেই চুরির মাল বিক্রি করত সৌমাল্য৷
পুলিশ সূত্রেই দাবি, জেরায় সৌমাল্য স্বীকার করেছে, তার এই আচরণে রীতিমতো তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিল তার বাবা- মা৷ এমন কি, ছেলের বিরুদ্ধে পরের পর চুরির অভিযোগ ওঠার হতাশা থেকে সৌমাল্যর মা আত্মহত্যাও করেছেন৷হাওড়া সিটি পুলিশের ডিসি সাউথ প্রতীক্ষা ঝারখরিয়া জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে শুধুমাত্র হাওড়াতেই সৌমাল্যর বিরুদ্ধে ৬টি চুরির অভিযোগ রয়েছে৷ আসানসোলেও ১৬টি মামলার খোঁজ মিলেছে৷ অভিযোগ রয়েছে চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটেও৷
আরও পড়ুন: তবলিগ জামাত করোনা ছড়াচ্ছে, এই অপপ্রচারের দায়ে তিন টিভি চ্যানেলকে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা