ঝটিকা সফরে উত্তরবঙ্গে এসেই যেন ঝটকা দিলেন বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা (J P Nadda)! আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচন। সেই মহারণে নামার আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকেই যে বিজেপি অন্যতম হাতিয়ার করতে চলেছে তা পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন তিনি।
তাঁর কথায়, ‘সবাই এই আইনের সুবিধা পাবেন। পেতে বাধ্য। এখন বিভিন্ন আইনকানুন তৈরির কাজ চলছে। তবে করোনা পরিস্থিতির জেরে সাময়িকভাবে তা থমকে রয়েছে। করোনা মিটলেই নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা সকলে পাবেন।’
বিজেপি সূত্রে বলা হয়েছিল, তিনি বেশ খানিকটা সময় বাংলায় ভাষণ দেবেন। সেই মর্মে ভাষণও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সোমবার শিলিগুড়িতে খুব বেশি সময় বাংলা বললেন না বিজেপি সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। এর আগে বাংলায় এসে একাধিক ভাষণে যে ভাবে বাংলাভাষা ছুঁয়ে গিয়েছেন, এ বার তেমনই করলেন। মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে ‘হবে না, হবে না’ কটাক্ষ ছুড়লেন।
সেবক রোডের হোটেলে নাড্ডার সাংগঠনিক বৈঠক ছিল রুদ্ধদ্বার। বৈঠক শেষে রাজ্য বিজেপি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা উত্তরবঙ্গ জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সায়ন্তন বসু সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান, মূলত বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েই কথা হয়েছে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’ এবং ‘কাটমানি’র অভিযোগ আরও বেশি করে তুলে ধরে নীচের স্তর পর্যন্ত প্রচার চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন নাড্ডা। জানিয়েছেন, বুথ স্তরে বিজেপি-র সংগঠন আরও মজবুত করা দরকার। সায়ন্তন জানান, বিজেপি সভাপতি বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কর্মীদের যে ‘অত্যাচার’ সহ্য করতে হচ্ছে, কেরল ছাড়া ভারতের আর কোথাও তা হয় না।
আরও পড়ুন: দেবীপক্ষে বিরাট দুঃসংবাদ! বঙ্গে গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা মেনে নিলেন কেন্দ্র
Addressing Samajik Samuha Meeting in Siliguri, West Bengal. https://t.co/4WtPOqSPrI
— Jagat Prakash Nadda (@JPNadda) October 19, 2020
এদিন সন্ধ্যায় বেশ কিছু সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন নাড্ডা। গোর্খা, রাজবংশী, যদুবংশী, আদিবাসী, মতুয়া, বাগান শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনেন। তাঁদের দাবিদাওয়া জেনে নিয়ে নিজে বলতে ওঠেন। সেই ভাষণ সম্প্রচারিত হয়। ‘সামাজিক সমূহ’ নামে ওই কর্মসূচিতে দেওয়া দাবিদাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়ে নাড্ডা আক্রমণের সুর চড়ান মমতার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘‘বিভাজন ঘটাও আর ক্ষমতায় টিকে থাকো, মমতাজির নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এখন এটাই করছে।’’ সেই প্রসঙ্গেই মমতার সরকারের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সরকারের তুলনা টেনে নাড্ডা দাবি করেন, ‘‘মোদীর নীতি হল সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলা এবং সকলের উন্নয়ন।’’
‘সামাজিক সমূহ’ কর্মসূচির দাবির মধ্যে সিএএ দ্রুত কার্যকর করার দাবিও ছিল। সে প্রসঙ্গে বিজেপি বলেছেন, ‘‘সিএএ আপনারা পাবেন। পাওয়া নিশ্চিত। এখন আইনটার বিধিগুলো তৈরি হচ্ছে। করোনার কারণে কাজ একটু আটকে গিয়েছিল। খুব তাড়াতাড়ি এর সুবিধা আপনারা পাবেন।’’ তাঁর কথায় স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের মুখে দাঁড়িয়েও সিএএ নিয়ে পিছু হঠার ভাবনা তাঁদের নেই। বরং সিএএ-কেই অন্যতম ‘তাস’ করে তুলতে বিজেপি তৎপর।
আরও পড়ুন: লকআপে আটকে রেখে ১০ দিন ধরে গণধর্ষণ! কাঠগড়ায় পাঁচ পুলিশকর্মী