করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কলকাতার ফুটপাথে অসুস্থ অবস্থায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে রইলেন এক বৃদ্ধ। সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স এলেও ফিরে গেল কয়েকবার। অবশেষে স্থানীয় এক ব্যক্তির চেষ্টায় বেলা ২টো নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বৃদ্ধকে। স্থানীয়দের দাবি, বৃদ্ধের করোনার উপসর্গ রয়েছে।
কোভিড আতঙ্ক নিয়ে শহরে একের পর এক অমানবিক ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। দু’দিন আগেই পাটুলিতে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর পর প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আত্মীয়েরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। বৃদ্ধা কোভিড আক্রান্ত ছিলেন না। কিন্তু তাঁর দুই ছেলে এবং পুত্রবধূ করোনা আক্রান্ত ছিলেন। তাই করোনার ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেননি সৎকার করতেও। শেষে পুলিশকে সৎকার করতে হয় ওই বৃদ্ধার। আজও দেখা গেল, স্থানীয় বাসিন্দারা শুধু পুলিশে খবর দিয়েই দায় সেরেছেন। স্থানীয়দের দাবি, ওই বৃদ্ধের বাড়ি বাগবাজারে। পারিবারিক কোনও সমস্যার জন্য গত কয়েক মাস ধরেই বাস শ্যামবাজার ট্রাম ডিপোর উল্টো দিকে ফুটপাথে। স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘‘গত কাল বিকেল থেকে ওই বৃদ্ধকে দেখা যায় তক্তপোষের উপর শুয়ে থাকতে। বৃদ্ধ স্থানীয়দের জানান যে, তাঁর জ্বর এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ছড়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে লক্ষ পেরোল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা! কমছে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা
স্থানীয়দের একাংশ বুধবার সকাল থেকে শ্যামপুকুর থানা, পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরে ফোন করা শুরু করেন। অন্য এক যুবক বলেন, ‘‘বেলা ৯টা নাগাদ পুলিশের একটি গাড়ি আসে। তাঁরা একটা অ্যাম্বুল্যান্সও নিয়ে আসে। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্সে চালক-সহ পিপিই কিট পরা দু’জন থাকলেও তাঁরা বৃদ্ধকে তুলতে রাজি হননি। তাঁরা স্থানীয়দের বলেন বৃদ্ধকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দিতে।” অন্য এক যুবকের কথায়, ‘‘আমাদের পিপিই কিট নেই। আমরা কোন সাহসে ধরব ওই বৃদ্ধকে।” তাঁর পাশে থাকা এক প্রৌঢ় পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ এসে দেখে গেল। অ্যাম্বুল্যান্স এল। তার পরেও তুলে নিয়ে গেল না।” ওই প্রৌঢ়ের দাবি, ‘‘পাবলিক মানে সাধারণ মানুষ কী করবে। আমরা ফোন করতে পারি। বাকিটা তো সরকারকে করতে হবে।”
এর পর মৃণাল রায় নামে স্থানীয় এক হকার কলকাতা পুলিশের কর্মীদের থেকে পিপিই চেয়ে নেন। বিছানার চাদরে শুইয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হয় বৃদ্ধকে। বেলা ২টোর সময় যখন বৃদ্ধকে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দেয় অ্যাম্বুল্যান্স ততক্ষণে কেটে গিয়েছে ৮ ঘণ্টা।
আরও পড়ুন: জনসমক্ষে আক্রান্ত আব্বাস সিদ্দিকি, অভিযোগ তৃণমূল বিধায়ক সওকত মোল্লার বিরুদ্ধে