রাজনৈতিক মেন্টর কিংবা ব্যক্তিগত অভিভাবক বা ‘দাদা’ – জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের (Pranab Mukherjee) নানা ভূমিকার পরিচয় খুব কাছ থেকে পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাদা-বোনের অটুট সম্পর্কের জগৎটা এবার শূন্য হল। অসীম শ্রদ্ধা-স্নেহের বন্ধনটা ছিঁড়ে ফেলে পরলোকে পাড়ি দিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। এই খবর শোনার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত ফেসবুক পোস্টে সেই আক্ষেপ গোপন রইল না।
সোমবার সন্ধ্যায় এক টুইটে প্রণববাবুকে শ্রদ্ধা জানান মমতা। লেখেন, ‘গভীর দুঃখের সঙ্গে এটা লিখছি। ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায় আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছেন। একটা যুগের অবসান হল। দশকের পর দশক ধরে তিনি পিতৃতুল্য ছিলেন। আমার প্রথম সাংসদ হওয়া থেকে মন্ত্রিসভায় প্রথম জায়গা পাওয়া, সব সময় অগ্রজ হিসাবে তাঁকে পেয়েছি। আমি মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি রাষ্ট্রপতি হন…’
আরও পড়ুন: Unlock 4: বাংলায় নির্ধারিত দিনেই লকডাউন, ৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু মেট্রো
It is with deep sorrow I write this. Bharat Ratna Pranab Mukherjee has left us. An era has ended. For decades he was a father figure. From my first win as MP, to being my senior Cabinet colleague, to his becoming President while I was CM…(1/2)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) August 31, 2020
স্মৃতিচারণায় মমতা আরও লেখেন, ‘অনেক স্মৃতি। দিল্লি গিয়ে প্রণবদার সঙ্গে দেখা না করে ফেরার কথা কল্পনা করা যেত না। রাজনীতি ও অর্থনীতিতে তিনি কিংবদন্তী। তাঁর কাছে সব সময় কৃতজ্ঞ থাকব। তাঁর কথা মনে পড়বে। অভিজিৎ ও শর্মিষ্ঠার প্রতি আমার সমবেদনা রইল।‘
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে প্রণব মুখোপাধ্যায় নিজের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন, ”কংগ্রেস ছেড়ে তো অনেকেই বেরিয়ে গিয়েছে। কেউ তেমন কিছু করতে পারেনি। ও কিন্তু করে দেখিয়েছে। ওর জনপ্রিয়তার আমাদের চেয়ে অনেক বেশি।” তবে এই মধুর সম্পর্কেও খানিকটা অম্লতা মিশেছিল ক্ষণিকের জন্য। ২০১৩ সালে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় প্রণব মুখোপাধ্যায়কে একবাক্যে সমর্থন করতে চাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ নিয়ে একমাত্র তাঁর টালবাহানার জেরে দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদের নির্বাচন নিয়ে জল গড়িয়েছিল বহু দূর। শেষপর্যন্ত প্রতিপক্ষ, লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার, পিএ সাংমার বিরুদ্ধে অর্ধেকেরও বেশি ভোটে জিতে যান বাঙালি দুঁদে রাজনীতিক। পা বাড়ান রাইসিনার পথে।
আর তখনই দাদা-বোনের টালমাটাল সম্পর্ক ফের জোড়া লাগে। ছোট বোনের কাছে দাদা আবদার করে বসেন, ”যা হওয়ার হয়েছে, তুই ভুলে যাস, আমিও ভুলে যাব। তুই না এলে আমার শপথগ্রহণ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।” এই ডাক উপেক্ষা করার ক্ষমতা, ইচ্ছা কোনওটাই ছিল না জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। হাজারও ব্যস্ততা সামলে তিনি সেদিন গিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠানে। উভয়েই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ছোটখাটো বিরোধিতা তুচ্ছ বিষয়, আসলে রাজনীতির বিশাল আঙিনায় তাঁদের আসন অনেকটাই উঁচুতে। সেই উচ্চতা থেকে আজ একটি আসন ফাঁকা হয়ে গেল প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে।
উল্লেখ্য, সোমবার বিকেলে দিল্লির আরআর সেনা হাসপাতালে মৃত্যু হয় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৮৪ বছর। প্রণববাবুর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ গোটা রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: চড়া রোদ, ভ্যাপসা গরম, আর্দ্রতাজনিত অস্বস্তিতে নাকাল দক্ষিণবঙ্গ! ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস উত্তরে