বুথের ভিতরে রয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী৷ যিনি আবার ওই কেন্দ্রেরই প্রার্থী৷ অথচ বুথের বাইরে লাঠি, বাঁশ হাতে জড়ো হয়ে গিয়েছেন শয়ে শয়ে লোক৷ দেখা নেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর৷ পুলিশের সংখ্যাও অপর্যাপ্ত৷ আর এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জন্য টানা প্রায় এক ঘণ্টা বুথের ভিতরেই আটকে থাকতে হল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে৷ এমনই বেনজির ছবির সাক্ষী থাকল নন্দীগ্রাম৷ ঘটনাস্থল থেকেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর ফোনে কথা হয় বলে খবর৷
বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফার ভোটের সকাল থেকেই বয়ালে বিজেপির বিরুদ্ধে ছাপ্পাভোটের অভিযোগ উঠছিল। তৃণমূলের দাবি, বুথে শাসক দলের এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে তৃণমূল এজেন্ট বাড়িতে ফিরে আসেন। বিজেপির ‘হুমকির’ জেরে ওই এজেন্টকে বাড়ি থেকে বেরোতে দেননি স্ত্রী এবং মা। বৃদ্ধা তো হাতজোড় করে কেঁদেও ফেলেন। পরিবর্তে অন্য এক ব্যক্তিকে এজেন্ট হিসেবে নিয়ে যাওয়া হলেও কাগজপত্রে ত্রুটি দর্শিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথে বসতে দেয়নি বলে অভিযোগ।
তারইমধ্যে দুপুর একটা নাগাদ রেয়াপাড়ার অস্থায়ী আস্তানা থেকে বয়ালের উদ্দেশে রওনা দেন মমতা। হুইলচেয়ারে বসেই বয়ালে শংকরবেতার গ্রামের সাত নম্বর বুথে আসেন। মমতাকে সামনে পেয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তৃণমূলকর্মী এবং স্থানীয়দের একাংশ। সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বুথের ভিতরে যান মমতা। তারপরপই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। মমতা বুথের ভিতর থাকাকালীন বুথের বাইরে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া হয়। তৃণমূলের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর মদতে বহিরাগতরা বিজেপির হয়ে ছাপ্পা ভোট করছে। বিজেপির তরফে পালটা অভিযোগ করা হয়, বহিরাগতদের নিয়ে এসেছেন। কার্যত সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হন তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। হাতাহাতির পরিস্থিতি তৈরি হয়।
আরও পড়ুন: ‘খুন নয়, আত্মহত্যাই’, দিনহাটায় বিজেপি নেতার মৃত্যু রিপোর্টে তৃণমূলের স্বস্তি
#WATCH| Slogans were raised after West Bengal CM Mamata Banerjee arrived at the polling booth in Nandigram. pic.twitter.com/uhhSzfOknF
— ANI (@ANI) April 1, 2021
কিন্তু পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সেখানে কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানকে দেখা যায়নি৷ বুথের ভিতরে আধাসেনা থাকলেও বাইরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনও জওয়ানকে কেন দেখা গেল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷ পুলিশ বাহিনীও পর্যাপ্ত সংখ্যায় না থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই সংঘর্ষ বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়৷ এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীকে বুথের বাইরে আনার সাহস পাননি তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা৷
মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছনোর প্রায় আধ ঘণ্টা পর সেখানে প্রথমে পৌঁছয় RAF৷ তার পরে আসে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ গোটা ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বুথের ভিতরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি৷ ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই মানুষ ভোট দিক৷ কাউকে বিরক্ত করতে চাই না৷’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও অভিযোগ করেন, ‘এখানে ৮০ শতাংশ ছাপ্পা ভোট পড়ে গিয়েছে৷ আমরা কোর্টে যাব, লিগাল অ্যাকশন নিচ্ছি৷ কেন্দ্রীয় বাহিনী বিজেপি-র কথায় কাজ করছে৷ ওরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশে কাজ করছে৷ বাইরে সব হিন্দিতে কথা বলছে৷ এরা বাইরের লোক৷’
এ দিনের ঘটনার পর প্রশ্ন উঠছে, নন্দীগ্রামের মতো আসনে যে উত্তেজনা ছড়াতে পারে তা আগে থেকেই জানত নির্বাচন কমিশন৷ সেই মতো একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছিল৷ কিন্তু এতকিছুর পরেও কেন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেও পর্যাপ্ত সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মিলল না, সেই প্রশ্ন উঠছে৷ পরে ঘটনার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷
আরও পড়ুন: নারী পরিবেষ্টিত শুভেন্দু! নিরাপত্তায় এবার মহিলা সিআরপিএফ জওয়ান