নিজস্ব প্রতিবেদন : নেতাজি সুভাষের জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে কলকতার ভিক্টরিয়ায় সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দেখে উৎসাহিত ভক্তরা জয় শ্রী স্লোগান দেন। এর আগেও শান্তিনিকেতনে ভক্তরা এমন কাণ্ড করেছিল। এবারের মত সেবারও প্রধানমন্ত্রী ভক্তদের এমন উল্লাসে আপত্তি তোলেননি।
মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রতিবাদ করেন। প্রতিবাদ স্বরূপ তিনি পোডিয়ামে বসে থাকলেও কোনো কথা বলেননি। কেবল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন এটি রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। তাছাড়া যাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য অনুষ্ঠান ছিল, তিনি কোনো বিশেষ ধর্মের বন্ধনে নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ দেশপ্রেমী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। সেদিনও গোবলয়ের বহু নেতা তাঁর এই গগনচুম্বী ব্যাক্তিত্ব মেনে নিতে পারেনি।
আরও পড়ুন: বৈষম্যের ভাইরাস! লকডাউনে দেশের ধনকুবেরদের সম্পদ ৩৫ শতাংশ বেড়েছে, বেকার বৃদ্ধি লক্ষাধিক
শ্রী রামকে নিয়ে বিজেপির এমন নোংরা রাজনীতি বাংলার মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। রামের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই অনেকে বলেছেন, এটি শ্রী রামের নামে স্লোগান দেবার জায়গা ছিল না। ফলে চাপে পরে বিজেপি। বিষয়টি যে বুমেরাং হয়ে গিয়েছে বুঝতে পারেন শীর্ষ নেতৃত্ব। ‘পরিকল্পিত জয় শ্রীরাম স্লোগান’ দেওয়ার পিছনে যে তৃণমূল ফেরত সৌমিত্র এবং শঙ্কু রয়েছে সে খবর পেয়ে যায় বিজেপি নেতারা।
শুরু হয় কাউন্টার এট্যাক। বিজেপি এবার বলার চেষ্টা করে এর আগেও সরকারি অনুষ্ঠানে ইসলামী প্রার্থনা করেছিলেন মমতা। তারা ভিডিও সার্কুলেট করে। কিন্তু অচিরেই ধরা পরে যায়। যে ভিডিওটি তারা ছড়ায় তা এডিট করা হয়েছে। মমতা মুসলমনাদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট বলে হিন্দুদের মধ্যে বিদ্বেষ বাড়ানোর চেষ্টা চেষ্টা করেছে বঙ্গ বিজেপি। পুরো ভিডিওটি প্রকাশ করে অল্ট নিউজ বিজেপির লোকজনের ছক ফাঁস করে দিয়েছে।
নিজেদের মুখরক্ষা করতে বঙ্গ বিজেপি টুইটে লিখেছে, ‘যদি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের সরকারি অনুষ্ঠানে ইসলামী প্রার্থনা করতে পারেন না, তাহলে জয় শ্রীরামে তাঁর আপত্তি কেন?’
বিজেপি ১২ সেকেন্ডের একটি ক্লিপিং মূল ভিডিও থেকে কেটে ছড়িয়েছে। যাতে মমতাকে বলতে শোনা যাচ্ছে,’আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যাতে তিনি সকলকে ভালো রাখেন । এর পরই তাঁকে বলতে শোনা গেছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাললাহ, মুহামমাদুর রাসূল আল্লাহ।’
যে ভিডিওটিতে থেকে ১২ সেকেন্ড কেটে বিজেপি ছড়িয়ে তার সম্পূর্ণ অংশটি অলইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস আপলোড করেছিল। সেটি ছিল মাটি উৎসবের। 2018 এর জানুয়ারি মাসে এই ভাষণ দিয়েছিলেন মমতা। তাতে দেখা গিয়েছে ২১ টা ২৮ মিনিটে মমতা উচ্চারণ করেছেন মন্ত্র। ভাষণে তিনি বলেছিলেন ,’সর্বমঙ্গলা মঙ্গললে শিবে সর্বার্থ সাধিকে শরণ্যে ত্রিয়াম্বাকে গৌরী নারায়ণী নমস্তুতে।’ (“Sarva Mangala Mangalye Shive Sarvartha Sadhike Sharanye Tryambake Gauri Narayani Namostute…”) ইসলামী প্রার্থনার ঠিক ২২ মিনিট পরে তিনি এই মন্ত্র উচ্চারণ করেছিলেন। ২১ টা ১৫ মিনি তিনি বলেছিলেন, ‘মে গড ব্লেস ইউ।’ তার ঠিক পরে বলেছিলেন, ‘ওয়াহে গুরু জি দা খালসা, ওয়াহে গুরু দি ফাতেহ।'( “Wahe Guru Ji Da Khalsa, Wahe Guru Di Fateh.”)এর পর মমতা বলেছিলেন ‘সারে জাহাঁ সে আচ্ছা হিন্দুস্তান হামারা।’
ফেক খবর রুখতে বেশ কিছু ওয়েব সাইট অসাধারণ কাজ করছে। দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি ফেক খবর ছড়ায় বিজেপি। মোদী সরকার কাজ দিতে না পারলেও, বিজেপি নিজের উদ্যোগে বহু দিন ধরে কর্মসংস্থান করেছে। তাদের আইটি সেলে বেতনভুক কর্মীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। তাদের কাজ যেকোনও খবরকে হিন্দু-মুসলিমে ভাগ করে দেওয়া। কিন্তু ফ্যাক্ট চেক সাইট চলে আসায় বড় বিড়ম্বনায় পড়ছে তারা। সেই ফ্যাক্ট চেকের কারণেই বাংলায় আরও একদফা মুখ পুড়ল তাদের।
#NewsAlert | 'If CM Mamata Banerjee can recite an Islamic prayer at a West Bengal government event, why does she have a problem being greeted with Jai Shree Ram?', asks @BJP4Bengal.
Tamal Saha with details. pic.twitter.com/PrUyp5ZUOb
— TIMES NOW (@TimesNow) January 24, 2021
If CM Mamata Banerjee can recite an Islamic prayer at a West Bengal government event, why does she have a problem being greeted with Jai Shree Ram?
Appeasement?
She disgraced Bengal and insulted Netaji’s legacy by her conduct at the event to commemorate Netaji’s anniversary. pic.twitter.com/OpQ7MR60m2
— BJP Bengal (@BJP4Bengal) January 24, 2021
আরও পড়ুন: মাত্র ১% মানুষের হাতে দেশের ৫৮% সম্পদ! ‘অশ্লীল’ বলে ধিক্কার জানাল অক্সফ্যাম