আজ নন্দীগ্রামে সভা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যাওয়ার পরে নন্দীগ্রামে প্রথমবার যাচ্ছেন মমতা। এই সভায় তিনি কী বার্তা দেন সেই দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। অপরদিকে, এদিন পাল্টা কর্মসূচি নিয়েছে গেরুয়া শিবিরও। টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশন থেকে রাসবিহারীর মোড় পর্যন্ত র্যালি করবে বিজেপি। যার নেতৃত্বে থাকবেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। সপ্তাহের শুরুতে হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের কর্মসূচি ঘিরে তুঙ্গে বঙ্গ রাজনীতি।
২০০৭ সালে জানুয়ারির নন্দীগ্রাম আন্দোলনই বাংলায় পট পরিবর্তনের দিশা দেখিয়েছিল। যে আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মুখ শুভেন্দু অধিকারী। ৩৪ বছরের বাম-দুর্গের পতন ঘটিয়ে রাজ্যের মসনদে বসেছিল ‘মা-মাটি-মানুষের’ সরকার। তবে ২০২১-এর জানুয়ারিতে সে ছবিতে আমূল বদল। মমতা-শুভেন্দু এখন যুযুধান দুই পক্ষ। শুভেন্দু মমতার শিবির ছাড়লেও নন্দীগ্রামের সঙ্গে তাঁর নাম জুড়ে রাখতে চান। নন্দীগ্রাম আন্দোলন যে তাঁর নেতৃত্বেই সংগঠিত হয়েছিল সে বার্তাও দিতে চান। তৃণমূল প্রমাণ করতে মরিয়া, মমতাই নন্দীগ্রামের প্রকৃত নেত্রী।
এই পরিস্থিতিতেই এদিন নন্দীগ্রামের তেখালিতে জনসভা করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো। যে নন্দীগ্রামকে শুভেন্দুর গড় বলা হয়, সেখানে ৩ লক্ষের উপরে মানুষের জমায়েতের চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন শেখ সুপিয়ানরা। মমতার মুখ সামনে রেখে শুভেন্দু ছাড়াও যে জনপ্লাবন ঘটানো যায় সেটাই দেখাতে চান অখিল গিরিরা। আর এই সভাতেই থাকবেন না জেলার দুই সাংসদ। একজন কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী ও অন্যজন পুত্র তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী।
আরও পড়ুন: কে ডি সিংয়ের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা! আরও ১৫ জনকে জেরা করতে পারে ইডি
প্রায় এক দশক পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি থাকার পর গত ১৩ জানুয়ারি শিশিরবাবুকে সরিয়ে ওই পদে বসানো হয়েছে মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। ডানা ছেঁটে তাঁকে দেওয়া হয়েছে জেলা সংগঠনের চেয়ারম্যানের পদ। বর্ষীয়ান শিশির ভালই বোঝেন সেই পদের গুরুত্ব। তাই নিজে থেকেই নন্দীগ্রামে মমতার সভায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। সভায় যাবেন না তাঁর সাংসদ-পুত্র দিব্যেন্দুও। অধিকার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের তরফে নন্দীগ্রামে মমতার সভা নিয়ে কেউ তাঁদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেননি। তাই সভায় যাওয়ার প্রশ্ন-ই ওঠে না। সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতৃত্বও ঠিক এমনটাই চাইছে।
শিশিরবাবু তৃণমূলে থাকলেও সম্প্রতি দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন সংবাদমাধ্যমে। তাই তাঁকে সভায় আমন্ত্রণ জানালে, তিনি সভায় এসে কোনও বিরূপ মন্তব্য করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই সেই ঝুঁকির জায়গা থেকেই অধিকারীদের বয়কট করার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে শিশির জানিয়েছেন, পরিবার ছেড়ে রাজনীতি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। আর এমন অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার পরই তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব নতুন জেলা কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে, কোনও ভাবেই যেন আর অধিকারীদের সঙ্গে যোগযোগ না করা হয়। তাঁদের বাদ দিয়েই সাংগঠনিক কাজকর্ম করতে।
অন্যদিকে, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে এই প্রথম কলকাতায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থাকছেন শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার খেজুরিতে সভা করবেন শুভেন্দু।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খাস তালুকে এই প্রথমবার শক্তি দেখাতে নামছেন শুভেন্দু। সঙ্গী মমতার আরও এক পুরনো সৈনিক শোভন চট্টোপাধ্যায়। থাকবেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়, দিলীপ ঘোষও। টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপো থেকে শুরু হয়ে শুভেন্দু রোড শো পৌঁছবে রাসবিহারীতে। সেখানেই শুভেন্দুর জনসভা। মমতা-অভিষেকের এলাকায় দাঁড়িয়ে কী বার্তা দেন শুভেন্দু, শুনতে উন্মুখ রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন: ‘জয় বাংলা’ ডাক দিয়ে শিবসেনার বঙ্গে পা! ভাগ হয়ে যাবে কি সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট?