করোনা আবহে এবার মহরমে অন্যান্য বারের মতো জমায়েত করা যাবে না। মহরম উদ্যোক্তাদের কাছে একথা জানিয়ে দিল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ প্রশাসন।
মুঘল সাম্রাজ্যের সঙ্গে নানান যোগ রয়েছে বর্ধমান শহরের। সেই সময়কার বিভিন্ন স্থাপত্য ছড়িয়ে রয়েছে শহর ও তার আশপাশ এলাকাজুড়ে। সুপ্রাচীন কাল থেকে বর্ধমানে বিশেষ আড়ম্বরের সঙ্গে ঢাল নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। শহরের কালাপাহাড়ের ঢাল বিখ্যাত। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে আলো বাজনা সহ ফুল ফলে সাজানো সুবিশাল ঢাল বের করা হয়। তারই সঙ্গে চলে লাঠি খেলা, তলোয়ার খেলা সহ বিভিন্ন প্রদর্শন। সব জায়গা থেকে ঢাল নিয়ে শোভাযাত্রা করে বিভিন্ন রাস্তা ধরে তা বর্ধমান শহরের প্রাণকেন্দ্র কার্জন গেটে আসে। সেখান থেকে বি সি রোড হয়ে ঢাল যায় কারবালা-প্রান্তরে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে শহরের বাসিন্দারা সেই শোভাযাত্রা দেখতে বি সি রোডের দুধারে ভিড় করেন। বর্ধমান থানার সামনে মঞ্চ তৈরি করে সেখান থেকে মহরম কমিটিগুলিকে পুরস্কৃত করা হয়।
কিন্তু এবার সেই ঢাল বা তাজিয়া নিয়ে মিছিলে বাধ সাধছে করোনা সংক্রমণ। তা ঠেকাতে এবার ঢাল বা তাজিয়া নিয়ে মিছিল বন্ধ রাখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বর্ধমান কেন্দ্রীয় মহরম কমিটির সদস্যদের নিয়ে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হল পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অঙ্গীকার সভা কক্ষে। সেখানেই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহরমে শোভাযাত্রা বের না করার আবেদন জানানো হয়। প্রশাসনের এই আবেদনে সাড়া দিয়েছেন মহরমের উদ্যোক্তারা। বর্ধমান কেন্দ্রীয় মহরম কমিটি পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহরম পালিত হবে।
আরও পড়ুন: রাতভর বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ল ১৫০ বছরের পুরনো বাড়ি, মৃত্যু বৃদ্ধার
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বর্ধমান শহরে করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকার নিয়েছে। জেলার মধ্যে বর্ধমান শহরে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। একসঙ্গে সবাই মিলে ঢাল নিয়ে শোভাযাত্রা হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবে না। সে ক্ষেত্রে সেই জমায়েত থেকে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এবার আড়ম্বরের সঙ্গে মহররমের শোভাযাত্রা বের করার রীতি বন্ধ রাখার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, করোনা আবহে এই বছর লালবাগের ইমামবাড়ার মহরমে বেশ কিছু পরিবর্তন হবে। এখনও অবধি জানা গিয়েছে, এ বার শোকযাত্রা এই বছর কারবালা পর্যন্ত না নিয়ে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সমস্ত নিয়ম পালন হবে ইমামবাড়ার ভিতরেই।এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ আইন বিভাগের তরফে। এমনকি এই বছর ইমামবাড়ায় প্রবেশও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এই বছর মহরমে ইমামবাড়ার ভিতরে শুধুমাত্র নিজামত পরিবারের লোকজন ও স্থানীয় বাসিন্দা যাঁরা মহরমের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা ছাড়া আর কারও প্রবেশাধিকারও থাকছে না। যদিও এই বছর যাদের প্রবেশাধিকার থাকছে তাদেরও মানতে হবে একাধিক সরকারি নিয়ম এমনকি সকলকে ইমামবাড়াতে ঢোকানোর আগে থার্মাল স্ক্রিনিং করে হাত ভাল করে স্যানিটাইজ় করে মুখে মাস্ক লাগিয়ে তবেই ঢোকানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: করোনা পজিটিভ বাড়ির আরও ৪ জন, তবু নিজের করোনা পরীক্ষা করাতে নারাজ দিলীপ ঘোষ