Site icon The News Nest

চার নেতার জামিন মঞ্জুর হলেও আপাতত গৃহবন্দি রাখার নির্দেশ, উচ্চতর বেঞ্চে যাবে রাজ্য

4 leadesrs

নারদ কাণ্ডের পরতে পরতে যেন নাটকীয়তা। শুক্রবার হাইকোর্টের রায়ের পরেও সেই নাটকীয়তা যেন অব্যাহত রইল।

এদিন হাইকোর্টের শুনানির পর চূড়ান্ত রায়ে দুই বিচারপতির মধ্যে মতান্তর তৈরি হয়েছে। বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় দুই মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, ববি হাকিম ও দুই নেতা মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ের জামিন মঞ্জুর করার পক্ষে রায় দিয়েছেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের তাতে সায় নেই। ফলে আপাতত এই রায় ঘোষণা হয়েছে যে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হলেও এই চার নেতার জামিন মঞ্জুর হবে। তবে তাঁদের গৃহবন্দী হয়ে থাকতে হবে।

তা হলে মামলার নিষ্পত্তি হবে কী ভাবে? এই মামলার শুনানি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের নেতৃত্বে ডিভিশন বেঞ্চে হচ্ছিল। ফলে মামলার নিষ্পত্তির জন্য এখন তিন সদস্যের বা পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হতে পারে। কবে সেই বেঞ্চ গঠন করা হবে তা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জানাবেন।

এই অন্তবর্তী রায়ের অর্থ পরিষ্কার। তা হল সুব্রত, ববি সহ চার নেতাকে জেল হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। তাঁরা বাড়ি যেতে পারবেন। কিন্তু তাঁদের হাউস অ্যারেস্টে থাকতে হবে। মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেই নিয়ম বহাল থাকবেন। চার জনের মধ্যে তিন জনই এখন হাসপাতালে রয়েছেন। হাসপাতালে থাকা মানেও এক প্রকার গৃহবন্দিই থাকা। একমাত্র পরিবহণ মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম রয়েছেন প্রেসিডেন্সি জেলে। সেখান থেকে আপাতত জামিন পেয়ে বাড়িতে যেতে পারবেন পরিবহণ মন্ত্রী। তবে তাঁকে গৃহবন্দি থাকতে হবে।

বস্তুত করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় চার নেতার জামিন মঞ্জুর করার পক্ষে রায় দিয়েছেন। শুনানির সময়েও তিনি সিবিআইয়ের আইনজীবীকে বারবার এই সংক্রান্ত প্রশ্নই করেছিলেন। তা হল, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও গ্রেফতার কি খুব জরুরি ছিল? কারণ নারদ কাণ্ডের তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। তার চার্জশিট পেশ হচ্ছে। তদন্ত যখন শেষ হয়ে গিয়েছে, তখন গ্রেফতারের কি প্রয়োজন। কিন্তু এ নিয়েই মতভেদ তৈরি হয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দালের সঙ্গে।

আরও পড়ুন: স্বস্তির খবর, রাজ্যে এল কোভিশিল্ডের ২ লক্ষ ডোজ

গৃহবন্দি করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার মেহতা। উচ্চতর বেঞ্চে যাবেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। আদালতে নেতা-মন্ত্রীদের আইনজীবীর প্রশ্ন ছিল, ‘‘এঁরা সিনিয়র মিনিস্টার। এঁদের কোথাও যাওয়ার দরকার নেই, তাহলে কেন গৃহবন্দি করার সিদ্ধান্ত?’’

গ্রেফতারি তো গ্রেফতারিই। গৃহবন্দি করা হবে কেন? কোভিড পরিস্থিতিতে রাজ্যে ফিরহাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর অবর্তমানে অনেক জায়গায় স্যানিটাইজেশন করা যাচ্ছে না বলে আদালতকে জানান সিঙ্ঘভি। ফিরহাদ না থাকায় কোভিড পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়ছে রাজ্য। জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী জানালেন, ‘‘গৃহবন্দি হলেও উনি তো বাড়িতে থেকে কাজ করতে পারবেন।’’ সিঙ্ঘভির পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘একজন মন্ত্রীর পক্ষে সব কাজ বাড়িতে থেকে করা সম্ভব নয়। কোভিড পরিস্থিতিতে বাড়িতে বসে দফতরের ফাইল ছাড়বে কী করে?’’ সিঙ্ঘভি আদালতকে বললেন, ‘‘সাধারণ অভিযুক্তদের সঙ্গে এদের তুলনা করা হচ্ছে কেন? কোভিড পরিস্থিতিতে এদের দরকার।’’

কলকাতা হাই কোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও  বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে বুধবার নারদ মামলার দ্বিতীয় শুনানি হয়েছিল। মূলত, সিবিআইয়ের হাতে ধৃত ২ মন্ত্রী-সহ রাজ্যের ৪ হেভিওয়েট নেতার জামিনে যে স্থগিতাদেশ জারি করেছিল উচ্চ আদালত, তা খারিজের আবেদন নিয়ে দায়ের হওয়া মামলার শুনানি ছিল এদিন। পাশাপাশি, মামলার গুরুত্ব এবং নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তা অন্যত্র সরানো নিয়েও সিবিআইয়ের আবেদনটিও শোনার কথা ছিল বিচারপতিদের। তবে বুধবার দ্বিতীয় ইস্যু নিয়েই প্রায় আড়াই ঘণ্টা সওয়াল-জবাব চলে। ফলে জামিন মামলার শুনানি কার্যত হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর তা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়। শুক্রবার জামিন নিয়ে চলে শুনানি।  সকাল ১১টা থেকে নারদ মামলার শুনানি শুরুর কথা ছিল। যান্ত্রিক সমস্যার জন্য কিছুটা দেরি হয় ।

আরও পড়ুন: পালটা চাপ? আর্থিক তছরুপ মামলায় CID-র নোটিশ পড়ল অর্জুন সিংয়ের বাড়িতে

Exit mobile version