ঝড় আসেনি, অথচ, সেই ঝড়েই নাকি দিল্লিতে মুকুল রায়ের বাসভবন থেকে উড়ে গেল বিজেপির পোস্টার, প্ল্যাকার্ড। মাঝারি মাত্রার ‘ঝড়’-এ রেহাই পেল না নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদেরও ছবি। মুকুল-ঘনিষ্ঠদের দাবি, ঝড়-জলে উড়ে গিয়েছে সব!
মুকুল অনুগামীদের বক্তব্য, দলের মধ্যে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রাজ্য সম্পাদক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ছড়ি ঘোরানোর কারণে ‘দাদা’ কোণঠাসা হচ্ছিলেন। সেই অবস্থায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব চেয়েছিলেন মুকুল। কিংবা একুশের ভোটকে পাখির চোখ করে রাজ্য় বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ পদের দাবি জানিয়েছিলেন তিনি। তাহলে নিজের মতো করে ঘুঁটি সাজাতে পারতেন। নিজের সাংগঠনিক দক্ষতাকে কাজে লাগানোই ছিল মুকুলের উদ্দেশ্য। কিন্তু নিজের পছন্দমতো পদ পাচ্ছিলেন না বলে অনুযোগ মুকুল অনুগামীদের।
আরও পড়ুন: ‘পাঁপড় খাও করোনা ভাগাও’! অতিমারির তাড়াতে আজব দাবি বিজেপি মন্ত্রীর
কিন্তু দেখা গেল, দিল্লিতে থেকেও পশ্চিমবঙ্গের ভোট-প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক এড়িয়ে শুক্রবার কলকাতায় ফিরে গেলেন তিনি। সূত্রের বক্তব্য, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে মতান্তরের জেরেই কলকাতার উড়ান ধরলেন মুকুল। পাশাপাশি, এটাও মনে করা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছ থেকে তাঁর চাহিদামাফিক কোনও পদ পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসায় তিনি কিছুটা হতাশও। মুকুল নিজে অবশ্য এ দিনও কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে বলেছেন, ‘‘কোনও জল্পনার সুযোগ নেই। আমি চোখের চিকিৎসার জন্য তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছি।’’
এই নিয়ে প্রশ্ন করায় দিলীপবাবু বলেন, “মুকুলদা আমাদের জানিয়েই কলকাতা গিয়েছেন। করোনা-পরিবেশে তিনি সতর্কও থাকতে চাইছেন বয়সের কারণে। তবে দলের প্রস্তুতি-বৈঠকে তিনি ছিলেন। তার আগে ভিডিয়ো বৈঠকেও তাঁকে পাওয়া গিয়েছে।’’ বিজেপিতে কি গুরুত্ব কমছে মুকুলের? তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দিলীপবাবু বলেন, “আমাদের দলের গুরুত্বটাই আসল, কোনও ব্যক্তির নয়। দল যাকে যে ভাবে ব্যবহার করার প্রয়োজন মনে করে, তাকে সেই ভাবে কাজে লাগায়।’’
বিজেপির অন্দরের খবর, শুধু মেরুকরণের উপর ভর না করে সংখ্যালঘুদের মন জয়ের জন্য পূর্ণশক্তিতে ঝাঁপানোর বার্তাও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে দিয়েছিলেন মুকুল। কেন্দ্রীয় স্তরের নেতাদের শীর্ষ নেতাদের সবুজ সংকেত পেলেই তৃণমূলের ঘর ভাঙিয়ে আরও কয়েকজন নামভারী সংখ্যালঘু নেতাকে দলে টানার পরিকল্পনাও সেরে রেখেছিলেন। কিন্তু তাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের তরফে ইতিবাচক কোনও সাড়া মেলেনি। তারইমধ্যে দিলীপের সঙ্গে মুকুলের ‘তিক্ততা’ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বৈঠকের মাঝপথেই কলকাতায় ‘চোখের চিকিৎসা’-র জন্য ফিরে এলেন মুকুল।
রাজ্য বিজেপি-তে মুকুলকে নিয়ে দু’টি মত আছে। এক দল মনে করেন, মুকুলকে যা সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা-ই যথেষ্ট। অন্য অংশের মতে, মুকুলকে বঙ্গ বিজেপিতে কাজ করতে না দিয়ে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। আড়াই বছরেরও বেশি এই ভাবে কেটে যাওয়ায় মুকুল এখন খানিকটা অধৈর্যই। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে থেকেও দলীয় বৈঠক এড়ানো এবং শুক্রবার তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরে আসা তারই প্রকাশ বলেও বিজেপির ওই অংশের ব্যাখ্যা।
আরও পড়ুন: দেশের বৃহত্তম কোভিড সেন্টারে ধর্ষণ কিশোরীকে, গ্রেফতার দুই করোনা আক্রান্ত