ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে চাপে রয়েছে শাসক দল। ভোট ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। মিডিয়ায় এতদিন পর্যন্ত যে পীরজাদা সবথেকে বেশি মুখ দেখিছেন,তাঁর কথায় শাসক দল কতটা ভরসা পাচ্ছে তা স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ ।
এদিন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন সূর্য। তারপর সাংবাদিক বৈঠকে সূর্য বলেন, “আব্বাস সিদ্দিকি কী বলেছেন তার টেপ আমার কাছে আছে। উনি কখনও একটি ধর্মের কথা বলেননি। বরং ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। উত্তর ভারতে যাকে বহুজন বলা হয়। সমাজিক বৈষম্যের শিকার সবাই রয়েছেন সেখানে।”
ভাইজানের অনুগামীদের অনেকের বক্তব্য, ভাইজানের দলকে ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে অপপ্রচারের চেষ্টা হবে। কারণ ভাইজানের শক্তির আঁচ ওরা করে ফেলেছে। এদেশের রাজনীতির নিয়ম হল,কোনও মুসলিম, দল বানানোর চেষ্টা করলেই তাকে সাম্প্রদায়ীক বানিয়ে কুৎসা রটনা শুরু হয়ে যায়। অথচ ওই মুসলিম যদি নীতি ও মূল্যবোধহীন কোনো রাজনৈতিক দলের দাসত্ব করে তাতে অসুবিধা নেই। তারা মুসলিম ও দলিতদের সঙ্গে দিনের পর দিন প্রতারণা করলে সমস্যা নেই। তাদের ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে ব্যবহার করলে অসুবিধা নেই।কিন্তু ভাইজান প্রতারিত মানুষের কথা বললেই ওদের আপত্তি।
আরও পড়ুন: টুইটারে মোদীকে তীব্র আক্রমণের জের, সিনিয়র পাইলটকে বহিষ্কার করল GoAir
আবাস সিদ্দিকি আগেই নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি বলেছেন , “ভারতের সংবিধান ধর্মের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল গঠনে অনুমতি দেয় না। আমার উদ্দেশ্যও তা নয়। আমি গরিব হিন্দুর অধিকারের জন্যও লড়ব। আদিবাসীদের জন্যও লড়ব। কিন্তু ভাই, বামফ্রন্ট জমানায় আমিই তো দেখেছি, কোনও না কোনও পীরজাদা ধর্মীয় মঞ্চ থেকেই মুসলিম ভাইদের ঠেলে বামপন্থী গঙ্গার জলে ফেলেছেন। আবার তৃণমূল ক্ষমতায় এলে দেখেছি, মঞ্চে তাঁদের হাত ধরে সেই পীরজাদা বলছেন, ইনিই আমাদের ক্যান্ডিডেট!”
আব্বাস স্পট করে দিয়েছেন, তিনি সুবিধাবাদী নন। ক্ষমতার ছায়ায় থেকে ‘ধান্দা’ করার বান্দা তিনি নন। ধর্মের নামে রাজনৈতিক সুড়সুড়ি দেওয়া তাঁর কাজ নয়। তিনি নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি হতে চান। তিনি বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হতে চান।আব্বাস মানুষের প্রতি আস্থাশীল। তিনি স্পষ্ট বুঝছেন, তাঁর পথে যাঁকে বাধা হিসাবে দাঁড় করানোর চেষ্টা হবে তিনি তাঁর আপনজন। আব্বাস অনুগামীদের কেউ কেউ বলেছেন, ইতিহাস খুললে দেখবেন, প্রবল বাধা দেবার কাজটা আবু লাহাব, আবু জেহেলের মত অত্যাচারী ও প্রতারকরাও করছিল। কিন্তু আরবের দুলালকে থামাতে পারেনি।
কেউ কেউ বলছেন ,আব্বাস সিদ্দিকী আসলে বিজেপির সুবিধা করে দেবে। আব্বাসের অনুগামীদের দাবি , এটা চিরদিনই কোনও না কোনও দলের জন্য বলা হয়ে থাকে। তৃণমূল যখন প্রথম এসেছিল তখন তারা কংগ্রেসেরই ভোট কেটেছে। তারা তো ভোট কাটুয়া হিসাবেই এসেছিল। সেদিন কে জানত মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হবেন? কার অসুবিধা হবে, একথা ভেবে কেউ দল গড়ে না। দল হয় সময়ের দাবি মেনে। মানুষের দাবি মেনে। আর এখন মানুষ আব্বাস ভাইজনাকে চাইছেন।
আরও পড়ুন: সিংঘু সীমান্তে ফের আত্মঘাতী কৃষক, সরকারকে দাবি মানার শেষ আর্জি