১০ তারিখ বলেছিলেন, “লড়াইয়ের ময়দানে দেখা হবে।” রামনগরের সভা থেকে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করলেন না শুভেন্দু অধিকারী। উল্টে বললেন, ‘‘আমি এখনও দলের প্রাথমিক সদস্য। রাজ্য মন্ত্রিসভারও সদস্য। দলের নিয়ন্ত্রকরা আমাকে তাড়াননি। আমিও দল ছাড়িনি। মুখ্যমন্ত্রী আমায় মন্ত্রিসভা থেকে তাড়ািয়ে দেননি। আমিও ছাড়িনি। যে ক’টি পদে আছি, সবকটিতেই আমি নির্বাচিত। মন্ত্রিসভায় থেকে দলের বিরুদ্ধে আমি কথা বলব না।’’
তা হলে কী দাঁড়াল? শুভেন্দু অধিকারীকে কেন্দ্র করে এই যে এত আলোচনা, এত কৌতূহল, শাসক দলে উৎকণ্ঠা, বিরোধী শিবিরে উৎসাহ… সব কি গলে জল হয়ে গেল?রাজ্যের রাজনৈতিক মহল মনে করেছিল, দলবদল নিয়ে প্রবল জল্পনার মধ্যেই রামনগরে বৃহস্পতিবার তাঁর ঘোষিত ‘মেগা শো’ থেকে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে দেবেন শুভেন্দু।
তাঁর ভাষণে তেমনকিছু দিশা তো মেলেইনি। উল্টে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘সমবায়ের মঞ্চ থেকে কোনও রাজনৈতিক কথা বলা যায় না। নীতি-আদর্শ বিসর্জন দিয়ে কাজ করার লোক আমরা নই। এই সভা নিয়ে সংবাদমাধ্যম অনেক হাইপ তুলেছিল। আমি বলেছিলাম মেগা শো হবে। সেটা সমবায়ের শো।’’
আরও পড়ুন: আজ প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর জন্মদিন, দেখে নিন তার কিছু বাণী
শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘দল করতে বিভিন্ন কারণে গেলে বিভেদ আসে। বিভেদ থেকে বিচ্ছেদও আসে। কিন্তু যতক্ষণ মন্ত্রিসভায় আছি বা দলে আছি, ততক্ষণ কোনও রাজনৈতিক কথা বলা যায় না। আমি সেটা বলতে পারি না।’’ সে কথা বলার আগেই শুভেন্দু বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর নির্বাচিত হওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘ওটা পেশার মতো করিনি। নেশার মতো করেছি।’’
কদিন আগে শুভেন্দু নিজেই বলেছিলেন, ১৯ নভেম্বর রামনগরে ‘মেগা শো’ হবে। এদিনের সভা ছিল সমবায় আন্দোলনের অনুষ্ঠান। যেহেতু উনি বলেছিলেন ‘মেগা শো’ হবে, তাই অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, আজই বুঝি বোমা ফাটাবেন তিনি।
রামনগরের মঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু এদিন বলেন, “যাঁরা হাইপ করেছেন, তাঁদের দায়িত্ব। সমবায় তথা অরাজনৈতিক মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি রাজনীতির কথা বলব না। শুভেন্দু অধিকারী স্থান-কাল-পাত্র জানেন।” তিনি এও বলেন, “দল করতে বিভিন্ন কারণে গেলে বিভেদ আসে। বিভেদ থেকে বিচ্ছেদও আসে। কিন্তু যতক্ষণ মন্ত্রিসভায় আছি বা দলে আছি, ততক্ষণ কোনও রাজনৈতিক কথা বলা যায় না। আমি সেটা বলতে পারি না।’’
প্রসঙ্গত, প্রথমে শুভেন্দুর ওই সভা হওয়ার কথা ছিল বেলা ১১টায়। বুধবার রাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই সভা হবে দুপুর ২টোয়। সভায় শুভেন্দু বক্তৃতা করতে শুরু করেন বেলা ৩টের পর। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘সমবায়মঞ্চ থেকে রাজনৈতিক কথা বলা যায় না। তাই এখানে রাজনীতির কথা বলব না। আমি বিদ্যাসাগরের মাটির লোক। অনৈতিক কিছু করব না কোনওদিন।’’
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, শুভেন্দু যথেষ্ট কৌশলী। রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলছেন। উনি এখনও তৃণমূলের সদস্য। সেই সঙ্গে মন্ত্রিসভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের মন্ত্রী। সুতরাং পদে থেকে দল বা সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কিছু বলা শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। তা ছাড়া তিন দিন আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন তৃণমূলের এক প্রবীণ সাংসদ।
শুভেন্দু তাঁর ক্ষোভ ও অসন্তোষের কথা তাঁকে জানিয়েছেন বলে খবর। এও জানা গিয়েছে, তিনি দুটি পরিষ্কার শর্তের কথা বলেছেন। তা হল, প্রশান্ত কিশোরকে দল তথা সংগঠনের ব্যাপার স্যাপার থেকে সরাতে হবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সরাতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাসরি সংগঠন দেখতে হবে। তাঁর সেই শর্ত নিয়ে দল কী বিবেচনা করেছে তাও সম্ভবত ওই প্রবীণ সাংসদ এখনও তাঁকে জানাননি।
গতকাল সুখেন্দুশেখর রায় বলেছিলেন, শুভেন্দু এখনও তৃণমূলের সদস্য। কিছুটা সেই সুরেই শুভেন্দু জানিয়ে দিলেন, তিনি এখনও জোড়াফুলের শিবিরেই আছেন।
আরও পড়ুন: ড্রাইভার-স্টাফ কোভিড পজিটিভ, হোম আইসোলেশনে সলমন খান