এবার স্টেট ব্যাটে খেলতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, যে যেখানে যেতে চায় যাক। তিনি মমতা। তিনি নেতা বানান। বহু নেতা তৃণমূলে রয়েছে যারা নেতা হয়েছেন কেবল মমতা চেয়েছেন বলে। তাদের কেউ চিনতো না। অথচ এই নেতারা পরে ঘরশত্রুর ভূমিকা নিয়েছেন। মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন দুষ্ট গুরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভালো।
শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছিল। তাঁর কাঁথির বাড়িতেও গিয়েছিলেন তৃণমূলের ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোর। অন্তত দু’দফা আলোচনা হয়েছিল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। কিন্তু সে সব আর নয়। দলের অন্দরে তথাকথিত ‘বিদ্রোহী’ এবং ‘বিক্ষুব্ধ’-দের আর কোনও রেয়াত করা নয়। বরং দলীয় শৃঙ্খলারক্ষায় যে এবার তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহে তা স্পষ্ট।
মমতা যা চাইছেন তা যেকোনও সৎ ও সুস্থ চেতনার মানুষ চাইবেন। তিনি চাইছেন যারা বিজেপিতে যাবে বলে ঠিক করে নিয়েছে তাদের নিয়ে আর আলোচনা করে লাভ নেই। তাদের ছেড়ে দিতে হবে। বরং কোনও কারণে যারা দলের ওপর কিছুটা ক্ষুন্ন , খানিকটা অভিমান নিয়ে যারা দলে রয়েছেন, তাদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে । তাদের কথা শোনা যেতেই পারে।
এমনিতে রাজনীতিবিদদের যত অভিমান ঝরে পরে ভোটের আগে। এটা হল তাদের দর বাড়ানোর সময়। পুরোনো ক্লাবে থাকবেন, নাকি বাড়তি লাভের আশায় নতুন ক্লাব জয়েন করবেন, তা ঠাণ্ডা মাথায় এই সময় ঠিক করেন তারা। যদি আঁচ করেন এবার হয়ত টিকিট নাও মিলতে পারে, তাহলে অন্য সুর শোনা যায় তাদের গলায়।
প্রথমে হাওড়ায় বৈশালী ডালমিয়া। তার পর নদিয়ায় পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় এবং মঙ্গলবার হুগলিতে বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল — কালক্ষেপ না করে এই তিনজনের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে তৃণমূল। বৈশালীকে সরাসরি বহিষ্কার করা হয়েছে। পার্থকে দলীয় পদ থেকে সরানো হয়েছে। প্রবীরকে করা হয়েছে শোকজ।
প্রথম এবং তৃতীয়জন দলের অন্দরে ‘অসুখ’-এর কথা প্রকাশ্যে বলেছেন। আর পার্থকে সরানো হয়েছে বিজেপি-যোগের অভিযোগে। তবে একইসঙ্গে এ-ও ঠিক যে, বৈশালী এবং প্রবীর বিজেপি-র সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন বলে সন্দেহ করছে তৃণমূল ভবন। কারণ, প্রকাশ্যে দল সম্পর্কে ‘বিরূপ’ মন্তব্য করলেও অভিনেত্রী-সাংসদ শতাব্দী রায় এবং প্রাক্তন ফুটবলার-সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনার রাস্তাই নেওয়া হয়েছে। তাতে কাজও হয়েছে।
সোমবারই হুগলির পুরশুড়ার জনসভা থেকে ‘বিদ্রোহী’-দের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘যাঁরা দল ছেড়ে যেতে চান, তাঁরা তাড়াতাড়ি চলে যান। নইলে ট্রেন ছেড়ে দেবে।’’
পিকে আসার পর থেকে তৃণমূলের কিছু নেতা বেজায় ক্ষুব্ধ। যারা তৃণমূলকে তাদের জমিদারি মনে করেছিল এমন নেতারা চাপে পড়ছেন। দিদিমনির কাছে সব খবর চলে যাচ্ছে। এতদিন সেসব খবর সেন্সর করে যেত। কে কোথায় কার সঙ্গে ঘোঁট পাকাচ্ছে, সে খবর চলে যাচ্ছে দিদিমণির কাছে। একথা অস্বীকারের কোনও জায়গা নেই যে এ রাজ্যের মানুষ কুর্সিতে মমতাকেই চান। বিজেপিকে যারা পছন্দ করেন, তারাও অনেকে মমতার জায়গায় দিলীপ ঘোষকে মেনে থেকে মেনে নিতে পারছেন না।
আরও পড়ুন: ‘দাদা আমি সাতে পাঁচে থাকি না’! রুদ্রনীলকে ফেসবুকে বিঁধলেন অনিকেত