বাংলার মেয়ে বনাম গুজরাটি মোদী। চলছে ভোট লড়াই। দু’জনেই হুঙ্কার ছাড়ছেন। অনেকে বলছেন ‘খেলা হবে’ স্লোগানের ব্যাপকতায় খানিকটা ম্লান হয়ে গিয়েছে ‘জয় শ্রীরামের’ রণ হুঙ্কার। বঙ্গ বিজেপির ভরসা সেই মোদী। আর মোদীর ভাষণ মানেই দিদি…ইই। এবারের নির্বাচনে বিজেপি ইস্যু ছাড়া খেলতে শুরু করেছিল। তবে ইস্তেহার প্রকাশ মতান্তরে তৃণমূলের ইস্তেহার কপি করার পর থেকে খানিকটা উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছেন বিজেপির ‘পরিযায়ী’ নেতারা।
শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে ছিল মমতার সভা।সভায় তাঁর মন্তব্য, ‘বিজেপি থেকে সাবধান, ওদের হাতে আছে স্টেনগান।’’ রায়দিঘির তৃণমূল প্রার্থী অলক জলাদাতার সমর্থনে স্টেডিয়াম মাঠে আয়োজিত সভায় মমতা বলেন, ‘‘গত পরশু দিন নন্দীগ্রামে গিয়েছি একটা গ্রামে। রবীন মান্নার বউ আমাকে বলছে, ‘দিদি, আমার মেয়েকে বলছে তুলে নিয়ে যাবে। দিদি আমার বাচ্চাটাকে বলছে বাচ্চাটাকে কিডন্যাপ করবে। আমি বললাম তোমরা আছ কোথায়?’
মমতার দাবি, বিজেপি-র বহিরাগত গুন্ডাদের ভয়ে ওই মহিলাকে স্থানীয় একটি সংখ্যালঘু পরিবারের কাছে আশ্রয় নিতে হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার বিধানসভা ভোটের সময় নন্দীগ্রামের বয়াল-২ পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপি-র সঙ্গে সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েছিলেন তৃণমূল কর্মী রবিন।
আগামী ৬ এপ্রিল তৃতীয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে রায়দিঘিতে। শনিবার সেখানকার ভোটদাতাদের উদ্দেশে মমতার সতর্কবাণী, ‘‘ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে থেকে ওরা দিল্লির পুলিশ নিয়ে গিয়ে ‘থ্রেট টেট (হুমকি) করবে। ভয় পাবেন না। চুপচাপ বলবেন, ঠিক আছে আছে। আর নিজের ভোটটা নিজে সকাল সকাল গিয়ে দিয়ে আসবেন।’’ পাশাপাশি তাঁর পরামর্শ, ‘‘ভিতরে যদি পুলিশের লোকগুলো গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বলবে, ‘ইউ আর আউটসাইডার’। তুমি পুলিশের লোক, সিআরপিএফ, তুমি বাইরে দাঁড়াও। ভোটকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়াও। তুমি ‘ইনসাইড দি বুথ’ দেখতে পাবে না কে ভোট দিচ্ছে।’’
তৃণমূল নেত্রী আরও বলেন, ‘ভোটের মেশিন ভাল করে দেখে নিন। প্রথমে ৩০টি ভোট দেখে নেবেন, কোথায় কোন ভোট পড়ছে। ভোট পাহারা দেওয়ার সময় দেখবেন, কোথাও যেন কারওর থেকে কিছু খাবেন না। ভোটি জিতলে আমি খাওয়াবো। পুলিশ হুমকি দিলে, বিজেপি টাকা দিলে ভিডিয়ো রেকর্ড করুন। ভাইরাল করে দিন। বিজেপি-কে একটিও ভোট দেওয়া চলবে না। খেলব, লড়ব, গড়ব, জিতব। প্রথমে বাংলা থেকে বিজেপি-কে খালি করব, তারপর দিল্লি থেকে বিজেপি-কে খালি করবেন সাধারণ মানুষ।’
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের স্বভাব সিদ্ধ ঢঙে বলেন, ‘ভোলে বাবা পার লাগাও, বাংলা ভাগ রুখে দাও। একটু বিজেপি-র গুন্ডাদের রুখবেন মেয়েরা। পুলিশ ভয় দেখালেও ভয় পাবেন না। মেয়েরা সামনে থেকে লড়াই করবে না। হাতাখুন্তি নিয়ে খেলা হবে। বিজেপি-র মাঠ খালি করতে হবে। এমন করে ভোট দেবেন, বিজেপি যাতে বোল্ড আউট হয়ে যায়। ওরা পাপী, ওদের ভোট দেবেন না। বাংলা কথাটা বলতে ওদের লজ্জা লাগে।’
তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করলেন, গুন্ডা আনতে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন মোদী। সেইসঙ্গে বিজেপির ‘অনুপ্রবেশ’ অস্ত্রের পালটা হিসেবে তাঁর কটাক্ষ, ‘অন্য সময় বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপ্রবেশকারী নিয়ে আসছেন। আর নির্বাচনের সময় (নিজে) ভোট চাইতে গিয়েছেন।’
শনিবার কুলপির জনসভা থেকে মমতা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ভিনরাজ্যের পুলিশ বাহিনী গ্রামে গিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। বলেন, ‘(কেন্দ্রীয় বাহিনী) গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভয় দেখাবে। সীমান্ত এলাকায় (ভয়) দেখাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে ভয় দেখাবে। যার জন্য উনি (নরেন্দ্র মোদী) বাংলাদেশে ঘুরে এসেছেন। ওখান থেকে মনে হয়, কিছু আমদানি করছেন। করতেই পারেন। অন্য সময় বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনুপ্রবেশকারী নিয়ে আসছেন। আর নির্বাচনের সময ভোট চাইতে গিয়েছেন। গুন্ডা আনতে গিয়েছেন।’
আরও পড়ুন: ‘ফুরফুরার চ্যাংড়া’ বললেন দিদি, আব্বাস বললেন ‘অহংকারী’