প্রকট সম্ভাবনাময় মুখের অভাব, পাশ করা ছাত্রদের ফের পরীক্ষায় বসলো বঙ্গ–বিজেপি

সাংসদদের টিকিট দিয়ে বিধায়ক আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করানো আসলে সম্ভাবনাময় মুখের অভাবকেই প্রকট করে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

প্রথম দু’‌দফার প্রার্থী তালিকায় সাংগঠনিক নেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আর রবিবার দুপুরে বাংলার তৃতীয় ও চতুর্থ দফা ভোটের জন্য ৬৩ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অরুণ সিং। আর তাতেই দেখা গেল, বাবুল সুপ্রিয়, স্বপন দাশগুপ্ত, লকেট চট্টোপাধ্যায়দের মতো সাংসদদের প্রার্থী করল দল। সুতরাং দল ভাঙিয়ে যাদের নেওয়া হল তাদের সুযোগ দেওয়া হল না। ইতিমধ্যে শোভন–বৈশাখী বিজেপি ছাড়তে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে গেরুয়া শিবিরে ডামাডোল শুরু হয়ে গিয়েছে।

আবার বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন চার সাংসদ।হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এবং কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক প্রার্থী হলেন। এ ছাড়াও প্রার্থী করা হয়েছে রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, পরবর্তী তালিকায় আরও কয়েকজন সাংসদের নাম থাকতে পারে। রাজ্যসভা সাংসদ অভিনেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও থাকতে পারে সেই তালিকায়। কিন্তু সাংসদ এমন কী কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকেও কেন বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে, রাজ্য বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতার দাবি, ‘‘আমরা ক্ষমতায় আসছিই। মন্ত্রিসভা কেমন হবে তার স্পষ্ট ছবি রয়েছে প্রার্থী তালিকাতেই।’’ যদিও পাল্টা আক্রমণ শানাচ্ছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র তথা রাজ্যের মন্ত্রী তাপস রায় বলেন, ‘‘বিজেপি-তে এখন নতুন ও পুরনোদের মধ্যে প্রবল লড়াই। সে সব মেটানোর পাশাপাশি প্রার্থী হওয়ার মতো মুখেরও অভাব। সেই দৈন্যই প্রকাশ পেয়েছে প্রার্থী তালিকায়।’’

যে তিন জন লোকসভার সাংসদ প্রার্থী হয়েছেন তার মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাবুল। পরপর দু’বার লোকসভা নির্বাচনে আসানসোল আসন থেকে জিতেছেন বাবুল। দু’বারই জায়গা পেয়েছেন নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভায়। এ বার নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ে জয়ের সম্ভাবনা দেখা বিজেপি বিধানসভাতেও চাইছে সাংসদ বাবুলকে। বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গায়ক বাবুল প্রার্থী হচ্ছেন টালিগঞ্জ আসন থেকে। প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই কেন্দ্র বিজেপি-র কাছে মোটেও ‘সুবিধাজনক’ নয়। ২০১৯ সালে যাদবপুর লোকসভার অন্তর্গত টালিগঞ্জ বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের থেকে বিজেপি পিছিয়ে ছিল প্রায় ৩২ হাজার ভোটে। তবে রাজনৈতিক মহলে এমন জল্পনা রয়েছে যে, নন্দীগ্রামের পাশাপাশি টালিগঞ্জ থেকেও ভোট লড়তে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন ইঙ্গিত তিনি নিজেই দিয়ে রেখেছেন। সেটা যদি হয় তবে নন্দীগ্রামের পাশাপাশি টালিগঞ্জও হয়ে উঠবে ‘ভিভিআইপি’ আসন। বিজেপি সূত্রে খবর, তেমনটা আন্দাজ করেই বাবুলে ভরসা রাখছে বিজেপি। তবে আপাতত বাবুলের প্রতিদ্বন্দ্বী রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।

অন্য দিকে, কলকাতারই কোনও কেন্দ্র থেকে রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তকে প্রার্থী করা হবে বলে ভাবা হচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁকে হুগলির তারকেশ্বর আসন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজেপি-তে তাত্ত্বিক নেতা হিসেবে পরিচিত স্বপনকে কো ‘সুবিধাজনক’ আসনে প্রার্থী করার কথা আগেই ভেবেছিল বিজেপি। সেই হিসেবে তারকেশ্বরকে বিজেপি-র পক্ষে খুব ‘সুবিধাজনক’ না বলা গেলেও বিজেপি-র ওই এলাকায় দলের সাংগঠনিক শক্তি বেড়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে আরামবাগ আসনে মাত্র ১,১৪২ ভোটের ব্যবধানে হেরেছিল বিজেপি। তবে আরামবাগ লোকসভার অন্তর্গত তারকেশ্বরে বিজেপি পিছিয়ে ছিল প্রায় ৫ হাজার ভোটে।

আরও পড়ুন: কতই রঙ্গ…! এবার বিজেপি ছাড়লেন শোভন – বৈশাখী

রাজ্য বিজেপি-র সাধরণ সম্পাদক তথা সাংসদ লকেট প্রার্থী হয়েছেন চুঁচুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে। তাঁর হুগলি লোকসভার মধ্যেই এই বিধানসভা এলাকা। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রার্থী হতে বলার পরে লকেট নিজেই এই আসন থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। গত লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে বিজেপি ওই আসনে ২০ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিল।

অন্য দিকে, কোচবিহারের সাংসদ নিশীথ বিজেপি-তে নতুন হলেও ইতিমধ্যেই দলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি অমিত কোচবিহারে সমাবেশ করার আগে অসমে রাজবংশীদের রাজা হিসেবে পরিচিত অনন্ত রায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। তাতেও অমিতের সঙ্গী ছিলেন নিশীথ। এ বার তিনি প্রার্থী কোচবিহারের দিনহাটা আসন থেকে। লোকসভা ভোটে এই আসনে ১৫ হাজারের বেশি ভোটে এগিয়ে ছিলেন নিশীথ।

কিন্তু কেন একঝাঁক সাংসদকে প্রার্থী করা হল? বিজেপি সূত্রে খবর, ঝড়ের গতিতে বক্তৃতা ও এলাকায় জনপ্রিয়তার দিকে খেয়াল রেখেই একাধিক আসনে দাঁড় করানো হয়েছে সাংসদদের। তবে জানা গিয়েছে, সামনের বছরই রাজ্যসভায় মেয়াদ শেষ হচ্ছে স্বপন দাশগুপ্তের। তাই তার আগেই বাংলার লড়াইয়ের জন্য তাঁকে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল।

এই প্রার্থী তালিকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া, বিজেপি দাবি করে তাঁদের নেতার অভাব নেই। তাই যদি হবে তাহলে পাশ করা ছাত্রদের ফের পরীক্ষায় বসানোর প্রয়োজন কী?‌ স্বপন দাশগুপ্তের অবশ্য সাফাই, ‘‌তৃণমূল কংগ্রেসকে হারানোই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। বাংলার পরিবেশ পরিবর্তন করতে হবে। তার জন্য সাংসদ কেন, সমস্ত স্তরের মানুষদেরই যোগদান প্রয়োজন।’‌

আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফায় ৩৪ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা ঘোষণা কংগ্রেসের – টিকিট মান্নান, শংকর, দেবপ্রসাদ, মনোজদের

 

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest