নন্দীগ্রামে ‘প্রলয়’ কাণ্ড! সাহায্য চেয়ে বিজেপি নেতাকে মমতার ফোন, ভাইরাল ‘অডিয়ো টেপ’

প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামে ভোট আগামী ১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার। তার আগে শনিবারেই ওই ফোন কথোপকথন হয়েছে বলে দাবি।
Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest

প্রথম দফার ৩০টি আসনে যখন বাংলায় ভোটগ্রহণ চলছে, তখনই রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় একটি অডিয়ো টেপ ঘিরে। ওই অডিয়ো টেপের সত্যতা The News Nest যাচাই করেনি।

তবে রাজ্য বিজেপি-র দাবি, ফোনের একপ্রান্তে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্য প্রান্তে বিজেপি-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রলয় পাল। ওই অডিয়ো টেপে শোনা যাচ্ছে, এক মহিলাকণ্ঠ (যা মমতার বলে দাবি) প্রলয়ের কাছে ভোটে সাহায্য করার আবেদন জানাচ্ছে। যদিও প্রলয় ওই আবেদনকারিণীকে বলছেন, দলের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি তৃণমূলকে সমর্থন করবেন না।

প্রসঙ্গত, নিজের দলের পুরনো কোনও কর্মীকে তাঁর প্রাক্তন নেতা বা নেত্রী ফোন করতেই পারেন। তাতে অন্যায় বা অস্বাভাবিক কিছু নেই। সেক্ষেত্রে ওই কণ্ঠস্বর যদি মমতারও হয়ে থাকে, তাতেও কিছু অস্বাভাবিক নেই। কিন্তু যে ভাবে ওই মহিলাকণ্ঠ তাঁকে সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়েছেন, তাতে এমন একটা ধারণা তৈরি হওয়ার অবকাশ রয়েছে যে, খানিকটা বিপাকে পড়েই ওই ফোন করা হয়েছে। পাশাপাশিই, যে শান্ত অথচ দৃঢ় ভাবে ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে সেই সাহায্যের আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা-ও প্রণিধানযোগ্য। প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রামে ভোট আগামী ১ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার। তার আগে শনিবারেই ওই ফোন কথোপকথন হয়েছে বলে দাবি।

ইতিমধ্যেই ওই অডিয়ো টেপটি নিয়ে প্রচারে নেমেছে বিজেপি। দলের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য টুইটে দাবি করেছেন, নন্দীগ্রামে মমতা নিজের হার নিশ্চিত বুঝতে পেরেই এখন বিজেপি-কে ভাঙার চেষ্টা করছেন। অন্য দিকে, তৃণমূলের পক্ষে লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ওই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এমন কিছু বলতে পারেন বলে আমার মনে হয় না।’’

আরও পড়ুন: গুলিবিদ্ধ হত বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লা ঘনিষ্ঠ, ভোট আবহে থমথমে টিটাগড়

কী রয়েছে ওই অডিয়ো টেপে?

প্রলয় পাল: হ্যাঁ দিদি, বলুন।

মহিলাকণ্ঠ: তুমি তো অনেক ইয়ং ছেলে। অনেক কাজ করো আমি জানি। এবার একটু তুমি একটু আমাদের সাহায্য করে দাও না। দেখবে কোনও অসুবিধা হবে না।

প্রলয়: দিদি, এবার আমি বলি আপনি একটু শুনুন। আপনাকে দেখেই কিন্তু আমার পরিবার রাজনীতি করেছিল।

মহিলাকণ্ঠ: আমি জানি সব।

প্রলয়: আপনার আদর্শের ভিত্তিতেই সব করেছিলাম। দিদি, যেদিন আপনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন, ’১১ সালে যেদিন আপনি শপথ নেন। বা যেদিন রেজাল্ট বের হয় আর আপনি ক্ষমতায় আসছেন বুঝে নিয়েছিলাম। সে দিন পাঁচ জন ব্রাহ্মণকে দিয়ে হোমযজ্ঞ করে আমি কিন্তু মিটিং-মিছিল করেছিলাম। কিন্তু খারাপ লাগে দিদি, এত ত্যাগ করার পরও যখন প্রলয় পাল এসসি সার্টিফিকেট পায় না। এর থেকে লজ্জার আর কিছু থাকতে পারে না।

মহিলাকণ্ঠ: এটা কে করেছিল তুমি জানো। তোমাদের ওখানে যে লিডার ছিল, সে আমাদের নন্দীগ্রামে যেতে দিত না। এবং সে আমাকে নন্দীগ্রামে ঢুকতে দিত না। সারা মেদিনীপুরে ঢুকতে দিত না। তাদের জমিদারি চলত। তুমি তো সবই জানো ভাই।

প্রলয়: দিদি আমি রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট পাব না এটা হতে পারে?

মহিলাকণ্ঠ: আরে আমি আছি কী করতে? যে করেছে সে অন্যায় করেছে।

প্রলয়: আমি মার খেয়েছি। দিদি, আপনার মহাদেবের হাতে তো মার খেয়েছি।

মহিলাকণ্ঠ: আমি জানি, আমি সব জানি। পরে সব শুনেছি। আগে তো আমি এত ডিটেলসে খবর নিতাম না। যে হেতু আমি এবার নিজে গিয়েছি, তাই আমি এ বার নিজেই সব খবর নিচ্ছি।

প্রলয়: দিদি, আপনি যা-ই মনে করুন না কেন, আমি এখন দল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছি। যে দলের সঙ্গে আমি আছি, সেই দলের সঙ্গে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারব না। আমি যখন যে দল করি, আমি মন দিয়ে প্রাণ দিয়ে সেই দল করি। আমরা পরিবারও তাই করে। আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে কেউ আঙুল তোলার মতো দু’নম্বরি বলার মতো কারও ক্ষমতা হবে না। ভবিষ্যতেও থাকবে না। এমন অভিযোগ করার কারও ক্ষমতা ছিল না। আগামী দিনেও থাকবে না।

মহিলাকণ্ঠ: সব ঠিক। এ বার তুমি আমাকে একটা কথা বলো। যাদের জন্য করছ, তারা তো কোনওদিনও বিজেপি করেনি। এখন যারা করছে, তাদের কি তুমি বিশ্বাস করো, তারা অনেস্ট? তাদের তুমি বিশ্বাস করো যে তারা মানুষের জন্য কাজ করবে?

প্রলয়: দেখুন দিদি, যতদিন দল ঠিক থাকবে ততদিন দলের সঙ্গে থাকব। আমাকে আমার বিবেক জন্ম দিয়েছে। দল তো আর জন্ম দেয়নি। দলে কোনও অন্যায় হলে আমি কেন মানতে যাব ?

মহিলাকণ্ঠ: তার মানে আমি বলছি, যে তোমাদের ওখানে লড়ছে, সে কি তোমাদের কাছে সব?

প্রলয়: ওই পরিবার, যখন আমরা সিপিএমের কাছে অত্যাচারিত হতাম, তখন কিন্তু ওই পরিবার পাশে ছিল। ওই জায়গা থেকে আমি ওই পরিবারকে সাপোর্ট করি। এবং তা দীর্ঘদিন থেকে। শিশিরবাবুর সঙ্গে বাবার ৪০ বছরের সম্পর্ক। যেদিন সিপিএম অত্যাচার করত, তখন ওরাই ছিল। আর কেউ তখন পাশে ছিল না।

মহিলাকণ্ঠ : সেদিন ওরা আমাদের সঙ্গে ছিল বলেই ওরা আমাদের হয়ে করত। আমরাই সিপিএমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতাম।

প্রলয়: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ফোন করার জন্য। আপনি এত বড় নেতৃত্ব হওয়া সত্ত্বেও আমার মতো একজন সাধারণ কর্মীকে ফোন করেছেন। এই জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। কিন্তু দিদি, আমাকে ক্ষমা করবেন।

মহিলাকণ্ঠ : তুমি ভেবে দেখো।

প্রলয়: ঠিক আছে দিদি।

মহিলাকণ্ঠ : ও কে। থ্যাঙ্ক ইউ। তুমি ভালো থেকো।

প্রসঙ্গত, প্রলয় বিজেপি-র তমলুক জেলা সংগঠনের সভাপতি এবং নন্দীগ্রাম তাঁর এলাকার মধ্যেই। নন্দীগ্রামের বিরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা প্রলয়ের বাবা চিত্তরঞ্জন পাল এক সময় তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান ছিলেন। প্রলয় ২০১১ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দেন। তাঁর বাবাও ২০১৩ সালে ছেলের পথে হাঁটেন।

আরও পড়ুন: রান্নার গ্যাসে আরও ভর্তুকি কমাচ্ছে কেন্দ্র, হেঁশেলে ও মধ্যবিত্তের পকেটে আগুন

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin
Share on telegram
Share on whatsapp
Share on email
Share on reddit
Share on pinterest