এ ঠিক যেন ‘আজব দেশের আজব কাহিনী’। যেখানে ভোটের ময়দানে নামা প্রতিটি প্রার্থী টিকিটের জন্য কি না করে থাকেন। আর টিকিট পেলে জয়ের জন্য মুখিয়ে পড়েন। কিন্তু এসবের বাইরেও এমন এক প্রার্থীর খোঁজ মিলেছে যিনি নিজে কয়েকশ কোটি টাকার মালিক হয়েও ভোটের ময়দানে লড়াইয়ে নামেন হারবো জেনেও।
কোটিপতি বললেও কম বলা হয়। কিন্তু দামি গাড়ি, নামী ব্র্যান্ডের জামা, জুতো বা বিদেশভ্রমণ— কোনও বিলাসিতাই নেই তাঁর। শখ বলতে শুধু একটাই, আর তা হল ‘হেভিওয়েট’ রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ভোটে নামা। তিনি বিনয়কুমার দাস। নীলবাড়ির লড়াইয়ে উত্তরবঙ্গের করণদিঘির প্রার্থী। বাংলায় ভোটের বাজারে এই মুহূর্তে ‘হটকেক’ তিনি।
বিনয়কুমার দাসের নির্বাচনী হলফনামা থেকে জানা যাচ্ছে, তাঁর সম্পত্তির পরিমান দেখিয়েছেন প্রায় সাড়ে ছশো কোটি টাকারও বেশি। তাছাড়া এ রাজ্যের মালদহ, রায়গঞ্জ, করণদিঘী থেকে ভিন রাজ্যের মধ্যে অসম, উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যেও বাড়ি ও সম্পত্তি রয়েছে বিনয়বাবুর। যার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা। যা শুধু উত্তর দিনাজপুরেই নয়, উত্তরবঙ্গের মধ্যে তিনিই বিত্তশালী প্রার্থী বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলের। আর প্রার্থীপদে বিনয়বাবুর দাঁড়ানো একটা শৌখিনতা।
ভোটযুদ্ধে সরগরম বাংলায় আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন এমসিপিআই এবং সিপিআইএমএল দলের এই প্রার্থী। প্রচারবিমুখ বিনয়বাবুর ভোটে দাড়ানোটা অনেকের কাছেই বিস্ময়ের এবং মজারও বটে। ভোটে জিততে কী না করেন নেতারা। আবার ভোটে লড়ার ইপ্সিত টিকিট না পেলে গোঁসা করে দলত্যাগও আকছার ঘটছে। তবে এই প্রার্থীর কাছে নির্বাচনে জয় পাওয়া কোনও বড় বিষয় নয়, তিনি স্রেফ শখে ভোট লড়েন। সেই শখের বশে তিনি আবার যার তার বিরুদ্ধে প্রার্থী হন না। গনি খান চৌধুরী থেকেপ্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সী, এমনকি গত লোকসভায় দেবশ্রী চৌধুরীর বিপরীতেও নির্দল প্রার্থী হয়েছেন বিনয়বাবু।
আরও পড়ুন: WB election 2021: আজ ফের পথে শাহ, উত্তরবঙ্গ-কলকাতায় ম্যারাথন সভা মমতার
বছর কুড়ি আগে স্ত্রী গত হয়েছেন। তারপর থেকে রায়গঞ্জের কর্নজোড়া কালিবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাড়িতেই থাকেন নিঃসন্তান বিনয় দাস। এলাকায় ভদ্র ও মিশুকে মানুষ বলে পরিচিত বিনয় দাস যে এবারেও প্রার্থী হয়েছেন, সে ব্যাপারে জানেন না তার প্রতিবেশীরাও! আর জানবেই বা কী করে, বিনয় বাবুরই সাফ বক্তব্য, “প্রচার কিসের? ভোটে আমি জিতব এটা অসম্ভব। ভোটে জিততে তো দাঁড়াইনি, এটা আমার শখ। তাই প্রচারেরও কোনও প্রশ্ন আসে না।” শুধু তাইই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো প্রার্থীদের মধ্যে কার জেতা উচিত সে কথাও নিঃশংশয়ে বলে দেন বিনয়বাবু। তাঁর কথায়, “যাঁরা রায়গঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁদের মধ্যে যোগ্যতম প্রার্থী কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্ত।” আবার নিজে কমিউনিস্ট হলেও বিনয়বাবু চান রাজ্যে আবার ক্ষমতায় আসুক তৃণমূল।
তবে এলাকার চায়ের দোকানে যখন তৃণমূল, বিজেপি বা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা চলছে, সে সময়ও নিজের প্রচার না করে মানুষের ভাল-মন্দের চিন্তাই তাঁর কাছে মুখ্য বলে জানান বিনয়বাবু। তাঁর কথায়, “আমি জানি হেরে যাব, তবুও দাঁড়িয়েছি। এটাই আমার বরাবরের শখ।” তাই প্রত্যেকবারই যখন ভোট আসে তখনই আমি দাঁড়িয়ে পড়ি প্রার্থী হিসেবে।” চৈত্রের এই ভোট যুদ্ধের মাঝে বিনয়ের বিনয়াবনত নির্ভেজাল নিরুত্তাপের নির্বাচনী লড়াই স্থানীয়দের কাছে মজার বিষয়।
আরও পড়ুন: ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে ধেয়ে আসছে কালবৈশাখী