একুশের বিধানসভা ভোটে (WB Assembly polls) তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় আশাভঙ্গ হয়েছে অনেকের। বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই এবার আর লড়াইয়ের সুযোগ পাননি। কাউকে আবার নিজের কেন্দ্রের বাইরে অন্য কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করা হয়েছে। শুক্রবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এদিন পূর্ণাঙ্গ তালিকা ঘোষণা করার পরই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়েছে ক্ষোভ, বিক্ষোভ।
টিভি দেখে সাতগাছিয়ার বিধায়ক সোনালি জানতে পারেন, দল তাঁকে টিকিট দেয়নি। শোনামাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়েন সোনালি। প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না দল আমাকে টিকিট দেয়নি! সবকিছু যেন দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। একনিষ্ঠ ভাবে দল করার হয়তো এই পুরস্কারই প্রাপ্য ছিল।’’ কান্নাভেজা গলাতেই তিনি বলেন, ”বহু লড়াই-আন্দোলনে আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছিলাম। এবার আমাকে দল টিকিট দিল না। নারী দিবসের আগে দলের থেকে যোগ্য সম্মান পেলাম।”
টিকিট না পেয়ে ক্ষুব্ধ ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামও (Arabul Islam)। পোলেরহাট এলাকায় নিজের পার্টি অফিসেই তিনি ভাঙচুর করেন। রাস্তার সামনে অবরোধ করেন তাঁর অনুগামীরা। এ নিয়ে বেলার পর থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভাঙড়। নেটমাধ্যমে আরাবুল লেখেন, ‘দলের আজ আমার প্রয়োজন ফুরোল’! প্রসঙ্গত, আরাবুলকে নিয়ে বারবরই দল ভাঙড় এভং লাগোয়া এলাকায় ‘বিড়ম্বনা’য় পড়েছে। তাঁকে একবার সাসপেন্ডও করা হয়েছিল। শোনা যায়, তিনি রাজ্যের এক ওজনদার মন্ত্রীর ‘স্লেহধন্য’ ছিলেন। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। কিন্তু এ বার ভোটের টিকিট বন্টনের সময় প্রথম সুযোগেই আরাবুলকে ছেঁটে ফেলেছেন মমতা।
টিকিট না পেয়ে ক্ষোভ ধরা পড়েছে বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাসের নেটমাধ্যমে। ফেসবুকে ক্ষোভের সুরে তিনি লিখেছেন, ‘দীর্ঘ সাড়ে ছ’বছরের রাজনৈতিক লড়াইয়ে একবার বাদে প্রতিবার ভোটের লড়াইয়ে দলকে জিতিয়েছি। মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি সর্বক্ষণ। আমার ব্যবহারে কেউ দুঃখ পেলে ক্ষমা করবেন’। পরে ফোনে নিজের প্রতিক্রিয়ায় দীপেন্দু বলেন, ‘‘ফুটবল বা ক্রিকেটে পারফরম্যান্সই শেষ কথা। আমি এটাই জেনে এসেছি। আমি তো ফুটবলার। আমার কাছে ভাল খেলাটাই বড় কথা ছিল। এখন রাজনীতিতে এসেছি। সেখানেও পারফরম্যান্সই শেষ কথা বলে জানতাম। আমি সাধ্যমতো মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তা-ও আমাকে প্রার্থী করা হল না কেন? সেটা আমি দলের কাছেই জানতে চাই।’’
আরও পড়ুন: সার্টিফিকেটে মোদীর মুখ, তৃণমূলের আপত্তির জেরে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে জবাব চাইল কমিশন
এবারের বিধানসভা লড়াইয়ে তৃণমূলের (TMC) টিকিট পাননি সিঙ্গুরের বর্তমান বিধায়ক ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যও। তাঁর বদলে এবার সিঙ্গুর থেকে লড়বেন ভূমিপুত্র বেচারাম মান্না। এর জেরে ক্ষুব্ধ রবীন্দ্রনাথের সাফ বক্তব্য, ”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেও সিঙ্গুরে বেচারামের হয়ে প্রচার করব না।” হরিপালে প্রার্থী হয়েছেন বেচারামের স্ত্রী করবী মান্না। টিকিট না পেয়ে রবীন্দ্রনাথ তৃণমূল শীর্ষনেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, ‘‘দুটো আসনেই একই পরিবারের লোককে প্রার্থী করা হল। এর থেকেই বোঝা যায়, তৃণমূল কী ভাবে চলছে!’’
অন্যদিকে, প্রার্থী হতে না পেরে কার্যত বিদ্রোহ করে বিধায়ক পদই ছাড়লেন নলহাটির মইনুদ্দিন শামস। তাঁর দাবি, যাঁকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে, সেই রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংকে চান না অনেকেই। এলাকায় তাঁর কোনও পরিচিতি নেই। ক্ষোভ প্রকাশ করে মইনুদ্দিন জানিয়েছেন, তিনি অন্য দলের হয়ে নলহাটি থেকেই ফের লড়বেন। সম্ভবত সংযুক্ত মোর্চা অর্থাৎ বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের প্রার্থী হতে চলেছেন। যদিও এ বিষয়ে এখনও মুখে কুলুপ মইনুদ্দিন শামসের।
একই ছবি বসিরহাটে। বসিরহাট উত্তর বিধানসভা থেকে এবার তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন রফিকুল ইসলাম। সিপিএম থেকে তৃণমূলে যোগদান করেছিলেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি গত পাঁচ বছর ধরে এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন করে আসছেন এটিএম আব্দুল্লাহ রনি। তিনিই টিকিটের ন্যায্য দাবিদার। তাই আজ প্রার্থী ঘোষণা হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে তৃণমূলের একাংশ। তাঁরা মাটিয়া থানার ধান্যকুড়িয়া নেহালপুর টাকি রোডে দফায় দফায় গাছের গুঁড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু করেন। মাটিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আরও পড়ুন: শালবনিতে সুশান্ত, রানিবাঁধে দেবলীনা, ঝাড়গ্রামে মধুজা…প্রথম ২ দফার ৩৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা বামেদের