বয়ালের ধুন্ধুমার কাণ্ডে দুঘণ্টা আটকে থাকার পর হাসিমুখেই বেরিয়ে পড়লেন মমতা। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েও দিলেন, নন্দীগ্রামে জিতবেন তাঁরা, তা নিয়ে নয় তিনি চিন্তিত গণতন্ত্র রক্ষা নিয়ে। পাশাপাশি বয়ালের ঘটনার দায় দিলেন শুভেন্দু অধিকারী-অমিত শাহের উপর। বললেন, সবটাই হচ্ছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অঙ্গুলিহেলনে।
এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বয়াল বুথ থেকে বেরিয়ে বলেন, “কাল রাত থেকে বিজেপির প্রার্থী অসভ্যতা করছে। গুণ্ডামি করছে। এমনকি নন্দীগ্রাম মামলায় কোর্ট স্থগিতাদেশ দিলেও আবু তাহেরের বাড়িতেও গিয়ে অশান্তি করেছে।” স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে তাঁর বার্তা, “নন্দীগ্রাম নিয়ে চিন্তিত নই আমি, চিন্তি গণতন্ত্র নিয়ে। নন্দীগ্রামে আমি জিতবই। এইখানে ভোট নিয়ে চিটিং হয়েছে।”
দ্বিতীয় দফায় ভোট চলাকালীন ছাপ্পাভোটের অভিযোগ ঘিরে সকাল থেকেই ধুন্ধুমার পরিস্থিতি নন্দীগ্রামের বয়ালে। পরিস্থিতি তদারকি করতে দুপুর সওয়া ১টা নাগাদ রেয়াপাড়ার অস্থায়ী বাড়ি থেকে বয়াল মক্তব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর বুথের উদ্দেশে রওনা দেন মমতা। বয়ালে পৌঁছে হুইলচেয়ারে চেপেই গ্রামের ভিতরে ঢোকেন মমতা। রাস্তায় তাঁকে ছেঁকে ধরেন তৃণমূল সমর্থক এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। অভিযোগ করেন, বুথের দখল নিয়েছে বিজেপি। অবাধে ছাপ্পাভোট করে যাচ্ছে তারা। তৃণমূলের এজেন্টকে পর্যন্ত ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাদের রুখতে কেন্দ্রীয় বাহিনী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এর পরই সোজা ওই বুথে পৌঁছে যান মমতা। সেখানে তিনি পৌঁছতেই উত্তেজনা চরমে ওঠে। মমতাকে দেখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। তাতে তেড়ে যান তৃণমূল সমর্থকরাও। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। পরস্পরকে লক্ষ্য করে শুরু হয় এলোপাথাড়ি ইটবৃষ্টিও। পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে আসে রাজ্য পুলিশ এবং র্যাফ। দুই শিবিরকে আলাদা করে দেয় তারা। কিন্তু বুথের বাইরের পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায়, বুথের ভিতরই আটকে পড়েন মমতা। তাঁকে অন্য রাস্তা দিয়ে বার করিয়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু হয় কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন না থাকায় তা হয়ে ওঠেনি। বাধ্য হয়ে পুলিশের তরফে মানবশৃঙ্খল গড়ে বিক্ষোভকারীদের আটকানোর চেষ্টা করা হয়।
আরও পড়ুন: ‘সরকার চালাব আমি আর দিলীপ ঘোষ’, গাছে না উঠতেই এক কাঁদি শুভেন্দুর
এর পরেই বুথে বসেই সংবাদমাধ্যমে মমতা অভিযোগ করেন, বয়ালের ওই বুথে ৮০ শতাংশ ছাপ্পাভোট হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উস্কানিতে বহিরাগতদের এনে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা চলছে। মমতা বলেন, ‘‘বিহার ও উত্তরপ্রদেশের গুন্ডারা এসে ঝামেলা পাকাচ্ছে। যারা ঝামেলা করছে, এক জনও বাংলা জানে না। সব হিন্দি বলছে।’’
একই সঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘আদালতে যাব আমরা। কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। ৬৩টা অভিযোগ পেয়েছি।’ এই সময়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন নন্দীগ্রামের দায়িত্বে থাকা আইপিএস অফিসার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী। প্রায় পনেরো মিনিট কথা বলেন তাঁরা।মমতা প্রশ্ন তোলেন, বুথের ২০০ মিটারের মধ্যে এত লোক কেন?
মমতা নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীকে বলেন, “আগে এখান থেকে লোক সরাও। তারপর আমি এই জায়গা ছাড়ব। তোমাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাহলে এই অবস্থা কেন?” নগেন্দ্র ত্রিপাঠী উত্তরে বলেন, “আমি নিশ্চিত করছি আর কোনও অশান্তি হবে না।” এই সময়ে জেলা পুলিশ সুপার সুনীল যাদবও চলে আসেন আসেন। মমতা তাঁকেও প্রশ্ন করেন, “সকাল থেকে এই কেন্দ্র থেকে একাধিক অভিযোগ করা হলেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?”নগেন ত্রিপাঠী কথাবার্তার মধ্যেই উর্দি দেখিয়ে বলেন, “ম্যাডাম উর্দি ধরে বলছি আর এমন অশান্তি হবে না।”
মমতা প্রশ্ন করেন, কে বা কারা এখানে ছাপ্পা ভোট করল? নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী বলেন, “আমি দায় নিচ্ছি, এর পর ভোট দিতে আর অসুবিধে হবে না।” এই সময়ে মমতার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইপিএস জ্ঞানবন্ত সিং বলেন, “আমরা ম্যাডামের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবো। শুধু নিজের নয়, এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হতেই বুথ ছাড়েন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে সমর্থকদের লক্ষ্য করে হাত নাড়তেও দেখা যায়।
সেই সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছিলেন নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকরাও। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন মমতা। তৃণমূলের এজেন্টকে বসতে দেওয়া হয়নি, ভোটদানে বাধা দিতে হওয়া হয়েছে বলে নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন। কিন্তু এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে এক জন মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ধুন্ধুমার চললেও, কেন্দ্রীয় বাহিনীর এসে পৌঁছতে এত সময় লাগল কেন, প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল।